‘‘আমি উনাকে মায়ের মতো দেখেছি ছোটবেলা থেকে। উনার সাথে আমার কোনো সময় কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না, এখনও দ্বন্দ্ব নাই,” রওশন এরশাদ প্রসঙ্গে বলেন তিনি।
Published : 24 Aug 2023, 02:19 AM
ভারত সফরে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, প্রতিবেশী দেশটি বাংলাদেশ ভালো নির্বাচন দেখতে চায়। তবে দলগুলোর মতপার্থক্য নিয়ে তাদের মন্তব্য নেই।
তিন দিনের সফর শেষে বুধবার দেশে ফিরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
বিরোধীদলীয় নেতা এবং দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়ে জি এম কাদেরের দাবি তাদের মধ্যেকার সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তাদের বিরুদ্ধে কিছু লোক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।
এর নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, “উনাকে দিয়ে যারা করানোর চেষ্টা করেছে আমি মনে করি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
গত রোববার তিন দিনের সফরে নয়া দিল্লি যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাদের। তার সঙ্গে ছিলেন সাংসদ শেরিফা কাদের ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মশরুর মাওলা।
বিমানবন্দরে ভারত সফর নিয়ে আরেক প্রশ্নে জিএম কাদের বলেন, ‘‘এই সফরে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তাদের সঙ্গে খুব বেশি আলাপ হয়নি।”
‘ভারত চায় সুন্দর নির্বাচন’
ভারত সরকারের আমন্ত্রণে এ সফরে বেশ কয়েকজন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তির সঙ্গে ‘খোলামেলা’ আলোচনার কথা বললেও তাদের পরিচয় এবং বিষয়বস্তু নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
“তারা যদি প্রকাশ করতে চান, করবেন। কিন্তু তাদের অনুমতি ছাড়া আমি কিছু বলতে পারব না,” বলেন তিনি।
সংসদে বিরোধীদলের এই উপ নেতা বলেন, ‘‘বাংলাদেশে একটি ভালো নির্বাচন দেখতে চায় ভারত। তবে এ নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্যের বিষয়ে কিছু বলতে চায় না তারা।
‘‘ভারত বলেছে, এটা আপনাদের নিজস্ব ব্যাপার। আমরা চাই আপনারা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এটার সুরাহা করবেন।”
এমজি কাদের বলেন, ‘‘বাংলাদেশে সময়মতো একটি সুন্দর নির্বাচন চায় ভারত। তারা চায় নির্বাচনের আগে এবং পরে বাংলাদেশে যাতে কোনো ক্রমেই সহিংসতা, অরাজকতা না হয় বা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় অনিশ্চিত কিছু না হয়। এটা হলে ওনারা খুশি হবেন। কারণ এখানে ওনাদের অনেক ধরনের বিনিয়োগ আছে।”
স্থিতিশীল বাংলাদেশের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে ভারত বলেছে, এতে তাদের পক্ষে কাজকর্ম করা সহজ হবে।
“নির্বাচনের আগে এবং পরে দেশে কোনো সহিংসতা, অরাজকতা না হয়, স্থিতিশীলতা কোনো ক্রমেই যাতে নষ্ট না হয়।”
‘জাতীয় পার্টি নিয়ে ধারণা ভালো’
নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ও আলোচনা ছিল জানিয়ে দলের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আমার একটা জিনিস ভালো লেগেছে যে, জাতীয় পার্টি সম্পর্কে তাদের ধারণা ভালো। জাতীয় পার্টিকে তারা সম্ভাবনাময় দল মনে করে।
‘‘তারা এটাও প্রত্যাশা করেছেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে ভারতের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আগেও ছিল এবং সামনেও থাকবে বলে তারা আশা করেন।”
‘নির্বাচন বজর্নের কথা কখনও বলিনি’
এদিকে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশ নেওয়া বিষয়ক এক প্রশ্নে জিএম কাদের বলেন, ‘‘এটা আমি অনেকবার বলেছি, আমাদের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনও সময় আসেনি। আমরা কী করব? সামনে কারও দিকে যাব কি না…এটা পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে।
‘‘আমরা আরও কিছুদিন জিনিসটা দেখেশুনে তারপর আমরা ঠিক করব। আর নির্বাচন আমরা বর্জন করব- এটা কিন্তু আমরা কোনোদিন বলিনি। নির্বাচনে আসব কি আসব না এটা আমাদের নেতাকর্মী সকলের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা নেব। তবে আমরা চাইব নির্বাচনটা যাতে ভালো হয়।”
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া ভারতের বার্তার খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে জাপাপ্রধান সরাসরি কোনো জবাব দেননি।
তিনি বলেন, ‘‘এটা ভারতীয়রা, আমেরিকানরা বলতে পারবে। ওনাদের মধ্যে কী আলাপ-আলোচনা হয়েছে, আউটসাইডার হিসেবে এটা তো আমরা পক্ষে জানাও সম্ভব না।”
‘ছোটবেলা থেকেই উনি মায়ের মতো’
মঙ্গলবার নিজেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করে রওশন এরশাদের নামে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়; পরে সেটির সত্যতা নাকচ করেন তার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে রওশন নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করে জিএম কাদেরকে অব্যাহতির কথা বলেন।
বিমানবন্দরে এ বিষয়ে কাদের বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, উনি (রওশন এরশাদ) এটা করেননি, উনাকে দিয়ে যারা করানোর চেষ্টা করেছে। আমি মনে করি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
দল নিয়ে রওশনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়ে কাদের বলেন, ‘‘আমি উনাকে মায়ের মতো দেখেছি ছোটবেলা থেকে। উনার সাথে আমার কোনো সময় কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না, এখনও দ্বন্দ্ব নাই। কিন্তু কিছু মানুষ আমাদের বিরুদ্ধে কিছু লোক এই বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছেন।“