গোয়েন্দা সংস্থাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী এখন পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজনে বড় ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।
Published : 30 Oct 2023, 03:11 PM
আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতির মধ্যে আইন শৃঙ্খলা ও সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে সার্বিক পরিস্থিতি জেনে নিল নির্বাচন কমিশন।
সরকার বিরোধীদের বর্জনের হুমকি ও আন্দোলনের মধ্যে তফসিল ঘোষণার অপেক্ষায় থাকাকালে সোমবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এই আইন শৃঙ্খলা সভা হল।
সকাল ১১ টা থেকে আড়াই ঘণ্টার এই সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র্যাব ছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ভিডিপি এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তি ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, কোন পদ্ধতিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে, নির্বাচনে সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয় ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়গুলো সভায় আলোচনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের তথ্য উপস্থাপন করেছে, বিভিন্ন বাহিনী প্রধান তাদের সক্ষমতা কী আছে, অতীতে তাদের জনবলকে কীভাবে কেন্দ্রে ও অন্য কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে; দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কীভাবে দায়িত্ব পালন করতে তা তুলে ধরা হয়েছে।“
ভোটের আগে আগে এ ধরনের আরও অনেক সভা হবে বলেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ভোটের পরিবেশ ‘সন্তোষজনক’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিরোধী দল ২০১৩ সালের মতোই হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচিতে ফিরে যাওয়া, সংঘর্ষ ও গণপরিবহনে আগুনের ঘটনাগুলো ফিরে আসলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মত দিয়েছে, ভোটের পরিবেশ ‘এখন পর্যন্ত ভালো।’
নির্বাচন কমিশন সচিব আলোচনার বিষয় তুলে ধরে বলেন, “হরতালের পর একটি বড় রাজনৈতিক দল হরতাল শেষে সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছে।.. আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদন মতে এখন পর্যন্ত কমিশনের কাছে মনে হয়েছে এখন পর্যন্ত পরিবেশ সন্তোষজনক রয়েছে।”
তিনি বলেন, “গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের যে প্রতিবেদন- এখন পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজনে বড় ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। যেহেতু গতকাল হরতালের পর তিন দিনের অবরোধ দিয়েছে বিএনপি, সে বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছে যাতে আইন শৃঙ্খলার কোনো অবনতি না ঘটে।”
কী বলল নির্বাচন কমিশন
এ প্রশ্নে জাহাংগীর আলম বলেন, “কমিশনাররা বক্তব্য শুনেছেন এবং কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এ আলোকে পরবর্তীতে পরিপত্র জারি, কেন্দ্রে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী কীভাবে মোতায়েন করা হবে, পরবর্তীতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “নির্বাচনের যেসব ধাপ রয়েছে, ভোটের তফসিল ঘোষণা থেকে প্রতীক বরাদ্দ, তফসিলের আগে-পরে, ভোটের তারিখ… ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার কবে পাঠানো হবে সকালে নাকি আগের রাতে তা নিয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হবে।”
এখনও অনেক সময় রয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, “মিটিং হবে, পরিপত্র জারি হবে, ওই সময়ের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে কমিশন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।”
সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট হতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশন জানুয়ারির শুরুতে ভোটের আয়োজন করতে চায়। নভেম্বরের প্রথমার্ধের যে কোনো সময় তফসিল ঘোষণা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
বৈঠকে যারা ছিলেন
সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ছাড়াও ছিলেন চার কমিশনার আহসান হাবিব খান, মো. আলমগীর, আনিছুর রহমান ও রাশিদা সুলতানা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হয়ে আসেন জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে ছিলেন মহাপুলিশ পরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন ও আনসার ও ভিডিপির মহপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক।
নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের (পিএসও) প্রতিনিধি, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মহপারিচালকের প্রতিনিধিরা এবং বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান।
গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর(এনএসআই)-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল টিএম জোবায়ের এবং ডিজিএফআইয়ের প্রতিনিধি।