Published : 09 Feb 2023, 10:03 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন ছাড়া আর কোনোভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের সুযোগ নেই।
বৃহস্পতিবার চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে একথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “অনির্বাচিত সরকারের স্বপ্ন যারা দেখছেন, সেই দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসবেন দয়া করে। এটা আর জীবনে হবে না।
“আর ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা যাদের, আসেন নির্বাচন করেন। জনগণ যাকে মেনে নেবে, সেই ক্ষমতায় যাবে। এখানে আওয়ামী লীগ কোনোদিন হস্তক্ষেপ করবে না। করে না।”
গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আর টানা ১৪ বছর সরকারে আছে বলে দেশে উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “এদেশের কিছু লোক বিদেশে গিয়ে নালিশ করে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। এদেশের নাকি কিছুই হচ্ছে না। আজকের পরিবর্তন তাদের চোখে পড়ে না।
“এখন তারা আনতে চায় অনির্বাচিত সরকার। আমরা দেখেছি অনির্বাচিত সরকার এলে ব্যবসা বাণিজ্য, উন্নয়ন ধ্বংস, উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, ভয়ঙ্কর অবস্থা হয়েছিল। সারা দেশের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে থেকেছে।”
“আবার কি এ দেশের মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে নিয়ে যেতে চায়? আবার কি এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায়?” প্রশ্ন রাথেন তিনি।
অনির্বাচিত সরকার ব্যক্তি স্বার্থকে বড় করে দেখে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “এদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সাবধান থাকতে হবে। সজাগ থাকতে হবে। এরা কোথা থেকে কী পয়সা পাবে, সে লোভে অন্যের কাছ থেকে পয়সা খেয়ে আমার দেশে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়।
“আমার দেশের মানুষের উপর বিশ্বাস আছে, আস্থা আছে। বাংলাদশের মানুষ আজকে যে জীবনে একটা স্থিতিশীলতা পেয়েছে, নিশ্চয় তারা তা ধ্বংস হতে দেবে না। এটা হালে পানি পাবে না।”
শেখ হাসিনা বলেন, “কিছু কিছু লোক বলে আসছে, দুই-তিন বছর অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকলে ক্ষতিটা কী, মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। এটা কোন ধরনের কথা?
“যারা বলে অনির্বাচিত সরকার আসলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না,তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- মহাভারত হয়ত তাদের কাছে অশুদ্ধ হবে না। কিন্তু আমাদের সংবিধান? যে সংবিধান জনগণের অধিকার সুরক্ষিত করেছে। সেই সংবিধানকে বাদ দিয়ে অনির্বাচিত সরকার যারা আনতে চায় তারা কী স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে? তারা কি গণতন্ত্র, জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করে? ”
তিনি বলেন, “জনগণ পেট ভরে খেতে পারলে তাদের দুঃখটা কেন? হয়ত দুঃখ আছে। কারণ এই দেশের মানুষগুলো দরিদ্র থাকবে, কংকালসার থাকবে, হাড্ডিসার থাকবে। আর তাদের দেখে দেখে বিদেশ ভিক্ষা নিয়ে নিজেদের উদোর পূর্তি করবে, কেউ বিএমডব্লিউতে চড়বে। সেই জন্য তারা অনির্বাচিত সরকার চাই।
“অনেকই দাবি করেন আজকের যে উন্নয়নটা, সেটা নাকি কোন কোন বড় বড় এনজিও থেকে শুরু করে অনেক অর্থনীতিবিদ বা আঁতেল দাবি করে, তাদের কারণেই হয়েছে। এটা ঠিক নয়। একমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং তার সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, যথাযথ নীতিমালা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের ফলেই কিন্তু সম্ভব হয়েছে।”
ক্ষমতা যেতে চাইলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “অনির্বাচিত সরকারের নামে যাদের ক্ষমতায় আসার ইচ্ছা, তাদেরকে বলব রাজনীতি করেন, মানুষের কাছে যান; জনগণের ভোট নেন, নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেন। কোনো আপত্তি নাই। মানুষ যাকে ভোট দেবে তারাই সরকারে আসবে-এটাই বাস্তবতা।
“নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়, তা তো আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি। ছয়টি উপ-নির্বাচন হল। আমার প্রশ্ন, এই নির্বাচন সম্পর্কে তো কেউ একটা কথাও বলতে পারে নাই। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে; নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করার সক্ষমতা রাখে। সেখানে সরকার কোনো রকম হস্তক্ষেপ করেও নাই, করবেও না।”
‘অরাজকতা করলে ব্যবস্থা’
আন্দোলনে কোনো বাধা না দিলেও অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করলে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “কোনো কোনো দল আন্দোলন করছে, জোট করছে, মিছিল মিটিং করছে। বাধা দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের মাঝে গণতান্ত্রিক সহনশীলতা আছে, আমরা তা দেখাচ্ছি। মিছিল মিটিং যাই করতে চায়, আমরা করতে দিচ্ছি।
“তবে জনগণের জানমাল রক্ষা করা, জনগনের নিরাপত্তা দেওয়া এটা আমরা আমাদের কর্তব্য মনে করি। কাজেই যেখানে যারা অগ্নিসন্ত্রাসীরা যখনই মিছিল মিটিং করতে যায়, তখনই আমরা আতঙ্কে থাকি যে কখন কোন গাড়িতে আগুন দেবে, বাসে আগুন দেবে, নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারবে। সেটা যাতে মারতে না পারে, সেজন্য আমাদের দল, দেশবাসী সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।”
কোনো রকম অরাজকতা, অগ্নি সন্ত্রাস, ভাংচুর, কোনো ধরনের জঙ্গিবাদী কাজ করতে গেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার অপরাধ দমনে আড়ি পাতার নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও তা আইনসিদ্ধভাবেই করছে।
“ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি এটা ঠিক। এরমধ্য দিয়ে আবার দেখা যায় বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে কীভাবে বোমা বানাবে, জঙ্গিবাদ করবে, সেগুলো দেখায়। এগুলো যদি আড়ি না পাতা যায়, আমরা জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস দমন করব কীভাবে? তাদের এ সমস্ত তথ্য আমরা পাব কীভাবে? কাজেই আমাদের তো এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। আড়িপাতা নিয়েও অনেকে কথা বলেন। কারণটা কী? ঠিক কোন রহস্যের কথা বলবেন, যেটা সরকার শুনে ফেললে সমস্যা হবে? সরকার শোনে না।
“এটা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায় জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস এধরনের কর্মকাণ্ড সেগুলো রোধ করার জন্য যেটুকু করার সেটুকুই করে। তার বেশি আর কিছু করে না। আর এটা আইনসিদ্ধ। এটা করা যায় বলেই এটা সব দেশে আছে।”
রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ে আশ্বাস
রোজার আগে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজানে খাদ্যের অভাব নেই। প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ে সমস্যা নেই।
“এলসি খুলতেও বাধা নেই। যারা এলসি নিয়ে দুই নাম্বারি করে, বাধা তাদের জন্য। যারা যথাযথ ব্যবসা করে, তাদের কোনো বাধা নেই। রমজানে ছোলা চিনি খেজুর ডাল তেল পর্যাপ্ত আছে। আরও কেনা হচ্ছে।”
সরকারের কাছে ১৯ লাখ টন খাদ্য মজুদ আছে বলেও জানান তিনি।