নতুন দল বিএসপির নিবন্ধন নিয়ে চেয়ারম্যানের ছোট ভাইয়ের আপত্তি

দলটি যে কার্যালয়গুলো দেখিয়েছে সেগুলো পারিবারিক সম্পত্তি বলে জানানো হয়েছে আপত্তিতে।

নির্বাচন ভবনে সৈয়দ সহিদ উদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচকে সামনে রেখে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচিত দুটি দলের মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি- বিএসপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন দলটির চেয়ারম্যানের ছোট ভাই শাহজাদা সৈয়দ সহিদ উদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী।

তিনি অভিযোগ করেছেন, বিএসপির কার্যালয় হিসেবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, কুমিল্লাসহ অন্যান্য জেলায় যে স্থানগুলো দেখানো হয়েছে, সেগুলো তাদের পারিবারিক সম্পত্তি।

তবে বিএসপি চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী দাবি করেছেন, তাদের নিবন্ধন আটকানোর উদ্দেশ্যে এই কাজটি করেছেন তার ছোট ভাই সহিদ উদ্দিন মাইজভান্ডারী।

বিএসপি ছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) নামে আরও একটি দলকে নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করার কথা রোববার জানায় নির্বাচন কমিশন।

দল দুটির বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি থাকলে সেটি জমা দিতে ১০ দিন সময় দিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। সে হিসাবে আপত্তির আবেদনের সময় রয়েছে ২৬ জুলাই পর্যন্ত।

এসব আপত্তির বিষয়ে তদন্ত এবং দুই পক্ষের শুনানি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইসি।

সহিদ উদ্দিন মাইজভান্ডারী তাদের পারিবারিক সম্পত্তিকে বিএসপির কার্যালয় দেখানোর অভিযোগ তুলে ধরে ইসিতে সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশের সব জায়গায় আমাদের খানকা শরিফ আছে। সেগুলোই তিনি (বিএসপি চেয়ারম্যান) কার্যালয় হিসেবে দেখিয়েছেন। নিবন্ধনের নাম করে পারিবারিক সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা চলছে।”

তিনি জানান, তারা দুই ভাই ও দুই বোন। উত্তরাধিকারের সম্পত্তি নিয়ে মামলা চলছে।

তিনি বলেন, “বড় হিসেবে উনি (সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারী) আমার এবং ছোট দুই বোনের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার কু মানসে উনার কার্যালয় আমাদের পারিবারিক সম্পত্তির উপর বসিয়েছেন।”

সহিদ উদ্দিনের এই অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন রাখলে বিএসপির দপ্তর সম্পাদক মো. ইব্রাহিম মিয়া বলেন, “নির্বাচন কমিশনে দেওয়া এ অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যিনি অভিযোগ করেছেন তিনি একটি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই আমাদের নিবন্ধন ঠেকাতে অপচেষ্টা করেছেন।”

ছোট ভাই সহিদ উদ্দিন ইসলামী ফ্রন্টে যুক্ত দাবি করে বিএসপি চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ছোট ভাই বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সাথে সম্পৃক্ত। আমরা নিবন্ধন পেলে তারা অস্তিত্ব সংকটে পড়বে, এজন্য আমাদের বিরোধিতা করছে।”

সম্পত্তির জটিলতা নিয়ে তিনি বলেন, “জায়গা-জমির ঝামেলা সব জায়গায়ই থাকে।”

ইসির নিবন্ধিত দল ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সহিদ উদ্দিন তার দলের কোনো পর্যায়ে কোনো পদে নেই।

তিনি বলেন, “তবে মাইজভান্ডারির আওলাদ হিসেবে আমাদের এখানে উনার আসা-যাওয়া রয়েছে। তিনি আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী, উনার বড় ভাইও আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী।”

নির্বাচন কমিশন শুনানিতে ডাকলে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত উপস্থাপনের কথা জানিয়ে বিএসপির দপ্তর সম্পাদক ইব্রাহিম মিয়া বলেন, “আশা করি, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ টিকবে না, নিবন্ধন চূড়ান্ত হবে।”

বিএসপি নামে আরও দুই দল

নিবন্ধন পেতে আবেদন করা বাংলাদেশ সনাতন পার্টিও সংক্ষেপে নিজেদের বিএসপি বলে।

দলটির সভাপতি সুশান্ত চন্দ্র বর্মন (শান্ত) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নিবন্ধনের বিষয়ে পুনঃতদন্ত ও পুনর্বিবেচনা করতে বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দিয়েছেন তারা।

নিবন্ধন না পাওয়া ১০ দলের ব্যানারে যে সংবাদ সম্মেলন সম্প্রতি হয়েছে, সেখানে তারা ছিলেন না দাবি করে সুশান্ত বলেন, তাদের অনুমতি না নিয়েই সনাতন পার্টির (বিএসপি) নাম ব্যবহার করা হয়েছে

বাংলাদেশ শ্রমজীবী পার্টিও সংক্ষেপে তাদের নাম বিএসপি বলে উল্লেখ করে। তারাও নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছিল।

মঙ্গলবার দলটির সভাপতি মো. আব্দুল কাদের জিলানী সাংবাদিকদের জানান, ২০১৭ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এই দলের সংক্ষিপ্ত নাম বিএসপি।

নাম নিয়ে আপত্তি জানিয়ে শ্রমজীবী পার্টি ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছে ইসিতে; সনাতন পার্টি রোববার আবেদন করবে বলে জানিয়েছে।

নিবন্ধনের জন্য নির্বাচিত হওয়া দুই দল

• বাংলাদেশ সুপ্রিম পটি, প্রতীক-একতারা, চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মো. সরকার, ঠিকানা ৮২ শাহ্ আলীবাগ (চতুর্থ তলা), মিরপুর-১, ঢাকা-১২১৬।

• বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন- বিএনএম, প্রতীক- নোঙর, আহ্বায়ক- আব্দুর রহমান এবং সদস্য সচিব মুহা. হানিফ (অবসরপ্রাপ্ত), বাড়ি এইচ-২৩ শহীদ বীরউত্তম জিয়াউর রহমান সড়ক/নিউ এয়ারপোর্ট রোড, মহাখালী, বনানী, ঢাকা- ১২১২।

কী করবে নির্বাচন কমিশন

জমা পড়া এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “এখনও চূড়ান্তভাবে কাউকে নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। যেসব অভিযোগ আসছে বা আরও আসবে, সেগুলো আমরা শুনানি করব।

“অভিযোগ দেওয়ার জন্য ২৬ জুলাই পর্যন্ত সময় আছে। শুনানিতে যদি দেখা যায় শর্ত পূরণ করেনি বা অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তো নিবন্ধন পাবে না।”

বিএসপির বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখল করে অফিস করার অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “বিষয়টি দেওয়ানি আদালতের বিষয়। সেটা তারা দেখবেন। ইসির আইন অনুযায়ী নিজস্ব বা ভাড়া অফিস হলেও চলবে। যে অভিযোগ আছে, আরও যদি অভিযোগ আসে, সে অভিযোগ আবার তদন্ত করা হবে। দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

এবার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা বেশ কয়েকটি সক্রিয় রাজনৈতিক দল বাদ পড়ে গেলেও বিএসপি আর বিএনএম এর মতো অচেনা দল কীভাবে নিবন্ধন পায়- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “নিবন্ধনের শর্ত হচ্ছে কেন্দ্রীয় অফিস, ২২ জেলা অফিস ও ১০০টি উপজেলা অফিস থাকতে হবে। এই শর্ত যারা পূরণ করেছে তারাই বাছাইয়ে টিকেছে।”