“আমরা শুধু চাই- আমার ভোট আমি দেব এবং তা নির্বিঘ্নে দেব,” বলেন অলি।
Published : 12 May 2023, 08:28 PM
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্যে তিন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় যে মামলা হয়েছে, তাতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নাম আসায় ‘ষড়যন্ত্র’ দেখতে পাচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রম।
এলডিপি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, “নির্বাচনের আগে মানুষের দৃষ্টি অন্যত্র সরানোর জন্য এটি (মামলা) করানো হচ্ছে, মানুষের দৃষ্টি অন্যত্র সরানোর জন্য একটা সুদূর পরিকল্পনা শুরু করেছে। আমরা তাদেরকে বলব, মিথ্যার আশ্রয় নিয়েন না।”
শুক্রবার বিকালে তেজগাঁওয়ে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘জরুরি সংবাদ সম্মেলনে’ তিনি এ অভিযোগ করেন।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মেজর জেনারেল খালেদা মোশাররফ বীর উত্তম, কর্নেল নাজমুল হুদা বীর বিক্রম ও লেফটেন্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর উত্তমকে হত্যার ঘটনার ৪৮ বছর পর বুধবার ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি হয়।
কর্নেল নাজমুল হুদার মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান মামলায় বলেছেন, সেই সময়ের সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান এবং জাসদ নেতা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরের নির্দেশে ২০-২৫ জন সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকের একটি দল নাজমুল হুদাসহ তিন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে।
অলি আহমদ বলেন, “এতদিন পরে নির্বাচনকে সামনে রেখে উনি (নাহিদ ইজাহার খান) যে মামলাটা করেছেন, তাকে বলব- মা এই কাজটা ভালো করেন নাই। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কোনো অবস্থাতেই এটার সাথে জড়িত ছিলেন না।”
একসময়ের বিএনপি নেতা অলি প্রশ্ন রেখে বলেন, “এতোদিন মামলা হল না, ৪৮ বছর পর হঠাৎ ঘুম ভাঙলো… এটা (মামলা) করতে হবে। এখানে আমারই প্রশ্ন জাগে, নাজমুল হুদা সাহেবের স্ত্রী তো অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন না। তিনি ওইসময়ে এই মামলা করতে পারতেন।
“আওয়ামী লীগ তো ক্ষমতায় ছিল ’৯৬ সালে, এরশাদের সময়ে মামলায় করতে পারতেন, তখন তিনি কিছু করলেন না। এখন নির্বাচনের আগে এসে এই ধরনের ধোঁয়াশা তুলে জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য এসব করছেন।”
সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে ১৯৭৮ সালে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের গড়ে তোলা বিএনপিতে যোগ দেন অলি আহমেদ। দুই দফায় তিনি খালেদা জিয়ার সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠন নিয়ে মতবিরোধের পর ২০০৬ সালে বিএনপি ছাড়েন অলি আহমদ। সেবছরই তিনি আরেক সাবেক বিএনপি নেতা এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে মিলে এলডিপি গঠন করেন।
অলি আহমদ বলেন, “আমি আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে শহীদ নাজমুল হুদার মেয়ের প্রতি আবেদন করতে চাই এবং জাতিকে জানাতে চাই, জিয়াউর রহমান সাহেব ওই সময়ে বন্দি ছিলেন। কোনো অবস্থাতে তিনি ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য নির্দেশদাতাও নন এবং পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে এর সাথে যুক্ত নন।”
এলডিপি প্রেসিডেন্ট বলেন, “জাতি এতে বিভ্রান্ত হবে না, জাতি একটা লক্ষ্য স্থির করেছে। এই লক্ষ্য হল আমাদেরকে চিরদিনের জন্য বর্তমান অসহনীয় অবস্থা থেকে মুক্তি লাভ করতে হবে, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে, সকল অত্যাচার-নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, মানুষের ন্যূনতম অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আশা করব, আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা যতদূর পারেন, আইনের মধ্যে থেকে জনগণকে সজাগ করেন।”
অবাধ ভোটের নিশ্চয়তা চেয়ে তিনি বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে না, আওয়ামী লীগেরও বিরুদ্ধে না, কোনো দলের বিরুদ্ধে না। আমরা শুধু চাই- আমার ভোট আমি দেব এবং তা নির্বিঘ্নে দেব। কোনো অস্ত্রধারী ভোট কেন্দ্রে থাকবে না, কেউ রাত্রে বেলা আমার ভোট কেড়ে নেবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য নেয়ামূল বশির, আওরঙ্গজেব বেলাল, এম মোরশেদ, সাকলাইন, উপদেষ্টা মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব বিল্লাহ হোসেন মিয়াজি, আইন সম্পাদক আবুল হাশেম অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।