খালেদার মুক্তির মেয়াদ আবার বাড়াতে পরিবারের আবেদন

সবশেষ গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়, যা শেষ হওয়ার কথা আগামী ২৪ মার্চ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2023, 08:56 AM
Updated : 9 March 2023, 08:56 AM

দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ১৭ বছরের সাজা সপ্তমবারের মত স্থগিতের আবেদন করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে।

ভাই সাঈদ ইস্কান্দরের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে তার কাছে এখনও সেটি পৌঁছেনি।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি জানতে পেরেছি যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেগম খালেদা জিয়ার ভাই একটি আবেদন করেছেন; তার শর্তযুক্ত মুক্তির মেয়াদ আরও বাড়ানোর জন্য। সেই ফাইলটা আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এসেছে।

“তবে আমার কাছে এখনও আসে নাই। আমাদের মতামত দেওয়ার পরেই এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।”

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে যান বেগম খালেদা জিয়া। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এই রায়ের পরের দিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল শুনানি এখনও শুরু হয়নি।

রাজপথে কর্মসূচি এবং উচ্চ আদালতে আইনি লড়াইয়ে বিএনপি তাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হলে ২০২০ সালের শুরুতে তার পরিবার আবেদন করেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার কাছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে দণ্ড স্থগিত করেন ছয় মাসের জন্য।

ওই বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয় আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি থাকা বেগম খালেদা জিয়া ২৫ তারিখে তার বাসভবন ফিরোজায় ফেরেন।

মুক্তির মেয়াদ ছিল ছয় মাস। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বিএনপি নেত্রীর পরিবার নতুন করে আবেদন করেন এবং আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে মুক্তির মেয়াদ। এভাবে সবশেষ গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ দফা মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়, যা শেষ হওয়ার কথা আগামী ২৪ মার্চ।

বিদেশে যেতে দেয়ার খবর ‘সর্বৈব অসত্য’

বিএনপি নেত্রীর দণ্ড স্থগিত করার সময় দুটি শর্তের কথা বলা হয়। ১. তিনি চিকিৎসা নেবেন ঢাকার বাড়িতে থেকে, ২. তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।

তবে কোভিড এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্ত বিএনপি নেত্রীকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধা দেওয়া হয়নি। তবে পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চাইলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়।

খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে বিদেশে নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করার কথা জানিয়ে কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে টিকার প্রচার হয় এদিন। সেই প্রসঙ্গ ধরে আইনমন্ত্রী ওই তথ্যকে ‘সর্বৈব অসত্য’ বলেন।

খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার চিন্তা সরকারের আছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমার কাছে আবেদনটি আসে নাই এখনও; আসলে পরে নিষ্পত্তি করব।

“আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে ফাইলটা পাঠানো হয়েছে। যখন আমার কাছে আসবে, যখন নিষ্পত্তি করব, তখন অবশ্যই আপনাদের জানাব।”

খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদেরকে জানানো হয়েছে, এবারের আবেদনে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি ও জামিন চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে আনিসুল বলেন, “আমি আবারও বলছি যে, জামিন দেওয়ার এখতিয়ার কিন্তু আদালতের, সরকারের না।”

সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হলে শর্ত কী হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যে শর্ত আছে, সেই শর্তই থাকবে। এটাই আমার বিশ্বাস।”

মতামত কবে পাঠানো হবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমার কাছে আসুক, তারপর পাঠাব।”

দণ্ডিত বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার অধিকার নিয়ে এক প্রশ্নে বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমি যেটা বলেছিলাম, আইনের বইতে কী আছে, আপনারা সেটা দেখে নেন। তাহলে আপনারা বুঝতে পারবেন, কে ঠিক, কে বেঠিক।”