“যখন কোনো নেতা কার্যালয়ের ভেতরে তাজা ককটেল নিয়ে বসে থাকে, তখন সেই নেতাদের বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হয়,” বলেন তিনি।
Published : 08 Dec 2022, 08:32 PM
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা ‘কোনোভাবেই’ মার্কিন সরকারের বিবৃতি নয় বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, “মার্কিন সরকার কোনো বিবৃতি দেয়নি। সেখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বিএনপি ঘরানার একজন সাংবাদিক- যিনি আগে খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ে কাজ করতেন, তিনিই সেখানে প্রশ্ন করেছেন এবং সেই প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে।
“এটি কোনোভাবেই মার্কিন সরকারের কোনো বিবৃতি নয়।”
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এমন মন্তব্য করেন্
বিএনপি পরিকল্পিতভাবে বুধবারের ঘটনা ঘটিয়েছে দাবি করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সমাবেশের জন্য উপযুক্ত মাঠের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে তারা নয়া পল্টনের সামনে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বুধবারের ঘটনা ঘটিয়েছে এবং সমস্ত ঘটনার জন্য বিএনপি এবং বিএনপির নেতারাই দায়ী।”
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নে মঙ্গলবার ওই দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছিলেন, “বাংলাদেশে বলপ্রয়োগ ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। মতপ্রকাশ, সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণ সমাগমের মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান ও তা রক্ষার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।
“পুলিশের নিপীড়ন, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেপ্তার এবং বিরোধীদলের সমাগম ও সমাবেশের উপর বিধিনিষেধের ঘটনাতেও আমরা উদ্বিগ্ন।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপির মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্রগুলো আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাব। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তারা যে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে; ২০১৩-১৪-১৫ সালে অগ্নি সন্ত্রাস করেছে এবং এখন বাস-ট্রাকে আগুন দিয়ে আবার মানুষের অধিকার হরণ করছে, সেগুলো আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়কে জানাব।”
নয়া পল্টনে বুধবার পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমরা বহু আগে থেকেই বলছিলাম যে- বিএনপি সমাবেশ নয়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। বিএনপি সমাবেশের ডাক দিয়েছে ১০ ডিসেম্বর, অথচ ৭ ডিসেম্বরেই নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের ওপর কীভাবে হামলা পরিচালনা করা হয়েছে, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে এবং মঙ্গলবার রাতে বিআরটিসি বাসে ও আরও গাড়ি-ঘোড়াসহ বিভিন্ন স্থানে তারা আগুন দিয়েছে, আপনারা দেখেছেন।”
বুধবারের ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, “বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে অবিস্ফোরিত ১৫টি ককটেল, দুই লাখ পানির বোতল, ১৬০ বস্তা চাল, রান্না করা খিচুড়ি, হাড়ি-পাতিল এবং দুই লাখ নগদ টাকাও পেয়েছে পুলিশ। দুপুর থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীরা নয়া পল্টনে জমায়েত হতে থাকে এবং যখন সেখানে একটি রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, তখন দয়া করে অন্তত একটি লেইন চালু থাকার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ তাদের বারবার অনুরোধ জানায়। কিন্তু সেই অনুরোধ তারা উপেক্ষা করে।
“এরপর মতিঝিল-রমনা এলাকার ডেপুটি কমিশনার হায়াৎ সেখানে নিজে গিয়ে আবারও অনুরোধ জানান। যখন তিনি অনুরোধ জানাচ্ছিলেন, তখন তাকে পেছন থেকে লাঠি দিয়ে আঘাত হানা হয় এবং তার বডিগার্ডকে দায়ের কোপ দেওয়া হয়। সেখান থেকেই শুরু এবং এরপর পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ হামলা পরিচালনা করা হয়।”
ওই সংঘর্ষে ‘মোট ৩৫ জন পুলিশ আহত হয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তখন পুলিশ বাধ্য হয়ে টিয়ার গ্যাস ছুঁড়তে বাধ্য হয়। একজন সাধারণ নাগরিক সেখানে মৃত্যুবরণ করেছেন, পুলিশ ধারণা করছে তিনি ককটেলের আঘাতে মৃত্যুবরণ করছেন। তবে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বেরুনোর পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
নয়া পল্টনের ঘটনা তদন্তের আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
সহিংসতায় উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের, ঢাকায় নাগরিকদের জন্য সতর্কতা
নয়া পল্টনে সংঘর্ষ: ২৩ জন রিমান্ডে, কারাগারে ৪৪৫
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি সবসময় বলে এসেছে যে- তারা ১০ লাখ মানুষের সমাবেশ ঘটাবে। নয়া পল্টন অফিসের সামনে ১০-২০ হাজার মানুষ ধরে। তারা যাতে ১০ লাখ মানুষের সমাবেশ ঘটিয়ে বড় সমাবেশ যাতে করতে পারে, সেজন্য তাদেরকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
“তারা সেখানে যেতে অনীহা প্রকাশ করলে মিরপুরের পল্লবী মাঠ, কালশী মাঠ; যেখানে বিএনপি ইতোপূর্বে সমাবেশ করেছে অথবা ইজতেমার মাঠ, বাণিজ্য মেলার মাঠ- এগুলো তাদের ব্যবহার করার জন্য বলা হয়। কিন্তু তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অসৎ উদ্দেশ্যে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দেয়।”
শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার ক্ষেত্রে সরকার কখনও বিএনপিকে বাধা দেয়নি দাবি করে তিনি বলেন, “সেটির প্রমাণ হচ্ছে সারাদেশে তারা সফলভাবে ৯টি বড় সমাবেশ করেছে, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে সরকার সর্বোত্তমভাবে সহায়তা করেছে।“
১০ ডিসেম্বর সমাবেশ নয়া পল্টনেই: ফখরুল
নয়া পল্টনে পুলিশ বাধ্য হয়ে বুলেট ছুড়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সরকার কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেবে না উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, “কিন্তু তারা (বিএনপি) দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চায়। বিএনপির যে সমস্ত নেতা বড় গলায় কথা বলছেন, অগ্নি সন্ত্রাস ঘটানোর জন্য অর্থদাতা, হুকুমদাতা কিম্বা অংশগ্রহণকারী হিসেবে- তারা প্রায় সবাই এ অপরাধের মামলার আসামি। রিজভী সাহেবসহ আরও বেশ কয়েকজন মামলার ওয়ারেন্ট মাথায় নিয়ে বুধবার সেখানে গিয়েছিলেন।
“পুলিশের নাকের ডগায় যখন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ঘুরে বেড়ায়, তখন তো তাদের গ্রেপ্তার করা পুলিশের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। যখন কোনো নেতা কার্যালয়ের ভেতরে তাজা ককটেল নিয়ে বসে থাকে, তখন সেই নেতাদের বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হয়। সরকার সেই ব্যবস্থায় নিয়েছে।”