খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ

“তিনি অসুস্থ, চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখানে রাজনীতির কথা আসাটা আমার মনে হয় কোনো প্রয়োজন নেই,” বলেছেন আনিসুল হক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2023, 11:41 AM
Updated : 12 March 2023, 11:41 AM

খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ নিয়ে আলোচনার মধ্যে তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর সুপারিশ করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সুপারিশ অনুমোদন করলেই বিএনপি চেয়ারপারসন আরও ছয় মাস শর্ত সাপেক্ষে মুক্ত থাকতে পারবেন।

অতীতের মতো এবারও এই সুপারিশ অনুসরণ করে খালেদার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়বে বলে মনে করছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুই বছর কারাগারে থাকার পর করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পান।

খালো জিয়ার পরিবারের আবেদনে দুটি মামলায় তার কারাদণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। তাতে দুটি শর্ত দেওয়া হয় তাকে- ১. তাকে বাসায় তথা দেশে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে, ২. তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

এরপর থেকে খালেদা জিয়া গুলশানে তার বাসায় রয়েছেন। মাঝে লিভার সিরোসিস ধরা পড়লে তাকে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছিল।

২০২০ সালের পর দফায় দফায় তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। এবারও ছয় মাসের জন্য তা বাড়ানোর সুপারিশ হল।

Also Read: স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে খালেদা জিয়া ফিরেছেন বাসায়

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। সেটার সময় শেষ হয়ে আসছিল, যার জন্য তারা (পরিবার) আবেদন করেছিলেন।

“এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাকে আগের মতো দুটি শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির মেয়াদ ৬ মাসের জন্য বৃদ্ধির সুপারিশ করেছি।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা সুপারিশ করেছি। অতীতেও আমাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আমার বিশ্বাস, এবারও তেমনই হবে।”

শর্তের বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, “শর্তগুলো হল- তিনি ঢাকায় নিজের বাসা থেকে তার চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। তিনি হাসপাতালে যেতে পারবেন না, তা নয়। তিনি হাসপাতালে যেতে পারবেন। উক্ত সময় তিনি দেশের বাইরে গমন করতে পারবেন না।”

শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পাওয়া খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন কি না, নির্বাচনের বছরে তা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয় সম্প্রতি।

Also Read: খালেদা জিয়া তো মুক্ত, বিএনপি কেন মুক্তি চায়: আইনমন্ত্রী

Also Read: রাজনীতি করতে চাইলে খালেদা জিয়াকে ‘শর্ত মানতে হবে’: কাদের

Also Read: খালেদা জিয়া সশরীরে রাজনীতি করতে পারবেন না: হানিফ

Also Read: খালেদার রাজনীতি: সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ টুকুর

Also Read: খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের এত দরদ কেন: ফখরুল

বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণে বাধা নেই বলে আইনমন্ত্রী মত জানালেও বিপরীত বক্তব্য আসে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছ থেকে।

এর মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে অযাচিতভাবেই খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা তুলছে।

রোববার আইনমন্ত্রীকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন- খালেদা জিয়া বাসায় থেকে রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন কি না?

জবাবে তিনি সরাসরি উত্তর এড়িয়ে বলেন, “আমাদের কাছে যে দরখাস্ত এসেছে, তাতে বলা হয়েছে যে তিনি গুরুতর অসুস্থ। সে ক্ষেত্রে রাজনীতি করার প্রশ্নটা তো অবান্তর। তিনি মুক্ত, তিনি অসুস্থ, তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখানে রাজনীতির কথা আসাটা আমার মনে হয় কোনো প্রয়োজন নেই।”

৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকে আর্থারাইটিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাজীবন শুরু করেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তার সাজার রায় হয়। তার বিরুদ্ধে আরও ৩৪টি মামলা রয়েছে।