“গুজবে কান না দিয়ে দেশের মানুষের জন্য, দেশের কল্যাণে আমরা যে কাজ করে যাচ্ছি সেখানে আমরা তাদের সমর্থন চাই,” বলেন শেখ হাসিনা।
Published : 15 Dec 2022, 05:00 PM
দেশের মানুষকে ‘গুজবে’ কান না দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঘরে জমিয়ে না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “ব্যাংকে ‘টাকা নেই’ গুজব বিশ্বাস করে অনেকে টাকা তুলে ঘরে রেখেছে। আর ঘরে রাখতে গিয়ে দেখে টাকা চুরি হয়ে যায়। অর্থাৎ চোরের সুযোগ হয়ে গেছে।”
বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন সরকারপ্রধান।
‘গুজব রটনাকারীদের’ উদ্দেশে তিনি বলেন, “যারা এই গুজব ছড়াচ্ছে, তারা চোরদের এজেন্ট কিনা সেটা আমি জানি না। মনে হয় তারা চোরদেরই এজেন্ট হবে। মানে চোরের সুযোগ করে দেওয়া।
“সেইক্ষেত্রে আমি বলব, গুজবে কেউ যেন কান না দেয়। গুজবে কান না দিয়ে দেশের মানুষের জন্য, দেশের কল্যাণে আমরা যে কাজ করে যাচ্ছি সেখানে আমরা তাদের সমর্থন চাই।”
মহামারী আর ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে ঘাদ্য ঘাটতি আর মন্দা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। এজন্য দেশের মানুষকে অনাবাদি বা ফেলে রাখা জমি চাষ করার পরামর্শ দেন।
“পাশাপাশি বাড়ি ঘরের ছাদে যেখানে যে পারবেন ছাদ বাগান করেন। নিজের ঘরে যা পারেন কিছু উৎপাদন করেন, সাশ্রয় করেন। নিজেরা কিছু সাশ্রয় করতে হবে এবং সঞ্চয় করতে হবে। কারণ সারাবিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা, এখান থেকে তো বাংলাদেশও বাইরে যাবে না; বাংলাদেশের উপরও তো সেটা এসে পড়ে।
“যেভাবে মূল্যস্ফিতি দেখা দিয়েছে, সেখান থেকে তো আমরা বাংলাদেশ আজকে তো একটা গ্লোবাল ভিলেজ। এখান থেকে তো আলাদা হওয়া যায় না, বিচ্ছিন্ন হওয়া যায় না। কিন্তু আমাদের ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে।”
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় দাবি করে বিএনপির সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করি। আর বিএনপি মানেই হচ্ছে অত্যাচার, নির্যাতন আর দেশে দুঃশাসন, লুটপাট, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই– এটাই। নারী নীতিমালা তো বিসর্জন দিলই। নারীর অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নিল।”
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে ছাত্রদলের কর্মকাণ্ড এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রদলের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে শিক্ষার্থী সাবিকুন নাহার সনির মৃত্যুর ঘটনাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী ।
“তাদের হাতে যেভাবে আমাদের নেতাকর্মী বা সাধারণ মানুষ নির্যাতিত, তারপরে তাদের শোষণ অত্যাচার, নিরর্যাতন, মানিলন্ডারিং…। এছাড়া আর কী তারা দিতে পেরেছে দেশকে, কিছুই দিতে পারেনি।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি নেতাদের সমালোচনার জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “আজকে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে কথা বলে। ২০০৮ এর নির্বাচন নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কোনোভাবেই কি ওই নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেছে? ওঠে নাই। কেউ কোনো প্রশ্ন করে নাই। তাহলে নির্বাচনের ফলাফলটা কী ছিল? নির্বাচনের ফলাফল অনেকে ভুলে গেছেন।
“তিনশ আসনের সেই নির্বাচনে বিএনপি তখন কয়টা আসন পেয়েছিল সেটা হয়ত বিএনপি নেতারাও ভুলে গেছেন। মাত্র ৩০টা সিট পেয়েছিল বিএনপি। মাত্র ৩০টা সিট ওই তিনশো সিটের মধ্যে তারা পায় ২০০৮ এর নির্বাচনে। আর জাতীয় পার্টি পায় ২৭টা সিট।
“ওই তিনটা সিট বেশি ছিল দেখে খালেদা জিয়া লিডার অফ দ্যা অপজিশনে আবার সুযোগ পেয়েছিল। জাতীয় পার্টি যদি আর ৩/৪টা সিট পায়, তাহলে আর বিএনপির খালেদা জিয়া লিডার অফ দ্যা অপজিশনও তখনই হতে পারত না। এটা হল বাস্তবতা।”
শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞেস করলে হয়– এত যে লাফালাফি, কীসের জন্য? আগের নির্বাচনেই তো এই রেজাল্ট। তাহলে আপনারা কী নিয়ে লাফান?”
বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বিএনপি ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছিল। তাদের অগ্নিসন্ত্রাসে কত মানুষ পুড়ে… তারা তিন হাজারের বেশি মানুষকে পুড়িয়ে ফেলেছে। হাজার হাজার গাড়ি, লঞ্চ পুড়িয়েছে। এমনকি ইউনিভার্সিটির ছাত্রীও রেহাই পায়নি।
“আমি জানি ১০ তারিখে (১০ ডিসেম্বর) তাদের অনেক ঘোষণা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ ওই অগ্নিসন্ত্রাসী, ভুয়া ভোটার লিস্টে ভোটার লিস্ট করা… বিএনপির এই নির্বাচনই শুধু মানুষ প্রত্যাখ্যান করেনি, ১৯৯৬ সালে বিএনপি ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি। তাদের সেই নির্বাচনে কোনো মানুষ সাড়া দেয়নি, কোনো দল সাড়া দেয়নি।”
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ‘ছিনিমিনি খেলে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটা বিএনপির চরিত্র। তার কারণ একটাই, ওরা তো গণমানুষের দল না। ওরা তো মানুষকে পরোয়া করে না। ক্ষমতা ওদের কাছে ভোগের বস্তু, লুটের সুযোগ, লুটের মাল। আর বাংলাদেশের মানুষ তো তাদের কাছে কিছুই না। তাদেরকে তারা পরোয়াই করে না।
“বাংলাদেশের মানুষ জানে এই আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনে দিয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে তারই হাতে গড়া সংগঠনের মাধ্যমে। কাজেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়।”
২০০৮ সালে দেশে সাক্ষরতার হার কমে গিয়েছিল দাবি করে সরকারপ্রধান বলেন, “অবশ্য এটার কারণ আছে। খালেদা জিয়া একটা মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিল। উর্দু আর অংক এই দুই সাবজেক্টে পাস করেছিল; আর কোনটায় পাস করেনি, ফেল। উর্দু খুব প্রিয় সাবজেক্ট তার, কারণ পাকিস্তান প্রীতি। আর টাকা গোনা, এজন্য অংকে পাস। এছাড়া আর সাবজেক্টে কিন্তু পাস করেনি। জিয়াউর রহমান ইন্টারমিডিয়েট পাশ। আর তারেক জিয়া যে কী পাস তারও কোনো ঠিকানা নাই।
“তাদের কথা হচ্ছে, ‘আমরা পড়ি নাই তো তোরা পড়বি ক্যান।’ তাই ৬৫ ভাগ থেকে আবার ৪৫ ভাগে নামিয়ে আনল সাক্ষরতার হার। আর আমরা নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ করার জন্য বয়স্ক শিক্ষার জন্য যে প্রজেক্ট নিলাম, সেটাও বন্ধ করে দিল।”
দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীন করে দিয়ে গেছে। এই বাংলাদেশে কোনো মানুষ অভুক্ত থাকবে না, কোন মানুষ ভূমিহীন থাকবে না। আমরা প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দিয়েছি।”
দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা পদক্ষেপ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের ‘সাহসী’ ভূমিকার প্রশংসা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
যুব মহিলা লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে সংগঠনটির সদ্য বিদায়ী সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দেন।