“বর্তমান এই কমিশন আজ অবধি নির্লজ্জের মতো বসে আছে। আমি মনে করি, এই নির্বাচন কমিশনের বোধদয় হওয়া উচিত।”
Published : 04 Sep 2024, 04:01 PM
শেখ হাসিনা সরকারের ‘মদদপুষ্ট’ নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বুধবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে অবিলম্বে অন্তর্বতীকালীন সরকারকে এ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন অতীব জরুরি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা, অতীব জরুরি দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠন করা। কারণ এই দুইটা প্রতিষ্ঠানে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীদের বসিয়ে রাখা হয়েছে।
“এই সমস্ত সুবিধাভোগীদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করা সরকারের দায়িত্ব। এই সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। তারা তাদের সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ত্রাণ সংগ্রহ কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য জাহিদ হোসেন অভিযোগ করেন শেখ হাসিনার শাসনামলে গঠিত নির্বাচন কমিশন তাদের ‘তল্পিবাহক’ ছিল।
তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন এই দেশের বিগত রেজিম যেটি ছিল, সেটিকে পাকাপোক্ত করার জন্য যারা সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে সেটি হলো এই ভুয়া নির্বাচন কমিশন। তারা ‘দলদাস তল্পিবাহক’ একটি কমিশন। ওই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলে আজকেও তাদের গঠন করা নির্বাচন কমিশন বহাল তবিয়তে বসে আছে।
“যারা গত ৭ জানুয়ারি ‘আমি আর ডামি’র নির্বাচন করেছে, যারা এক সময়ে দিনের ভোট রাতে করেছে, যারা এক সময়ে বিনা ভোটে এমপি উপহার দিয়েছে, তিনটা নির্বাচন কমিশন আমরা এরকমই দেখেছি। বর্তমান এই কমিশন আজ অবধি নির্লজ্জের মতো বসে আছে। আমি মনে করি, এই নির্বাচন কমিশনের বোধদয় হওয়া উচিত। জনগণের রোষ থেকে বাঁচার জন্য পদত্যাগ করে এই সরকারকে সুযোগ দেয়া উচিত নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের।”
অন্যথায় ‘সত্যিকার অর্থে জনরোষ থেকে কেউ রক্ষা পাবে না’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সমালোচনা করে জাহিদ হোসেন বলেন, “দুদকের যে সমস্ত কমিশনার ও কর্মকর্তারা এখনো বসে আছেন বিগত সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে, অন্তর্বতীকালীন সরকারকে বলব, অতীব জরুরি দুদক পুনর্গঠন করা।
“কারণ দুদকে পতিতদের আত্মীয়-স্বজন, উনাদের সুবিধাভোগী লোকজনকে বসিয়ে রেখে তৎকালীন বিরোধী দলসহ দেশের মানুষের ওপর র্নিযাতন চালানো হয়েছে। আজকে ১৮ লাখ কোটি টাকা বলেন আর ১৫ লাখ কোটি টাকা বলেন, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে হলে, ব্যাংক লুটের অর্থ ফিরিয়ে আনতে হলে…সে সংবাদ কর্মী হোক, চিকিৎসক হোক, স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি বের করতে হলে, আইসিটির দুর্নীতি বের করতে হলে অথবা গেটওয়ের দুর্নীতি বের করতে হলেও শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশন দরকার। নির্মোহভাবে যারা দায়িত্ব পালন করবেন...এসব সুবিধাভোগীদেরকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা সরকারের দায়িত্ব।”
বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ দুর্গত মানুষের জন্য নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী ত্রাণ সামগ্রি দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
“প্রায় ১০ কোটি টাকার ত্রাণসামগ্রী বন্যা কবলিত এলাকায় সমন্বিতভাবে বিতরণ করা হয়েছিল আজ থেকে তিনদিন আগে। আমাদের এই ত্রাণের কার্য্ক্রম, ব্যাপকতা, গ্রহণযোগ্যতা, অংশগ্রহণ এমন আকার ধারণ করেছে, আমরা গতকাল রাত পর্যন্ত প্রায় ১৩ কোটি টাকার অধিক ত্রাণসামগ্রী এবং নগদ অর্থ দুর্গত মানুষের মাঝে বিতরণ করতে পেরেছি।”
জাহিদ বলেন, “আমরা সুস্পষ্টভাষায় বলতে চাই, এই ত্রাণ আমরা শুধু একটি জিনিস খেয়াল রাখছি, নৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থানে যারা আছেন তাদের ত্রাণ আমরা গ্রহণ করছি না। মনে রাখতে হবে আমরা চাই, বিগত রেজিমে সুবিধাভোগী মানুষ যাতে এখানে ঢুকে না পড়ে, ত্রাণ দিয়ে নিজেকে আড়াল করতে না পারে, সেই বিষয়টি বিএনপি অত্যন্ত সচেতনতার সাথে খেয়াল রাখছে।”
সংবাদ সম্মেলন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব ও ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালাম আজাদ, সদস্য মীর সরাফত আলী সপু, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।