“এবার ইসলামি দলগুলোর জোট না হলেও নির্বাচনী সমঝোতা দেখতে চাই। একটি আসনে সবার পক্ষ থেকে একজন প্রার্থী থাকবে”, বলেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ।
Published : 14 Feb 2025, 01:44 AM
জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও রাজনীতির মাঠে কার্যত আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি ইসলামপন্থি দলগুলোর জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে কি না তা নিয়ে জনপরিসরে ও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে।
একইসঙ্গে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্রিক ঐক্যমুখী রাজনীতি নতুন মেরুকরণের আভাস দিচ্ছে, যেখানে আদর্শিক রাজনীতি ও ভোটের হিসাব গুরুত্ব পাচ্ছে।
আগের সংসদ নির্বাচনগুলোর ফল বলছে, জামায়াত নিজেদের শক্তিতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারলেও অন্য ধর্মভিত্তিক দলগুলো সেটা পারেনি। তাদের ভোটে জেতার জন্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মত বড় দলের সঙ্গে জোট বাঁধতে হয়েছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কি না সে প্রশ্নের মীমাংসা এখনো হয়নি।
এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়া জামায়াত ক্ষমতার রাজনীতির সমীকরণ বদলে দিতে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে ভোটকেন্দ্রিক সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে ভোটের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগের আমলে জাতীয় ও স্থানীয় প্রায় সব নির্বাচনে অংশ নেওয়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
এই প্রক্রিয়ায় মওদুদীবাদের ‘আক্বিদা’ নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে ক্বওমী ঘরানার দলগুলোর যে ঐতিহাসিক দূরত্ব রয়েছে, তা নতুন করে সামনে আসছে। এবার সে দূরত্ব ঘুচতে যাচ্ছে, না কি জামায়াতের সঙ্গে জোট গড়ার ধুয়া তুলে ধর্মভিত্তিক দলগুলো দর কষাকষি করে বিএনপির কাছে থেকে আসন নিশ্চিত হতে চায়, সে আলোচনাও রয়েছে।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ মনে করেন, জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বৈষম্যের বিপরীতে যে জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, সেখানে মানুষ চায় ‘একটা বিকল্প শক্তি গড়ে উঠুক’।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এবার ইসলামী দলগুলোর জোট না হলেও নির্বাচনী সমঝোতা দেখতে চাই। একটি আসনে ইসলামি দলগুলোর পক্ষ থেকে একজন প্রার্থী থাকবে। আমরা অনেক দলের কাছে যাচ্ছি। অনেক দল আমাদের কাছে আসছে। সামনে অন্যান্য দলের কাছেও যাব।”
ইসলামপন্থি দলগুলোর জোট বাঁধার আলোচনার সূত্রপাত ৫ অগাস্ট পরবর্তী সময়ে নিজ দলের ব্যানারে ও রাজনৈতিক পাড়ায় প্রকাশ্যে জামায়াতের কার্যক্রম শুরু হলে। নিষিদ্ধ থাকলেও তখন দলটি দীর্ঘদিনের গোপনীয়তা ভেঙে সামনে এসে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করে।
আক্বিদার প্রশ্নে একদম বিপরীত মেরুতে থাকা দলগুলোর নেতাদেরও সঙ্গে আলোচনা করছে জামায়াত।
বিএনপির ভরাডুবির জন্য জামায়াতকে দায়ী করা ইসলামী আন্দোলনের আমির মাওলানা সৈয়দ রেজাউল করীমের সঙ্গে বরিশালের চরমোনাইয়ে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। এরপর সাংবাদিকদের সামনে এসে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দেন ইসলামী আন্দোলনের প্রধান চরমোনাই পীর।
জামায়াত আমিরের সাক্ষাতের ছয় দিনের মাথায় ২৭ জানুয়ারি চরমোনাই পীরের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ন্যূনতম সংস্কার শেষে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি ইসলামি শরিয়াহ বিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে ইসলামী আন্দোলন ও বিএনপি।
জামায়াতের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা কতটা?
বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ঐক্য বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দলগুলো ও আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ অন্যান্য ইসলামিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা বহুবার করলেও কিছু বিতর্কিত বিষয় সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদীর ‘আক্বিদা’ নিয়ে অনেক ক্বওমী ঘরানার আলেমের ক্ষোভ রয়েছে।
এ কারণে এখনো জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করার ব্যাপারে ধর্মভিত্তিক দলগুলো সাবধানী অবস্থানে রয়েছে। ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টিসহ কয়েকটি দল জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যকে সমর্থন করছে না। এ কাতারে আছে হেফাজতে ইসলামও।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘এক প্ল্যাটফর্মে আনার যে চেষ্টা জামায়াতের তাতে হেফাজতসহ আরো কয়েকটি সংগঠন ও দলের যুক্ত হওয়ার ইঙ্গিত ছিল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকের বিভিন্ন বক্তব্যেও। তিনি হেফাজতেরও নেতা।
তবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর বক্তব্যে ঐক্যের বিষয়টি থমকে যায়।
গত ২৫ অক্টোবর ফেনী মিজান ময়দানে দেওয়া বক্তৃতায় মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, “আমরা জামায়াতে ইসলামকে ইসলামী দল মনে করি না। জামায়াতে ইসলাম মদিনার ইসলাম চায় না, তারা মওদুদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়।”
এ সমস্যা যে শুধুমাত্র এবারই হয়েছে, তা নয়। ১৯৮১ সালে মাওলানা মোহাম্মদউল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর যখন রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হন তখনো জামায়াতের সমর্থন অগ্রাহ্য করেছেন তিনি।
হাফেজ্জী হুজুর জামায়াতকে মওদূদীর ‘ভ্রান্ত আক্বিদা’ সংশোধন করে সেটির সংবাদও প্রকাশের কথা বলেন। তাতে জামায়াত সাড়া দেয়নি।
প্রায় ৪৪ বছর ধরে জামায়াতের সঙ্গে অন্য ধর্মভিত্তিক দলগুলোর দূরত্বের আরেক কারণ একাত্তরে দলটির বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা।
জামায়াতের সঙ্গে আক্বিদার বিরোধ নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন সময়ে তো বিভিন্ন জোট হল। তাতে খুব বেশি লাভ হয়নি। সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণ হয়নি। তাছাড়া জোট হলে তখন আক্বিদার প্রশ্ন আসে। এখানে জোট নয়; হবে নির্বাচনী সমঝোতা।”
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে আমাদের যে পার্থক্য সেটা হচ্ছে পথের পার্থক্য। ইসলামের কোনো মৌলিক বিষয়ে না।
“শরিয়তের বেসিক বিষয় তথা নামাজ, রোজা, হজ্জ, আল্লাহ, কেয়ামত প্রসঙ্গে কারো কোন ভিন্নতা নাই।”
এক আসনে এক প্রার্থী
আক্বিদাগত ফারাক ও মতপার্থক্য দূরে রেখে বৃহৎ স্বার্থে এক আসনে সব ইসলামপন্থি দলগুলো মিলে একজন প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে মত জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন।
দলটির মহাসচিব বলেন, “অনেকদিন ধরেই এমন একটা ফোরামের চেষ্টা ছিল ইসলামি দলগুলোর মধ্যে। তাহলে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে একটা বিকল্প শক্তি গড়ার, সেটা সম্ভব।
“আগে বিভিন্ন সময় একেক দল একেক জোটে ছিল। তাতে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। আমরাও চাচ্ছি, সকল দলের মধ্যে একটা ঐক্য হোক।”
একই সুরে কণ্ঠ মেলান খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের।
ইসলামপন্থি দলগুলোর নির্বাচনী সমঝোতা প্রশ্নে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা যেটা চাচ্ছি, সকল দলগুলোর মধ্যে একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং করে একজন প্রার্থী। আমরা মনে করি, সকল ইসলামপন্থি দল মিলে একটি আসনে একজন প্রার্থী দেওয়া গেলে ভালো ফল আসবে।
“এ বিষয়ে জামায়াত একমত। ইসলামী আন্দোলন একমত। আমরাও একমত।”
এক্ষেত্রে জামায়াতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের যে আক্বিদাগত ফারাক তা ঘুচবে নাকি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে আবার এমন প্রশ্নে খেলাফত মজলিসের এ নেতা বলেন, “ইসলামি রাষ্ট্রের যে ধারণা তাতে কারো দ্বিমত নেই। যেগুলো আছে সেগুলো ভিন্ন ব্যাপার। ফলে ঐক্যে কোন বাধা নাই।
“এখানে জোটও হচ্ছে না কারও নেতৃত্বে। তাই জোটবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে যে আক্বিদার প্রশ্ন সেটিও নাই। এখানে একক প্রার্থী বাছাইয়ে সকল ইসলামপন্থি দলের সমঝোতা হবে। তবে সেটি কীভাবে হবে তা নির্বাচনের ঘোষণা ও রোডম্যাপ সরকারের তরফে এলেই বোঝা যাবে।”
এক আসনে এক প্রার্থীর আলোচনার কথা স্বীকার করেন জামায়াত নেতা জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারও।
তিনি বলেন, “আমাদের (ইসলামপন্থি দলগুলো) মধ্যে এ আলোচনা চলছে। আমরা সকল দল মিলে একজন প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে একমত হয়েছি। সেভাবেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।”
নির্বাচন সামনে রেখে এতে কারা থাকবে তা আরও স্পষ্ট হবে বলেও মনে করেন দেশের অন্যতম বড় ধর্মভিত্তিক দলের এ নেতা।
বিএনপির ভাবনায় কী?
নব্বইয়ের দশকে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতাকে ভোটের হিসাবে রূপান্তরিত করে বিএনপি। এ ধারায় ইসলামী ঐক্য জোটকেও পাশে পায় ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করা দলটি।
পরবর্তী সময় বিএনপির নেতৃত্বে পরবর্তীতে ২০ দলীয় জোট গঠিত হয়, যেখানে ধর্মভিত্তিক দলগুলো শক্তির দিকে থেকে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে ছিল। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপিকে কেন্দ্র করে আলাদা জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট গঠিত হয়।
পরে ধর্মভিত্তিক দলগুলো বিএনপির কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। ২০২২ সালের শেষ দিকে এসে ২০ দলীয় জোটের ‘বিলুপ্তি’ ঘটে। তার পরেও ১২ দলীয় সমমনা জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট নামের দুটি জোট বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে ছিল।
১২ দলীয় জোটে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক পার্টি রয়েছে।
যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপি সঙ্গে পেয়েছিল গণঅধিকার পরিষদ ও বাম-মধ্যপন্থী কয়েকটি দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চকে।
আগামী নির্বাচন ঘিরে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে কাছে টেনে বিএনপি বড় মঞ্চ নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হতে চায়।
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, “ফ্যাসিস্ট বিরোধী যেসব ইসলামী দল রয়েছে, যারা ছাত্র-জনতার বিপ্লবে অংশীদার ছিলেন এরকম সব দলের সাথে ন্যূনতম ইস্যুতে ঐক্য হবে।”
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠককে ‘সফল’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, ওই আন্দোলনে বিভিন্ন ইসলামিক দল তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্দোলন করেছে, যুগপৎভাবে একই কর্মসূচি দিয়ে তা রাজপথে থেকে বাস্তবায়ন করেছে।”
“বলতে পারেন, তারই অংশ হিসেবে আমরা ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ এর আমীর চরমোনাই পীর সাহেব মাওলানা সৈয়দ রেজাউল করীমের সাথে বৈঠক করেছি। সফল বৈঠকে আমরা ১০টি বিষয়ে একমত হয়েছি।”
সংসদ নির্বাচনে ভোটের হিসাব
পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনের ফল বিবেচনা করে দেখা যায়, জামায়াতের ভোট গড়ে ৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যেই ছিল। দলটির ভোট চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কিছু এলাকায় কেন্দ্রীভূত।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে তারা কেবল সিরাজগঞ্জের একটি, পিরোজপুরের একটি ও কুমিল্লার একটি আসনে ভোট বাড়িয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে আসার মত শক্তিশালী হয়ে উঠতে পেরেছে।
১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ৬ শতাংশ ভোট পেলেও জামায়াত কোনো আসন পায়নি। স্বাধীনতার পর স্বৈরশাসক এরশাদের আমলে ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে ভোট পায় ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। আসন পায় ১০টি।
বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমঝোতা ভোটের রাজনীতিতে কতটা প্রভাব পড়ে, সেটি বোঝা গেছে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে।
ওই নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমানের লেখা একটি বইয়ে বলা হয়েছে, পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে জামায়াতকে অঘোষিতভাবে ৩৫ আসনে সমর্থন দেয় বিএনপি। আর বিএনপিকে শতাধিক আসনে ভোট দেয় দলটি।
সেই নির্বাচনে বিএনপি আসন পায় ১৪০টি, জামায়াত পায় ১৮টি। আর আওয়ামী লীগ পায় ৮৮ আসন।
ওই নির্বাচনে দুই প্রধান দলের ভোট ছিল একেবারেই কাছাকাছি। ধানের শীষ নিয়ে বিএনপি পায় মোট ভোটের ৩০ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগ পায় ৩০ দশমিক ০৮ শতাংশ।
জামায়াতের বাক্সে পড়ে ১২ দশমিক ১০ শতাংশ ভোট। দলটির নির্বাচনী ইতিহাসে গড় হারের প্রায় দ্বিগুণ ভোট পায় সেবার।
জামায়াতের অঞ্চলভিত্তিক ভোটের কথা বিবেচনা করে ১৯৯৯ সালে দলটির সঙ্গে জোটে যায় বিএনপি। প্রায় দুই যুগ অটুট থাকে সেই জোট।
১৯৯৬ সালে যে দুইবার ভোট হয়, তার মধ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোট আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মত বর্জন করে জামায়াতও। ওই বছরের ১২ জুন সব দল একক শক্তিতে যে নির্বাচন করে, তাতে জামায়াতের ভোট কমে হয় ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। আসন পায় তিনটি।
ওই বছর মোট ভোটের ৩৭ দশমিক ৪০ শতাংশ পড়ে আওয়ামী লীগের বাক্সে। আসন পায় ১৪৬টি। বিএনপি ১১৬টি আসন পায়, যা মোট ভোটের ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনের আগে জোট বাঁধে বিএনপি ও জামায়াত। ভোটে জিতে সরকার গঠন করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। জামায়াতের দুই নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ মন্ত্রিত্ব পান সে সরকারে।
সেই নির্বাচনে বিএনপি একাই পায় ১৯৩টি আসন। জামায়াত পায় ১৭টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বা বিজেপি চারটি, ইসলামী ঐক্যজোট পায় দুটি আসন পায়।
ওই বছর আওয়ামী লীগ আসন পায় ৬২টি। উপনির্বাচনে দলটি চার আসনে পরাজিত হয়ে ৫৮ আসন নিয়ে সংসদে বিরোধী দল হয়।
সেই নির্বাচনে বিএনপি ভোট পায় ৪১ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর আওয়ামী লীগ পায় ৪০ দশমিক ০২ শতাংশ। জামায়াতের ভোট ছিল ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তৈরি হয় নতুন সমীকরণ। ওই বছর আওয়ামী লীগও ভোটে নামে জোটের শক্তি নিয়ে। জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোট মিলে মহাজোট বিপুল বিজয় পেয়ে সরকার গঠন করে।
সেই নবম সংসদ নির্বাচনে ৪৮ দশমিক ০৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ আসন পায় ২৩০টি। এই ভোটের মধ্যে জাতীয় পার্টি ও অন্য শরিকদের অংশও রয়েছে।
বিএনপির বাক্সে ভোট পড়ে ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ। আসন ৩০টি।
ওই নির্বাচনে জামায়াত ভোট পায় ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা আগের নির্বাচনের চেয়ে বেশি, তবে আসন পায় দুটি।
২০১৩ সালে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় পর আর দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে পারেনি জামায়াত।
বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে ভোটের সমঝোতায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর হাতপাখা প্রতীকে নিবন্ধিত হয়ে ভোটের খাতা খোলে।
সে বছর ২৯ ডিসেম্বরের নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ ৩৮টি নিবন্ধিত দল অংশ নেয়। একটি দল অংশ নেয়নি।
হাতপাখা ১৬৭টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৪টি ভোট পায়, যা ভোটের হারের মাত্র দশমিক ৯৪ শতাংশ। এ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮৭ শতাংশের বেশি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি ইসলামী আন্দোলন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ১২টি দল অংশ নেয়। ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং বাকিগুলোয় ভোট পড়েছিল ৪০ শতাংশ। বিএনপিসহ সরকার বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এ নির্বাচনে ২৯৭ আসনে প্রার্থী দিয়ে হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন ১২ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ ভোট পেয়েছিল; যা প্রদত্ত ভোটের ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এ নির্বাচনে বিএনপিসহ অংশ নিয়েছিল ৩৯টি দল।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৮টি দল ভোটে অংশ নেয়। বিএনপিসহ বাকি দলগুলো ভোটে ছিল না। নির্বাচনে ভোট পড়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ।
সবশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছিল না হাতপাখা। তবে সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নানা ভোটে অংশ নেয় দলটি।
২০১৫ সালে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন তৃতীয় অবস্থানে ছিল। ঢাকা উত্তরে ১৮ হাজার এবং দক্ষিণে ১৫ হাজার ভোট পায় দলটি।
২০১৬ সালের নারায়ণগঞ্জ, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তৃতীয় হয় ইসলামী আন্দোলন।
২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে ছিল তারা।
২০২০ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৬ হাজার ২৫৮ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২৬ হাজার ৫২৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয় দলটি।
রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেছিল ইসলামী আন্দোলন।
২০১৭ সালে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ২৪ হাজার ৩ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখার প্রার্থী। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়ী হন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী দ্বিতীয় ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তৃতীয় হয়েছিলেন।
সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দ্বিতীয় হওয়া দলটির প্রার্থী ভোট পান ৪৯ হাজার ৮৯২।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হন। বিএনপি ভোটে অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জামানত হারান আর দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী হন তৃতীয়।
আগের নির্বাচনগুলোর ফল বলছে, ধর্মভিত্তিক অর্থাৎ ইসলামপন্থি দলগুলো নির্বাচনী সমঝোতা করে ভোট করলেও বেশি আসন পাবে না। তবে আগামী নির্বাচনে তরুণদের ব্যালট তাদের বাক্সে গেলে ফল তাদের আশানুরূপ হতে পারে।
অন্যদিকে ভোটের হিসাব বলছে, বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করলে আসন নিশ্চিত হতে পারে। অতীতে ইসলামী ঐক্যজোট ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পেরেছে।
ভোটের সমীকরণ নিয়ে জানতে চাইলে সমঝোতার আলোচনায় থাকা ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, “ইসলামী আন্দোলন কখনও আসন বা দরকষাকষির রাজনীতি করে না।
“তাই ভোগবাদী রাজনীতি যারা করে তাদের সাথে আমাদের সম্পৃক্ততা কম। যেই-ই দেশ চালাক, আমরা চাই ভালোভাবে দেশ চালাক। আমরা বরং আদর্শের ভিত্তিতে আদর্শভিত্তিক রাজনীতি করি।”
সংস্কার উদ্যোগ ঘিরে অন্য হিসাব
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে চাপও রয়েছে। বড় দল হিসেবে বিএনপি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন চায়। অন্যদিকে সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান জামায়াত ও সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যারা নতুন দল গঠন করছে।
সংস্কার প্রস্তাবে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন এক কাতারে; তারা চায় আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা। সরকার গঠিত সংস্কার কমিশন দ্বিকক্ষ সংসদের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিত্ব ঠিক হবে দলগুলোর প্রাপ্ত মোট ভোটের অনুপাতে।
আগামী নির্বাচনের আগে এ প্রস্তাব কার্যকর হলে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ভোট ‘এক্স-ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠতে পারে; আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রে না গেলে এ দলগুলোর একই পরিমাণ ভোট তখন শতাংশে বেড়ে যাবে।
ইসলামি দলগুলোর ধারণা, জোট করে আশানুরূপ আসন পাওয়ার প্রতিশ্রুতি না মিললে, তাদের চেষ্টা থাকবে একক ভোটের। তাতে ভোটের হার বাড়বে।
সেটা হলে সংসদের নিম্নকক্ষে বিএনপি নিরঙ্কুশ জয় পেলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নাও পেতে পারে উচ্চকক্ষে; তাতে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত পাস করিয়ে নিতে দলটির পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠবে।
সেই শঙ্কায় বিএনপি দরকষাকষি করে কিছু আসন ছাড় দিতে হলেও সে পথেই হাঁটার ইচ্ছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির।
বিএনপি প্রথম থেকেই আনুপাতিক হারে ভোটের বিপক্ষে মত দিয়ে আসছে; এ বিষয়ে তারা যেকোনো ঐক্যেরও বিপক্ষে।
দলটি কেবল ‘জাতীয় ও বৃহত্তর স্বার্থে’ কিছু আসন ছাড়তে রাজি হতে পারে।
ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে ও সরকারি দলের স্বৈরাচারী হয়ে উঠার পথ বন্ধ করতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর অন্যতম সংবিধান সংস্কার কমিশন।
কমিশন সংসদ দুই কক্ষ করা, নিম্নকক্ষে ৪০০ আসন (নারী ১০০) ও উচ্চকক্ষে ১০৫ আসনের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে ৫ আসনে মনোনয়ন দেবেন রাষ্ট্রপতি।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নিম্নকক্ষের ভোট হবে সরাসরি। আর উচ্চ কক্ষে আসন বণ্টন হবে দলগুলোর প্রাপ্ত মোট ভোটের অনুপাতে। এ ক্ষেত্রে দলগুলোকে প্রদত্ত মোট ভোটের কমপক্ষে ১ শতাংশ নিশ্চিত করতে হবে।
দ্বিকক্ষ সংসদ চালুর প্রস্তাবের বিষয়টি তুলে ধরে সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ বলেছেন, “এ দুই কক্ষ মিলে যাতে সকলের প্রতিনিধিত্ব থাকে, তার জন্য একইসঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নিম্নকক্ষ, কিন্তু সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে উচ্চকক্ষ তৈরির সুপারিশ করেছি।”
উচ্চকক্ষের ক্ষেত্রে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব, সংবিধান সংশোধন করে ১০০ আসন নিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষ এবং দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে (সংখ্যানুপাতিকভাবে) এ কক্ষের আসন বণ্টন করা। উচ্চ কক্ষে আসন পেতে হলে প্রদত্ত মোট ভোটের ন্যূনতম ৩ শতাংশ পেতে হবে।
অতীতের নির্বাচনগুলোর ফল বলছে, আনুপাতিক হারে ভোট হলে, নিম্নকক্ষে আসন কম পেলেও উচ্চকক্ষে প্রভাব থাকবে জামায়াতের।
আওয়ামী লীগকে ভোট করতে না দিলে প্রদত্ত ভোটের হিসাবে অতীতের মত ইসলামী আন্দোলনের ভোটের হার বাড়তে পারে।
জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন দুই কক্ষের সংসদ ও উভয় কক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন চায়।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ বলেন, “বিএনপি বরাবরই ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকারের কথা বলে। অথচ সংসদ নির্বাচন আনুপাতিক হারে হলে জাতীয় সরকার এমনি হয়ে যায়।
“এতে কালো টাকার ছড়াছড়ি কমে। এইজন্য আমরা সবসময়ই এটা চাচ্ছি।”
তবে বড় দল বিএনপি বিপক্ষে থাকায় আনুপাতিক পদ্ধতি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা খুবই কম ভেবে নির্বাচনী সমঝোতার পরিকল্পনার কথা বলেন খেলাফত মজলিসের নেতা আহমদ আবদুল কাদের।
এক সময় বিএনপির জোটে থাকা দলটির এই নেতা মনে করেন, ধর্মভিত্তিক দলগুলো এক আসনে একজন প্রার্থী দিতে পারলে ভাল ফল আসবে।
সংখ্যানুপাতিক ভোট পদ্ধতি তারা দলের মধ্যে চর্চা করছেন তুলে ধরে জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার বলেন, “এটা সবাইকে বলছি। প্রচার চালাচ্ছি। মতবিনিময় সভা করছি যাতে সামনের নির্বাচনে এ পদ্ধতিতে ভোট হয়।”
কেয়ারটেকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, যখন জামায়াত বলেছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মানেনি। কিন্তু একসময় সবাই মেনেছে। এটি সংবিধানেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
“আমরা বিশ্বাস করি, এই ফরমুলেশন (আনুপাতিক হারে ভোট) একদিন জাতি মানবে।”
আনুপাতিক পদ্ধতি ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে উচ্চকক্ষে এগিয়ে রাখবে কি না জানতে চাইলে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা লোয়ার হাউজে বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বলেছি। উচ্চকক্ষের ক্ষেত্রে প্রোপরশনেট পদ্ধতিতে প্রতিনিধি নির্বাচনের কথা বলেছি। তাহলে সকলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।”
একই প্রশ্নে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিপপ চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সর্বশেষ দুটি নির্বাচনের ফলাফল সামনে আনেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এরপর ‘ইসলামিক র্যাডিকেলাইজেশন’ এর মাত্রা অনেক বেড়েছে। জামায়াত এক সময় ৫-৬ শতাংশের প্ল্যাটফর্ম ছিল। এখন সে অবস্থা নাই।”
অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরে জামায়াত সবচেয়ে সুসংহত হয়েছে মন্তব্য করে কলিম উল্লাহ বলেন, “প্রশাসন, শিক্ষাসহ সব খাতে তাদের বেশি লোক নিয়োগ হয়েছে। এরাই তো সামনের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে।”
প্রধান চারটি দলের মধ্যে জামায়াতকে সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল দল হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, এই দলটির কাছে থেকে অন্য ইসলামী দলগুলো শিখছে। এছাড়া ‘তুরস্কের এরদোয়ানের এ কে পার্টির আদলে ছাত্রদের নতুন দল’ হচ্ছে। সেটাও সামনের নির্বাচনে বাড়তি ভূমিকা রাখবে।
আনুপাতিক হারে নির্বাচন হলে সেটি ইসলামী দলগুলোকে বাড়তি সুবিধা দেবে কিনা এমন প্রশ্নে কলিম উল্লাহ বলেন, “ইসলামী আন্দোলন এর অন্যতম অ্যাডভোকেট। তারা আগে দক্ষিণ অঞ্চলের একটি দল ছিল। আওয়ামী লীগ আমলে সারা দেশেই তাদের প্রভাব বেড়েছে।
“তারা সংখ্যানুপাতিক ভোটের পক্ষে এখন জোরেশোরে প্রচার চালাবে। সংস্কার কমিশনগুলো মাত্র সুপারিশ দিল। এটা পরিবর্তনও করে ফেলতে পারে। নিম্নকক্ষেও এটি (আনুপাতিক পদ্ধতি) করে ফেলতে পারে।”