‘‘সাবিহসহ আমরা যারা ছাত্ররাজনীতি শুরু করেছিলাম, আমাদের একটা লক্ষ্য ছিল এই সমাজটাকে পরিবর্তন করব”, বলেন মির্জা ফখরুল।
Published : 02 Nov 2024, 07:57 PM
প্রয়াত সাবিহ উদ্দিন আহমেদকে ‘সত্যিকারের দেশপ্রেমিক’ ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন তার এককালের সহকর্মীসহ নানা পেশার মানুষ।
শনিবার বিকালে রাজধানীতে এক স্মরণ সভায় সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিকের বর্ণাঢ্য জীবন-কর্মও তুলে ধরেন অংশগ্রহণকারীরা।
রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারের কনফারেন্স হলে সাবিহ উদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে এই স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।
এতে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘সাবিহ উদ্দিন ছিলেন সত্যিকারের জাতীয়তাবাদী। দেশ ও জনগণের প্রশ্নে কোনো আপস ছিল না তার। তিনি ছিলেন আপসহীন।”
এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর মত দিয়ে তিনি বলেন, “সাবিহ অনন্য।”
পাকিস্তান শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়নে সম্পৃক্ত হওয়া সাবিহ উদ্দিন লেখাপড়া শেষে যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে। তিনি তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা ছিলেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার যোগাযোগ মন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর তথ্য কর্মকর্তা ছিলেন তিনি।
জিয়াউর রহমানের আমলে জ্বালানি মন্ত্রী আকবর হোসেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী সিরাজুল হোসেন খানের একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন সাবিহ।
১৯৯১ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলে তার একান্ত সচিব হন তিনি। সেই দায়িত্ব পালন শেষে আবার তথ্য ক্যাডারে ফিরে যান। ২০০১ সালে সাবিহ উদ্দিন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ওই বছরই তাকে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার করা হয়।
সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন। ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর ৭৬ বছর বয়সে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন সাবিহ উদ্দিন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘সাবিহসহ আমরা যারা ছাত্ররাজনীতি শুরু করেছিলাম, আমাদের একটা লক্ষ্য ছিল এই সমাজটাকে পরিবর্তন করব, আমরা বদলে দেব। সেটা সেই সময় সম্ভব হয়নি… সাবিহ চলে গেছেন সরকারি চাকরিতে.. সরকারি চাকরিতে গেলেও কখনো সেই লক্ষ্য থেকে সরে যায়নি।
“সাবিহ যেখানেই ছিল, সেখানেই দেশের জন্য কাজ করেছে, জনগণের জন্য কাজ করেছে। সবচেয়ে বেশি আমার মনে পড়ে যখন তিনি ম্যাডাম বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কাজ করেছেন। দেখেছি যে, তিনি সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করেছেন।”
শেখ হাসিনার শাসনামলে সাবিহ উদ্দিন নির্যাতিত হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘‘তার ওপরে প্রচণ্ড আক্রমণও হয়েছিল… রিয়াজ রহমান সাহেবের গুলি লেগেছিল, সাবিহ উদ্দিন আহমেদের গাড়িটা পুড়িয়ে দিয়েছিল আর আরেকজনের যেন কে, তার ওপরও আক্রমণ হয়েছিল। বহুবারই গ্রেপ্তার হওয়ার মুহূর্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে।
“তার চলে যাওয়াটা আমাদের জন্য কষ্টকর। আমরা যারা এক সাথে ছিলাম তাদের কাছে এটা বেদনার। আমরা ভাইয়ের মতই ছিলাম। অফুরন্ত প্রাণশক্তি ছিল তার। মনে হয়েছে টগবগ করছে সবসময় জীবনী শক্তি নিয়ে। কোনো কিছুতে ভেঙে পড়ার লোক ছিল না… লড়াই করেছে শেষ পর্যন্ত।”
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ বলেন, ‘‘সাবিহ শেষ দিন পর্যন্ত দেশের কথাটি ভেবেছেন, দশের কথাটি ভেবেছেন। বাংলাদেশে খুব মানুষই পাবেন যে, আপন স্বার্থ ভুলে দেশ ও জনগণের স্বার্থ নিয়ে কাজ করে। তিনি সব সময়ে এটা লালন করেছেন।”
সাবিহ উদ্দিনের কর্মজীবনের ওপরে আরও স্মৃতিচারণ করেন প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ইংরেজি দৈনিক দ্যা ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, সাবিহ উদ্দিন আহমেদের ছোট ভাই সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক, ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশার নাগরিকরা।
সাবিহ উদ্দিনের সহধর্মিনী রওনক আহমেদ, ছেলে সাইয়াব আহমেদ, বিএনপি মহাসচিবের সহধর্মিনী রাহাত আরা বেগমও ছিলেন এই স্মরণ সভায়।