“তুমি যাকে ইচ্ছা তুমি ভোট দাও, কিন্তু ভোট যাতে হয় এই ব্যবস্থাটা করতে হবে যে কোনো মূল্যে”, বলেন তিনি।
Published : 09 Nov 2024, 11:49 PM
দেশ, জনগণ ও জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে বলে সতর্ক করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে দেশ চালানোর দাবি জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া কোনে সরকারের পক্ষে ‘বাজার সিন্ডিকেট’ ভাঙা, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ বা স্বাস্থ্য শিক্ষার উন্নতি করা সম্ভব না বলেও মত দিয়েছেন তিনি।
শনিবার বিকালে বিএনপির সহযোগী সংগঠন কৃষক দলের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন বিএনপি নেতা।
তারেক রহমান বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হবে, এই বাজারে যে ‘সিন্ডিকেট’, তা ভাঙা সম্ভব হবে না। কারণ, এটিকে যদি ভাঙতে হয়, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হয়, তাহলে প্রকৃত জনপ্রতিনিধি দরকার, যারা মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। যেদিন এরকম একটি সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব হবে সেদিনই বাজার পরিস্থিতি অনেকাংশে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ করে নিয়ে আসা যাবে।
“ঠিক একইভাবে শিক্ষা বলেন, শিল্প বলেন, দেশের যে ব্যবস্থার কথা বলেন না কেন, সেটাকে যদি উন্নত করতে হয়, দুর্নীতিকে যদি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসতে হয়, স্বাস্থ্য, শিক্ষা যেটারই উন্নতি করতে চাই না কেন, জনগণের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।”
জনগণের কাছে জবাবদিহি করে এমন ব্যক্তিদেরকে সামনে আনতে না পারলে কোনোভাবেই কিছু করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা।
সংবিধান অনুসরণ ও সংরক্ষণের অঙ্গীকার করে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন প্রশ্নে কোনো সময়সীমার কথা বলছে না।
সংবিধানে উল্লেখ আছে, সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ভোট হতে হবে, দৈব দুর্বিপাকে সেটা করা না গেলে আরও ৯০ দিন অপেক্ষা করা যায়।
এরই মধ্যে ৯০ দিন পেরিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ একটি অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করেছে, যাতে সরকারের মেয়াদ অনির্দিষ্ট রাখার কথা উল্লেখ আছে।
এতে বলা আছে ত্রয়োদশ সংসদ গঠন এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের দিন পর্যন্ত থাকবে এই সরকারের মেয়াদ।
বিএনপি শুরুতে এই সরকারকে সমর্থন দিলেও এখন দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি করছে, সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে, সেটি নির্বাচিত সংসদ করবে, এমন কথাও বলছে।
তারেক রহমান যেদিন ঢাকায় এই বক্তব্য রাখেন, একই দিন চট্টগ্রামে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘অনির্বাচিতদের কোনো অধিকার নেই।’
আরও পড়ুন:
'অনির্বাচিতদের অধিকার নেই', নির্বাচন চান আমীর খসরু
চক্রান্ত চলছে দাবি করে তারেক রহমান বলেন, “দেশ, দেশের মানুষ এবং জাতীয়তাবাদী শক্তি, তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে নেই। সেটা আপনারা প্রতিনিয়তই পত্র-পত্রিকার বিভিন্ন নিউজের মাধ্যমে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে, বিভিন্ন টেলিফোনালাপেও কমবেশি জানতে পারছেন।
“জাতীয়তাবাদী শক্তির সকল নেতা-কর্মীদের বলব, ‘ষড়যন্ত্র যে থেমে নেই. এই কথাটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।”
ভোট যাতে হয়, এই ব্যবস্থা করতে হবে
বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে দেশের তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে কথা বলারও তাগিত দেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিটি ইউনিয়নে যাচ্ছেন, কৃষকদের সাথে কথা বলবেন, প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের সাথে কথা বলবেন; হয়ত একজন গৃহিণী, একজন ছোট দোকান কর্মচারী কিংবা মালিকের সাথে কথা বলবেন, এ রকম বহু শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলবেন।
“তাদের প্রত্যেককে একটি বার্তা দিতে হবে, ‘ভাই তুমি যে রাজনীতিতেই বিশ্বাস কর না কেন, একটি জায়গায় এসে দাঁড়াও। তুমি যাকে ইচ্ছা তুমি ভোট দাও’, কিন্তু ভোট যাতে হয় এই ব্যবস্থাটা করতে হবে যে কোনো মূল্যে।”
নির্বাচন নিরপেক্ষ হতে হবে মন্তব্য করে তারেক বলেন, “এটার সাথে কোনো আপস নাই। যদি এটি নিশ্চিত করা যায়, ধীরে ধীরে আমরা দেশের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
“তোমার যাকে ইচ্ছা তুমি ভোট দাও, আমাকেও দেওয়ার দরকার নাই, তোমার বুদ্ধি বিবেক, জ্ঞান দিয়ে তাকে ভোট দাও। কিন্তু ভোট হতে হবে সকাল-বিকাল। যাকে খুশি আমি ভোট দেব, নিশ্চিন্তে-নিরাপদে ভোট দেব, এটার সাথে কোনো আপস নাই, এই মেসেজটা আপনাদের নিয়ে যেতে হবে।”
ওই নির্বাচন ‘ডামি’ হবে না, ‘নিশিরাতের’ হতে পারবে না, দিনের আলোতে হতে হব, নিরাপদে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে, বলেন তিনি।
ক্ষমতায় গেলে আবার খাল খনন
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কৃষকদের স্বার্থে আবার খাল খনন কর্মসূচি শুরু করবে বলেও ঘোষণা দেন তারেক রহমান।
“এটি আমাদের শুরু করতে হবে কৃষকের পানির সুবিধার কারণে, রিজার্ভ ওয়াটারের কারণে।…পানির স্তর নিচে নেমে গেছে, এটাও কিন্তু আমাদের বিপদের কারণ।”
এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যেখানে একটি ফসল হত, সেখানে পানির কারণে দুইটি হয়েছিল, দুইটি ফসলের জায়গায় তিনটি ফসল হয়েছিল।”
কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কৃষক দল নেতা শহিদুল ইসলাম বাবুল, মোশারফ হোসেনও বক্তব্য রাখেন।