Published : 06 May 2025, 10:47 AM
লন্ডনে চার মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে তাকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি বিমানবন্দর থেকে বাসার পথে রওনা হয়েছে। গাড়িতে সামনের আসনে তাকে বসতে দেখা গেছে।
বিমানবন্দরে বিএনপি চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান।
নানা স্লোগান দিয়ে নেত্রীকে বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ পর্যন্ত বরণ করছেন নেতাকর্মীরা। ‘খালেদা জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘খালেদা, জিয়া’, ‘তারেক, রহমান’, ‘খালেদা জিয়া ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন তারা।
গত জানুয়ারিতে যেভাবে লন্ডনে গিয়েছিলেন, সেভাবেই কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে খালেদা জিয়া দেশে এলেন। তার সঙ্গে এসেছেন দুই পুত্রবধূ- তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান সিঁথি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরও এসেছেন তার মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদসহ ১৪ জন।
এদিন ভোরের আলো ফোটার পর থেকেই থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিমানবন্দর সড়কে জড়ো হতে শুরু করেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বনানী, খিলক্ষেত, বিমানবন্দরে অবস্থান নেন।
তারা পিকআপ কিংবা বাসে করে গান বাজাতে-বাজাতে দলের পতাকা, দেশের পতাকা নিয়ে উপস্থিত হন সড়কে। কেউ-কেউ মাথায় দলের পতাকা লাগিয়ে এসেছেন।
নেতাকর্মীদের অবস্থান ঘিরে সড়কে ও বিমানবন্দর এলাকায় বিপুল সংখ্যক সেনা সদস্য, পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন ও আনসার সদস্যকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
এর আগে সকাল সোয়া ৯টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিমানবন্দরের সামনে বলেন, “খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে সহজ করবে। আজ দেশের জন্য ও জনগণের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য দিন।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরা ঘিরে ঢাকার সড়কে যানজট হতে পারে–এমন শঙ্কায় বিদেশগামী যাত্রীদের বিমানবন্দরে যেতে হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ করেছে এয়ারলাইন্সগুলো। বিমানবন্দর এলাকায় নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা।
খালেদা জিয়ার জন্য গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে তার বাসভবন ‘ফিরোজা’ পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিমানবন্দর থেকে তার গুলশানের বাসায় যাওয়ার পথে তাকে অভ্যর্থনা জানানোর পথনকশা ঠিক করে দলীয় নেতাকর্মীদের সে অনুযায়ী অবস্থানের নির্দেশ দিয়ে রেখেছে বিএনপি।
খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা উপলক্ষে নেতাকর্মীদের ভিড় সামলাতে ঢাকা মহানগর পুলিশও বিমানবন্দর সড়কে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করার কথা জানিয়েছে।
জনসাধারণকে এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গুলশান/বনানী থেকে উত্তরা পর্যন্ত সড়ক যথাসম্ভব পরিহার করে বিকল্প রাস্তায় চলাচলের অনুরোধ করা হয়েছে পুলিশের তরফ থেকে।
ওই সময়ে বিএনপিকর্মীদের রাস্তায় না থেকে ফুটপাতে অবস্থান করতে এবং প্রয়োজনীয় স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার অনুরোধ করা হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ রাখা হয়েছে। ঢাকা সেনানিবাসের রাস্তায় চলতে পারছে হালকা যানবাহন।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় বহরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে গত ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান।
সেখানে লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। টানা ১৭ দিন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন।
দেশে ফেরার জন্য সোমবার দুপুরে খালেদা জিয়া লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন। তার বড় ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই গাড়ি চালিয়ে মাকে বিমানবন্দরে নিয়ে যান। তারেকের মেয়ে জায়মা রহমানও গাড়িতে ছিলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদায় জানাতে দলটির প্রবাসী নেতাকর্মীরাও হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিড় করেন। বিদায় বেলায় টার্মিনালে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। হুইল চেয়ারে বসা খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে ধরেন ছেলে তারেক ও নাতনি জায়মা।
২০০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে দেশ ছাড়ার পর থেকে লন্ডনেই আছেন তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান। ১৭ বছর পর শাশুড়ির সঙ্গে দেশে ফিরলেন জোবাইদা; তবে তারেক কবে ফিরতে পারবেন- তা এখনো নিশ্চিত নয়।
তাকে দেখিয়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত বিএনপিকর্মীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, “ভাইয়াকে দেখে রেখো।”
স্থানীয় সময় সোমবার বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স খালেদা জিয়াকে নিয়ে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর ত্যাগ করে।