“বিশ্বের কোথাও অপ্রীতিকর কিছু ঘটলেই ছাত্রদলের নাম জড়ানোর একটা প্রবণতা আমরা লক্ষ করছি”, বলেন রাকিব।
Published : 07 Mar 2025, 08:13 PM
সারজিস আলমের সঙ্গে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যে বিরোধ, তা জাতীয় নাগরিক পার্টি ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংদের কোন্দল থেকে তৈরি বলে দাবি করেছে ছাত্রদল।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, সেখানে সারজিস আলমের সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কোনো বিরোধ হয়নি।
“এ ঘটনায় সারজিস আলম উদ্দেশ্যেমূলকভাবে ছাত্রদলের ওপর দায় চাপিয়েছেন।”
তিনি বলেন, “গত ৫ মার্চ সারজিস আলমের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
“বিশ্বের কোথাও অপ্রীতিকর কিছু ঘটলেই ছাত্রদলের নাম জড়ানোর একটা প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করছি। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, “সারজিস আলমের সঙ্গে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিরোধের সূত্রপাত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংদের ঢাবি বনাম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান কোন্দল থেকে।
“কিন্তু দুঃখজনকভাবে সারজিস আলম এ ঘটনাকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার জন্য ছাত্রদলকে দায়ী করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। তার দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত।”
গত বুধবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হামলায় আহত হওয়ার অভিযোগ নিয়ে থানায় যান সারজিসের অনুসারীরা।
এ ঘটনায় হামলাকারীদের ছাত্রদলের নেতাকর্মী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। হামলায় অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগই অছাত্র বলে তার ভাষ্য।
এ ঘটনার একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, সারজিস আলম তার অনুসারীদের নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি সড়কে কথা বলার সময় দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে ধাক্কা-পাল্টা ধাক্কা ও হাতাহাতি শুরু হয়।
রাত ১০টার দিকে তারা যেখানে বিতণ্ডায় জড়ান, তা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছেই।
এ ঘটনায় নিজেদের অবস্থান জানাতে শুক্রবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকে ছাত্রদল।
সেখানে সভাপতি রাকিব বলেন, “সারজিস আলম তার পোস্টে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী, দুস্কৃতিকারী ও টোকাই হিসেবে মন্তব্য করে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অপমান করেছেন।
“আমরা তার এই ঔদ্ধত্য ও বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। সারজিস আলমের বক্তব্যে জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন ত্যাগের মর্যাদাহানি হয়েছে। আমরা এই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।”
সিল হবে
‘নিষিদ্ধ দলের নেতাকর্মীদের পূনর্বাসন করছে’
রাকিবুল ইসলাম বলেন, “নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সারজিস আলমের সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কোনো বিরোধ হয়নি। এই ঘটনায় সারজিস আলম উদ্দেশ্যেমূলকভাবে ছাত্রদলের ওপর দায় চাপিয়েছে।
“ওই দিনের ঘটনায় সারজিস আলমের শোডাউনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং জুলাই-অগাস্টের গণহত্যার আসামিদের দেখা গেছে। এভাবেই ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি ও তার ছাত্র সংগঠনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পূনর্বাসন হচ্ছে। আমরা নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনের নিন্দা জানাচ্ছি।”
‘ছাত্রদলের সম্পৃক্ততা নেই’
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, “সেদিন ছা্ত্রদলের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল না। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলেও ছিলেন না।
“সেখানে সারজিস আলমের ওই ঘটনার সঙ্গে কোনো ছাত্র দলের নেতাকর্মী উপস্থিতি ছিল কিনা, আমরা তা পর্যালোচনা করে দেখছি। তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ চলছে। ছাত্রদলের কারো ন্যুনতম সংশ্লিষ্টতা থাকলে আন্তরিকভাবে আমরা দূঃখপ্রকাশ করছি। একই সঙ্গে নর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার দায় ছাত্রদলের ওপর জড়ানোর কৌশলের বিরুদ্ধে আমরা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
‘ভিন্ন মতলব আছে’
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির বলেন, “আমরা যেটি স্পষ্ট বলতে চাই, সেটি হচ্ছে, সারজিস আলমের সঙ্গে ছাত্রদলের প্রত্যেক নেতাকর্মীর সুসম্পর্ক রয়েছে; তাদের নিবিড় যোগাযোগ হয়।
“নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে রাত ১০টার সময়, সে সময় মানুষ নামাজে ছিলেন। ওই সময় সারজিস আলম সেখানে কেন গিয়েছিলেন?”
নাসির বলেন, “আমরা মনে করছি, উনার ভিন্ন মতলব থাকতে পারে। দ্বিতীয়টি হলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উনার ঝামেলা হয়েছে। এখানে ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মী কোনোভাবে জড়িত নয়।”
সংবাদ সম্মেলনে একজনের প্রশ্নের জবাবে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, “এটি সত্যি দুঃখজনক। সারজিস আলম বলেন আর হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, কিংবা আরও দু-একজন, যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছোটখাটো ঘটনাতেও ছাত্রদলের নাম জড়ায়।
“আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন, আমরা খুব ইতিবাচক রাজনীতি করছি সবগুলো ক্যাম্পাসে। এ কারণে প্রতিটি ক্যাম্পাসে বিপুল সাধারণ শিক্ষার্থীকে ছাত্রদলের পতাকাতলে দেখা যাচ্ছে।”
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের অন্য নেতাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন
হামলা নিয়ে থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, সারজিস দুষলেন ছাত্রদলকে