আইনমন্ত্রী বলছেন, “এ ব্যাপারে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই শুধু মেয়াদ বাড়ানো ছাড়া।”
Published : 20 Mar 2024, 01:38 PM
দুর্নীতিতে দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে তার সাময়িক মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ছে, তবে চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার আবেদনে এবারও সায় দেয়নি সরকার।
আগের মতই ঢাকার বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার এবং বিদেশে না যাওয়ার শর্তে সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। এখন পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা সেরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বুধবার সচিবালয়ের সাংবাদিকদের বলেন, শর্ত সাপেক্ষে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তার মেয়াদ এ পর্যন্ত সাতবার বাড়ানো হয়েছে।
"আবারো একই শর্তে তার সাজা স্থগিত রেখে তার মুক্তির আদেশ আরো ছয় মাসের জন্য বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এই মতামত দিয়ে ফাইলটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।”
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর।
এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর। তিনি তখনও পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। ওই বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন খালেদা। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।
এর পর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। প্রতিবারই তাকে দুটি শর্ত দেওয়া হচ্ছে। তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।
ওই শর্তে সবশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয় খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির মেয়াদ। তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের তরফ থেকে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হলেও ওই শর্তের যুক্তি দিয়েই বার বার তা প্রত্যাখ্যান করা হয়।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস ও হৃদরোগে ভুগছেন। সাময়িক মুক্তির পর তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড গতবছর অক্টোবরে জানায়, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভারের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। দ্রুত ‘বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে’ তার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।
কিন্তু সরকার তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি না দেওয়ায় বিদেশ থেকে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ঢাকায় এনে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার লিভারে ট্রান্সজুগলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোরটোসিসটেমিক সান্ট (টিপস) সম্পন্ন করা হয়।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সাময়িক মুক্তির মেয়াদ আগামী ২৫ মার্চ শেষ হতে চলায় তাকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। সেই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মতামতের জন্য পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে।
আইন মন্ত্রণালয় মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে মতামত দিলেও বিদেশে যাওয়ার অনুমতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি জানিয়ে আনিসুল হক বুধবার বলেন, “ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার বিষয়টি আগেই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই শুধু মেয়াদ বাড়ানো ছাড়া।
“আমি সেটাই করেছি, মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলে সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠিয়েছি।"
খালেদা জিয়াকে যে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না, সেটা গত সোমবারই স্পষ্ট করেছিলেন আইনমন্ত্রী। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “মেয়াদ বৃদ্ধি করার আইনি সুযোগ আছে, কিন্তু বিদেশে যাওয়ার অনুমতি বা অন্য কিছু করার আইনি সুযোগ নাই।”
সরকারপ্রধান চাইলে খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে কিনা জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেছিলেন, “সরকারপ্রধান মানে হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি যেহেতু এটা নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন, এখন এটা পরিবর্তন করার আইনি কোনো বিধান নেই।
“সরকার প্রধানকে আইনের ভেতরে থেকে মানবিক বিবেচনা করতে হবে। আইনের বাইরে গিয়ে তিনি মানবিক কারণ দেখাতে পারবেন না। তিনি তার মানবিক কারণ কিন্তু প্রথম বারেই দেখিয়েছেন এবং এই যে বার বার রিনিউ হচ্ছে সেটা মানবিক কারণ থেকেই হচ্ছে।”