মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় তাহেরের নাম যুক্ত করা ‘বোকামি’: জাসদ

এতে প্রকৃত খুনিরা আড়ালে থেকে যাবে বলে মনে করছে দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2023, 04:40 PM
Updated : 12 May 2023, 04:40 PM

পঁচাত্তরে তিন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় প্রায় পাঁচ দশক বাদে যে মামলা হয়েছে, তাতে কর্নেল তাহেরের নাম যুক্ত করাকে ‘বোকামি’ বলছে তার দল জাসদ।

দলের বর্তমান নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এই ‘বোকামির’ ফলে প্রকৃত খুনিরা সুবিধা পাবে।

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্যে ৭ নভেম্বর পরবর্তী সশস্ত্র বাহিনীর অভ্যন্তরে ‘উচ্ছৃঙ্খল অফিসারদের’ সংঘঠিত হত্যা-খুন-গুমের ঘটনার‘ প্রকৃত তথ্য উন্মোচনে জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠন ও শ্বেতপত্র প্রকাশেরও দাবি জানিয়েছে জাসদ।

শুক্রবার দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার এই দাবি জানান বলে দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনের সই করা এক বিবৃতিতে বলা হয়।

সেখানে বলা হয়, হুদা-হায়দার-খালেদ হত্যা মামলায় কর্নেল তাহেরের নাম যুক্ত করায় ‘প্রকৃত ঘটনা আড়ালে’ থেকে যাবে, যা প্রকৃত খুনিদের জন্য সুবিধা তৈরি করে দেবে।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ ক্ষমতায় বসলেও চলছিল অস্থিরতা। এর মধ্যেই ৩ নভেম্বর সেনা কর্মকর্তা খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান হয়, গৃহবন্দি করা হয় তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে।

৭ নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থান হয় জাসদ নেতা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে। তখন মুক্ত হন জিয়া; নিহত হন মুক্তিযুদ্ধের দুই সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর উত্তম এবং সাব সেক্টর কমান্ডার কর্নেল নাজমুল হুদা বীর বিক্রম।

কঠিন সেই সময়ে বৈরী পরিবেশে বেড়ে ওঠা নাজমুল হুদার মেয়ে নাহিদ ইজাহার বাবার হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ৪৮ বছর পর একটি মামলা করেছেন।

বুধবার ঢাকার শেরে বাংলা নগর থানার দায়ের করা মামলার এজাহারে তিনি বলেছেন, সেই সময়ের সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান এবং জাসদ নেতা কর্নেল আবু তাহের বীর বিক্রমের নির্দেশে তিন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়।

জাসদ নেতারা বলছেন, বাবার হত্যার বিচার চেয়ে নাহিদের মামলা দায়েরের পদক্ষেপকে তারা স্বাগত জানান। ন্যায়বিচারের স্বার্থেই ৭ নভেম্বর পরবর্তীতে সশস্ত্র বাহিনীর অভ্যন্তরে উশৃঙ্খল অফিসারদের দ্বারা সংঘঠিত সকল হত্যা-খুন-গুমের ঘটনার তদন্ত ও বিচার হওয়া জরুরি।

Also Read: খালেদ মোশাররফসহ তিন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা হত্যায় ৪৮ বছর পর মামলা

Also Read: কারা কেন সেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল, সত্য বেরিয়ে আসুক: কর্নেল নাজমুল হুদার মেয়ে

এর ব্যাখ্যায় তারা বলেন, নাহিদ ইজাহারের মামলায় তার বাবাসহ তিন সেনা কর্মকর্তা হত্যায় মেজর আব্দুল জলিল, মেজর আসাদ উজ্জামান, কর্নেল সিরাজ, মেজর মুক্তাদিরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা সবাই তখন অফিসার ছিলেন; জেসিও বা এনসিও নন। তারা কেউই তখন সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তাহেরের অধীনস্থ কোনো কমান্ডে ছিলেন না।

৭ নভেম্বর ‘সশস্ত্র বাহিনীর উশৃঙ্খল অফিসারদের বিশৃঙ্খল উন্মত্ততার বিরুদ্ধে সিপাহীদের রক্তপাতহীন, মানবিক ও সুশৃঙ্খল প্রতিবাদ’ ছিল বলে মন্তব্য করা হয় বিবৃতিতে।

জাসদের বিবৃতিতে বলা হয়, সিপাহী বিদ্রোহ হয়েছে ৬ নভেম্বর দিবাগত রাতে। অর্থাৎ ৭ নভেম্বরের প্রথম প্রহরে রাত ১টায়। এরপরই বিদ্রোহী সিপাহীরা কর্নেল তাহেরকে ক্যান্টনমেন্টে টু ফিল্ড আর্টিলারি হেড কোয়ার্টারে নিয়ে যান। কর্নেল তাহের সেখানে রাত ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অবস্থান করেন এবং বন্দিদশা থেকে মুক্ত জিয়াকে পরদিন সকালে শহীদ মিনারে নিয়ে গিয়ে বিদ্রোহী সিপাহীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ করে এলিফ্যান্ট রোডে নিজ বাসভবনে চলে আসেন।

“৭ নভেম্বর সকালে যখন হুদা-হায়দার-খালেদকে হত্যা করা হয়, টু ফিল্ড অর্টিলারি তখন জিয়া ও মীর শওকতের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বে তাদেরই অনুসারীদের দখলে ছিল।"

জাসদ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ন্যায় বিচারের স্বার্থেই ১৫ অগাস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা, ৩ নভেম্বর জেল খানায় চার জাতীয় নেতাকে হত্যা ও ৭ নভেম্বর হুদা-হায়দার-খালেদ হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া জরুরি।

“৭ নভেম্বর পরবর্তীতে সশস্ত্র বাহিনীর অভ্যন্তরে উচ্ছৃঙ্খল অফিসারদের দ্বারা সংঘঠিত সকল হত্যা-খুন-গুমের ঘটনার প্রকৃত তথ্য জাতির সামনে উন্মোচন করার জন্য জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠন ও স্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “এসব তথ্য ও সত্য উদঘাটিত, উন্মোচিত, প্রকাশিত হবার পরও এ মামলায় কর্নেল তাহেরকে হুকুমের আসামি হিসাবে উল্লেখ করা বোকামি। এতে কর্নেল তাহেরের নাম মামলায় যুক্ত করার ফলে প্রকৃত ঘটনা, তথ্য, সত্য আড়াল হবে; প্রকৃত খুনীরা সুবিধা পাবে।”

সংসদ সদস্য হিসাবে জাতীয় সংসদেও তারা একই দাবি উত্থাপন করেছেন ‍বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।