“৫৩ বছর আমরা স্বাধীনতা নিয়ে টিকে আছি। কোথায় যাবে (স্বাধীনতা)? ভারত আমাদের বন্ধু”, বলেন আওয়ামী লীগ নেতা
Published : 01 Jul 2024, 07:42 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সই হওয়া ১০ সমঝোতায় দেশের ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব দুর্বল হয়ে যাবে’ বলে বিএনপির পক্ষ থেকে যে বক্তব্য এসেছে তাকে কটাক্ষ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, “৫৩ বছর ধরেই স্বাধীনতা নিয়ে টিকে আছে বাংলাদেশ।”
দলের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনের অংশ হিসেবে সোমবার বিকালে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে সামনে এক সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতা এসব কথা বলেন।
বিএনপির বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে কাদের বলেন, “গেল রে গেল, সব নাকি ইন্ডিয়া হয়ে গেল। গেল রে গেল, স্বাধীনতা গেল; গেল রে গেল সার্বভৌমত্ব গেল। কোথায় গেল? ৫৩ বছর আমরা স্বাধীনতা নিয়ে টিকে আছি। কোথায় যাবে (স্বাধীনতা)? ভারত আমাদের বন্ধু।”
বঙ্গবন্ধু ভারতের সঙ্গে ২৫ বছরের মৈত্রী চুক্তি করে গিয়েছেন বলেই আজকে ৬৮ বছরের সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয় বলেও মন্তব্য করেন কাদের।
তিনি বলেন, “আরেকটা বাংলাদেশের সমান সমুদ্র সীমা আমরা ভারতের কাছ থেকে আদায় করতে পেরেছি, শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময় হয়েছে।”
‘ফখরুল কি পড়াশোনা করেন না?’
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে এবার কোনো চুক্তি হয়নি জানিয়ে কাদের বলেন, “মির্জা ফখরুল সাহেব, সমঝোতা স্মারক আর চুক্তি, এই দুইটা কি এক? পড়াশোনা করেন না? ডিপ্লোম্যাসি ভাষা জানেন না? জেনে নেন, সমঝোতা স্মারক আর চুক্তি এক কথা নয়।”
বিএনপিও ভারতের দাসত্ব চেয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মনে আছে, নরেন্দ্র মোদী যখন ক্ষমতায় আসেন, প্রথম দিন সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে বিএনপি নেতারা ভারতের হাইকমিশনের সামনে হাজির। হাইকমিশন বন্ধ, মিষ্টি আর ফুল নিয়ে হাজির। এই হচ্ছে বিএনপি।”
“এরা ভারত বিরোধিতা করে কিন্তু ভারতের কাছে ওয়াশিংটনের ইচ্ছায় গ্যাস বিক্রি করার অঙ্গীকার করে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেছে।”
‘তিস্তার কথা বলেন, আপনারা তো ভুলে যান’
৯০ দশকে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তার ভারত সফরের কথাও ফখরুলকে স্মরণ করান আওয়ামী লীগ নেতা।
তিনি বলেন, “ওই যে ফিরে এলেন ঢাকা বিমানবন্দরে, সাংবাদিকেরা জিজ্ঞেস করল, ‘গঙ্গা চুক্তির কী হল? খালেদা জিয়া কি বলল, ‘আরে আমি তো গঙ্গা চুক্তির কথা বলতে ভুলেই গেছি।’ আপনারা সব কিছুই ভুলে যান।"
তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি নিয়ে আলোচনা অনেক দূর অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে কাদের বলেন, "ভারতের নতুন সরকার আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন, যেসব সমস্যা বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলোর ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে এবং সমাধানের জন্য ইতিবাচক চেষ্টা আছে।
“ভারত একটি ফেডারেল দেশ। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছা করলে রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা পানি অন্য দেশকে দিতে পারে না। এটা ভারতের সংবিধানে লেখা আছে। এর আগে গঙ্গার পানি দিতে পশ্চিমবঙ্গের জ্যোতি বসু সরকারের সম্মতি ছিল বলেই আমরা বুঝে পেয়েছি।"
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সরকারই তিস্তার পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে ‘মূল সমস্যা’ উল্লেখ করে কাদের বলেন, "যখন শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছিল, তখনই গর্জে উঠেছেন মমতা। কলকাতা থেকে বলেছেন, ‘কোনোদিনও বাংলাদেশকে এই পানি দেব না।
"এখন যদি মমতা ‘না’ বলেন, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজি করাতে হবে। তাকে ‘হ্যাঁ’ করাতে হবে।"
বিএনপিতে ‘অশান্তির আগুন’
বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আবার আন্দোলনের হুমকি দিলেও দলটি নিজেরাই স্বস্তিতে নেই বলেও দাবি করেন কাদের। বলেন, “বিএনপির চোখে ঘুম নেই, ঘুম হারাম হয়ে গেছে।’
মির্জা ফখরুলের চোখে ‘অশান্তির আগুন’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে কখন? তারা নিজেরা নিজেদেরকে বিশ্বাস করে না।
“কেউ কাউকে পছন্দ করে না, বলে ‘সরকারের এজেন্ট’। একেকজন আরেকজনকে বলে সরকারের এজেন্ট। তাদের আন্দোলন ভুয়া।"
কর্মদিবসে সমাবেশে তীব্র যানজট
তেজগাঁও সাতরাস্তার কাছে একটি পার্শ্ব রাস্তায় এই সমাবেশে যোগ দিতে দুপুরের পর বিভিন্ন থানা ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের খণ্ড খণ্ড মিছিল আসতে থাকে।
বাসে ও ট্রাকে করেও নেতাকর্মীরা আসেন। তাদের বহনকারী গাড়িগুলো সড়কের ধারে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এতে মগবাজার থেকে মহাখালী সড়কের দুই পাশেই তীব্র যানজট তৈরি হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সঞ্চালনা করছেন সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি।