যাদের সাহসী নেতৃত্বে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ পেয়েছিল, তাদের মধ্যে শফী আহমেদ উজ্জ্বল এক নাম।
Published : 03 Jun 2024, 08:53 PM
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, জাসদ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফী আহমেদ মারা গেছেন।
সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ঢাকার উত্তরার একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সম্ভবত ঘুমের মধ্যেই শফী আহমেদের মৃত্যু হয়েছে। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।”
শফী আহমেদ ১৯৮৯-৯১ মেয়াদে জাসদ ছাত্রলীগের যে কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, সেই কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন জাসদের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহিল কাইয়ুম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আজ দুপুরে উত্তরার বাসায় খাওয়া দাওয়ার পর নিজের ঘরে ঘুমাতে যান উনি। বিকালে ভাবি ডাকতে গিয়ে সাড়াশব্দ না পেয়ে দেখেন নিথর হয়ে আছেন। ধারণা করা হচ্ছে উনি ঘুমের মধ্যেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।”
যাদের সাহসী নেতৃত্বে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ পেয়েছিল, তাদের মধ্যে শফী আহমেদ উজ্জ্বল এক নাম। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র, সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্যতম শীর্ষ নেতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এরশাদবিরোধী আন্দোলনকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে পুরো আশির দশক জুড়েই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন শফী আহমেদ। শেষ সময়ে এসে জেনারেল এরশাদ বেপোরোয়া হয়ে উঠেছিলেন, তার `এজেন্টরা' গণতন্ত্রের আন্দোলনকে লাইনচ্যুত করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিল। সেসব চক্রান্ত যারা নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন, শফী আহমেদ তাদের একজন।
এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার নেতৃত্ব তিনি দিয়েছিলেন, যেগুলো ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে স্বৈরাচার এরশাদের চূড়ান্ত পতনের পথ তৈরি করেছিল।
শফী আহমেদ জাসদ থেকে পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। দলের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ–কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।
২০০৭ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনে নেত্রকোণা–৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন শফী আহমেদ। কিন্তু সেবার আর নির্বাচন হয়নি।
এরপর গত চারটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পাননি শফী আহমেদ। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন শফী আহমেদ। কিন্তু তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়।
শফী আহমেদের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে তার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
এই রাজনীতিবিদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার মদন উপজেলার মাখনা গ্রামে। নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়ায় তার বাসা। তার স্ত্রী তাহেরা খন্দকার বাংলাদেশ বিমানের একজন মহাব্যবস্থাপক। তাদের দুই ছেলে কানাডা ও ইংল্যান্ডে থাকেন।
জাসদের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে শফী আহমেদের জানাজা হবে।
এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাবেক এই ছাত্রনেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে বলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রচার সম্পাদক মীর মাসরুরজামান রনি জানান।
শফী আহমেদের শ্যালক খন্দকার আদিল ইফতেখার দীপ্ত বলেন, মঙ্গলবার নেত্রকোণায় গ্রামের বাড়িতে তার দুলাভাইকে দাফন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।