চূড়ান্ত বহিষ্কারের আগে লতিফকে আ. লীগের নোটিস

হজ নিয়ে মন্তব্যের পর মন্ত্রিত্ব ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর পদ হারানো আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে কেন আওয়ামী লীগ থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে না- তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শাও নোটিস পাঠানো হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2014, 05:48 AM
Updated : 14 Oct 2014, 12:53 PM

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর জিগাতলা পোস্ট অফিস থেকে রেজিস্ট্রি ডাকে লতিফ সিদ্দিকীর টাঙ্গাইলের কালিহাতির স্থায়ী ঠিকানায় ওই নোটিস পাঠানো হয়।

হজবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার কেন চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে। সাত দিনের মধ্যে লতিফকে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় কলকাতায় অবস্থানরত লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, “নোটিস হাতে পেলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমি আমার জবাব দেব।”

আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দলের সভাপতি মণ্ডলীর পদ থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও ওই নোটিসে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রবাসে এক অনুষ্ঠানে হজ নিয়ে মন্তব্য করার পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘স্পষ্টভাষী ও আত্মম্ভরী’ হিসেবে পরিচিত ৭৭ বছর বয়সী লতিফকে নিয়ে বাংলাদেশে চলছিল তুমুল আলোচনা।

এরপর বিভিন্ন জেলায় এই রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা হয়; তার বিচার চেয়ে আন্দোলনের হুমকি দেয় বিভিন্ন ইসলামী দল ও বিএনপি। এমনকি নিজের দলেও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে নির্বাচিত চার বারের এই সংসদ সদস্য।

তারই ধারাবাহিকতায় গত রোববার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের প্রজ্ঞাপন জারি এবং দলের সভাপতিমণ্ডলীর পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত হয়।

আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা লতিফ ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকারে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে পাঁচ বছর তা পালন করেন। এবার পেয়েছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। কিন্তু এক বছর না পেরোতেই তাকে বিদায় নিতে হয়।

আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, গত রোববার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্তের আলোকেই লতিফ সিদ্দিকীকে নোটিস পাঠানো হয়েছে, যাতে সই করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। 

সংগঠনের আদর্শ ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে লতিফকে কারণ দর্শানোর এই নোটিস দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই নেতা।

নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের অনুষ্ঠানে হজ নিয়ে যে বক্তব্য লতিফ সিদ্দিকী দিয়েছিলেন তা উল্লেখ করে নোটিসে বলা হয়, “আপনার এ বক্তব্য কেবল গর্হিত ও অনভিপ্রেতই নয়, বাংলাদেশ ও মুসলিম উম্মাহর প্রতি আঘাত স্বরূপ। তা আওয়ামী লীগের নীতিবিরোধী এবং আদর্শ ও গঠনতন্ত্রের সুস্পষ্ট লংঘন।”

লতিফকে সভাপতিমণ্ডলীর পদ থেকে বাদ দেওয়ারে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৬ ‘ক’ অনুচ্ছেদের উল্লেখ করা হয়েছে।

ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “কোনো সদস্য আওয়ামী লীগের আদর্শ, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, গঠনতন্ত্র ও নিয়মাবলি বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের পরিপন্থি কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করিলে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কাউন্সিল, কার্যনির্বাহী সংসদ, সংসদীয় বোর্ড বা সংসদীয় পার্টির বিরুদ্ধে কোনো কাজ করিলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ তাহার বিরুদ্ধে যে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।”

গঠনতন্ত্রের ৪৬ ‘ঞ’ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “সংগঠনের যে কোনো শাখা তাহার যে কোনো কর্মকর্তা বা সদস্যকে দলের স্বার্থ, আদর্শ, শৃঙ্খলা তথা গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের জন্য স্ব-স্ব পদ বা দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবে। তবে এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন শাখার অনুমোদন প্রয়োজন হইবে এবং এইক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শাখার সাধারণ সভায় দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হইবে। ঊর্ধ্বতন শাখা পরববর্তী ১ মাসের মধ্যে তাহার সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট শাখাকে জানাইবে, অন্যথায় সিদ্ধান্তের সহিত একমত বলিয়া গণ্য হইবে।”

এই অনুচ্ছেদ অনুসারেই লতিফ সিদ্দিকীর প্রাথমিক সদস্য পদ স্থগিত করে তাকে কারণ দর্শাও নোটিস দেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের ওই জ্যেষ্ঠ নেতা জানান। 

লতিফকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, যেহতু তিনি ‘স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞাণে স্বপ্রণোদিতভাবে সাংগঠনিক গঠনতন্ত্র লংঘন করেছেন’ সেহতু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে গভীর নিন্দা জানানো হয়েছে।

কলকাতায় অবস্থান করা লতিফ সিদ্দিকী সোমবার টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ভারত প্রতিনিধিকে বলেন, তিনি দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন, এখনই ফিরে আরো বিব্রতকর অবস্থার দিকে ঠেলে দিতে চান না।

তার হয়ে ছোট ভাই আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই ব্যাটাকে আমার পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার কে (অধিকার) দিল?  আমি তো তাকে এই দায়িত্ব দেই নাই যে আমার পক্ষে ক্ষমা চাও।”

গত শনিবার রাজধানীতে নিজের দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে এর সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, “মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করেছেন তিনি। সেজন্য ছোট ভাই হিসেবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে বলছি, দয়া করে আমার বড় ভাইকে আপনি ক্ষমা করুন।”

২৪ অক্টোবর সভা

আগামী ২৪ অক্টোবর কার্যনির্বাহী সংসদের পরবর্তী সভা ডেকেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

দলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গণভবনে অনুষ্ঠেয় এ সভায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন।