দলীয় পদও হারালেন লতিফ সিদ্দিকী

হজ নিয়ে মন্তব্যের জন্য মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী থেকেও বাদ পড়েছেন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2014, 03:50 PM
Updated : 13 Oct 2014, 04:01 AM

রোববার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তাকে সভাপতিমণ্ডলী থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয় বলে সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

গণভবনে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই বৈঠকে প্রবীণ এই নেতার প্রাথমিক সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিতের সিদ্ধান্তও নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

আশরাফ বলেন, এখন লতিফ সিদ্দিকীকে একটি কারণ দর্শাও নোটিস পাঠানো হবে। তার জবাব দেখে এই বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গণভবনে বৈঠকে বসে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কমিটি।

বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, হজ নিয়ে ‘গর্হিত’ মন্তব্যের জন্য লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিতে ‘বাধ্য’ হয়েছেন তিনি।

এরপর রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর বৈঠক সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ।

তিনি বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র, আদর্শ ও ঘোষণাপত্রের পরিপন্থি কাজ করার জন্য লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে সর্বসম্মতভাবে দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে।

“এর একটি হচ্ছে, তাকে প্রেসিডিয়াম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলে তার প্রাথমিক সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। কেন তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চেয়ে শো-কজ নোটিস দেওয়া হবে।”

কবে ওই নোটিস পাঠানো হবে- জানতে চাইলে আশরাফ বলেন, “কালই পাঠানো হবে।”

ওই নোটিসে কত দিনের মধ্যে লতিফ সিদ্দিকীকে জবাব দিতে সময় দেওয়া হবে- জানতে চাইলে এক্ষেত্রে দলের গঠনতন্ত্র অনুসরণ করার কথা বলেন তিনি।

বৈঠকে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের এক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর স্থায়ী ঠিকানায় ওই নোটিস পাঠানো হবে।

লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইলের একটি আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। তার সংসদ সদস্য পদের বিষয়ে কী হবে- জানতে চাইলে আশরাফ বলেন,  “প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল হলে তার সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে।”

কার্যনির্বাহী সংসদের এ্ই বৈঠকে লতিফ সিদ্দিকীও উপস্থিত থাকতে পারতেন । তবে প্রবাসে হজ নিয়ে মন্তব্যের পর তিনি এখনও দেশে ফেরেননি।

লতিফ সিদ্দিকী বিদেশে আছেন, কিন্তু কোন দেশে আছেন- জানতে চাইলে আশরাফ মৃদু হেসে সেই প্রশ্ন এড়িয়ে বলেন, “আপনারাই তো বলছেন দেশের বাইরে আছেন।”

শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সফরের মধ্যেই নিউ ইয়র্কে এক সভায় হজ নিয়ে লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য প্রচার হলে তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

বিভিন্ন ইসলামী দল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তোলে। তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায় বিএনপি। বিভিন্ন স্থানে এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলাও হতে থাকে।

এরপর নিউ ইয়র্ক থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী গত ৩ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে লতিফ সিদ্দিকীকে। দল থেকেও বাদ দেওয়া হবে।

এরপর প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সেরে রোববার ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার প্রজ্ঞাপন হয়।

লতিফ সিদ্দিকী নিউ ইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির ওই অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বিপুল সংখ্যক মানুষ হজে যাওয়ায় দেশের অর্থ আর শ্রম শক্তির ‘অপচয়’ হয়।