লতিফ সিদ্দিকী এমপি থাকবেন?

দল থেকে বহিষ্কৃত হলে সংসদ সদস্য পদ হারাতে হবে- তা সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ না থাকলেও আওয়ামী লীগের মুখপাত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বহিষ্কৃত হলে তার আসন শূন্য হবে।

সাজিদুল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2014, 06:51 PM
Updated : 13 Oct 2014, 04:05 AM

হজ নিয়ে এক মন্তব্যের পর গত ১৫ দিন ধরে তুমুল আলোচনার মধ্যে রোববার মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত হওয়ার পর লতিফ সিদ্দিকীকে দলের সভাপতিমণ্ডলী থেকেও বাদ দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলে লতিফ সিদ্দিকীর প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিতের সিদ্ধান্তও হয়েছে।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপের জন্য লতিফ সিদ্দিকীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হচ্ছে।

তার জবাব পাওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ তেকে জানানো হয়েছে, তবে তাকে যে বহিষ্কারেই করা হচ্ছে, তা সৈয়দ আশরাফের কথায় স্পষ্ট।

গণভবনে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ সাংবাদিকদের বলেন,  “প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল হলে তার সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে।”

আওয়ামী লীগের সভাপতিদমণ্ডলী থেকে সদ্য বাদ পড়া লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য। ১৯৭৩ থেকে এনিয়ে চতুর্থবার তিনি আইনসভায় প্রতিনিধিত্ব করছেন।

সংসদ সদস্য পদ বাতিলের বিষয়ে সংবিধানের ৭০ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনও নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেন তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।

ওই অনুচ্ছেদে দল থেকে বহিষ্কৃত হলে সদস্য পদের কী হবে, সে বিষয়ে কিছু বলা নেই; যা লতিফ সিদ্দিকীর বেলায় হতে যাচ্ছে।

লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কার করা নিয়ে আলোচনার মধ্যে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী কয়েকদিন আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংবিধানে বলা আছে কী কী কারণে এমপি পদ থাকবে না। দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি সংবিধানে নেই।”

সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এর আগেও কয়েকজন সংসদ সদস্য দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও তাদের সংসদ সদস্য পদ টিকে ছিল।

চারদলীয় জোটের আমলে অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপির টিকিটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবু হেনাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

তার সংসদ সদস্য থাকবে কি না- বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তখন সংবিধানের ওই বিধান (৭০ অনুচ্ছেদ) অনুযায়ী আবু হেনার সদস্য পদ রাখার সিদ্ধান্ত দেন তৎকালীন স্পিকার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার। দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়নি।

একইভাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে নবম জাতীয় সংসদে একই ধরনের ঘটনা ঘটে।

সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এইচ এম গোলাম রেজাকে তার দল জাতীয় পার্টি বহিষ্কার করলেও তার সংসদ সদস্য পদ বহাল ছিল।

সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে এক সভায় হজ নিয়ে করা এক মন্তব্যের জন্য ব্যাপক সমালোচনায় পড়েন লতিফ সিদ্দিকী। তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিতে বিভিন্ন ইসলামী দল দাবি তোলে। আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেও তাকে বহিষ্কারের দাবি ওঠে।

এর মধ্যে রোববার শেখ হাসিনার সরকার থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে বাদ দিয়ে প্রজ্ঞাপন হয়। তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালেও শেখ হাসিনার সরকারে টানা পাঁচ বছর পাট ও বস্ত্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী সিদ্দিকী পরিবারের লতিফ সিদ্দিকী ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রথম এমএনএ  নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদে টাঙ্গাইল থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। 

ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে ১৯৬৪-৬৫ সালে লতিফ সিদ্দিকী করটিয়া সাদত কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ৬৬ ছয় দফা ও ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থানে সক্রিয় এই নেতা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে সংগঠক হিসাবেও ভূমিকা রাখেন।