নির্বাচনকালীন সরকারের পাল্টা প্রস্তাব দেয়ার পরদিন আবারো সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিরোধী দল বিএনপি, যাতে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের প্রস্তাব আসতে পারে বলে ইংগিত দিয়েছেন একাধিক শীর্ষ নেতা।
Published : 22 Oct 2013, 09:59 AM
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গত কিছু দিনের রাজনৈতিক পিরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় নিয়েই আমাদের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব কথা বলবেন।”
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা ইংগিত দিয়েছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মুখপাত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানাতে পারেন বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, “সংলাপের জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দেয়াও হতে পারে। তবে সংবাদ সম্মেলনেই এ বিষয়ে জানানো হবে।”
দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জনমনে রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কার মধ্যেই গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রিসভার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সরকারের জন্য বিরোধী দলের কাছে নামও চান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের তিন দিন পর সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে ওই প্রস্তাব নাকচ করেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া। এর বদলে একজন ‘সম্মানিত নাগরিকের’ নেতৃত্বে সাবেক ১০ উপদেষ্টাকে নিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের পাল্টা প্রস্তাব দেন খালেদা জিয়া।
তার প্রস্তাব অনুযায়ী, ১৯৯৬ ও ২০০১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২০ উপদেষ্টার মধ্যে থেকে ১০ জনকে নিয়ে এ সরকার হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি পাঁচটি করে নাম প্রস্তাব করবে।
আর ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলের ‘ঐক্যমতের ভিত্তিতে’ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন ‘সম্মানিত নাগরিককে’ এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হবে।
‘শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে’ প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন বিরোধী দলীয় নেতা।
খালেদার সংবাদ সম্মেলনের পর সোমবার সন্ধ্যায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা, যিনি বরাবরই সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের তাগিদ দিয়ে আসছেন।
বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিয়ে আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছেন। বিরোধী দলীয় নেতাও আজ বক্তব্য রেখেছেন। আমরা আশাবাদী দুই নেত্রীর বক্তব্যে আলোচনার দ্বার উন্মোচিত হবে।”
সংবিধান অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এই সময়ে সরকারে থাকবে আওয়ামী লীগ, সংসদও বহাল থাকবে, যা নিয়ে বিএনপি ও শরিকদের আপত্তি।
নির্বাচনের আগে কবে সংসদ ভেঙে দেয়া হবে এবং সংসদের অধিবেশন কবে শেষ হবে তা নিয়েও দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অবস্থান বিপরীতমুখী।
তিন মাসের জন্য এসে বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর থাকা এবং দুর্নীতির অভিযোগে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রীসহ বহু রাজনীতিবিদকে জেলে পাঠানোর উদাহরণ তুলে ধরে ‘অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক’ শাসনের বিরোধিতা করে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ‘নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য’ হবে না- এই যুক্তিতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি করে আসছেন খালেদা।
দুই নেত্রীর একজন ভাষণ দিয়ে এবং অন্যজন সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের ‘প্রস্তাব’ জাতির সামনে তুলে ধরলেও কার্যত দুজনেই তাদের আগের অবস্থানেই রয়েছেন।
এই অচলাবস্থার নিরসনে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীনসহ দাতা দেশগুলো বাংলাদেশের প্রধান দুই দলের সংলাপ অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে থেকেও একাধিকবার আলোচনার আহ্বান জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।