বিরোধী দলের বিরোধিতার মধ্যেও সংসদের চলতি অধিবেশন ২৪ অক্টোবরের পর চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত দলীয় নেতাদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 13 Oct 2013, 08:39 PM
সেই সঙ্গে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো বাধা সৃষ্টি না করতে বিরোধী দলকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন তিনি।
সংসদে অধিবেশন চালিয়ে যেতে সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যদের দাবিকে ‘দুরভিসন্ধি’ আখ্যায়িত করে বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে রোববার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বসেন শেখ হাসিনা।
বৈঠকের শুরুতে বক্তব্যে তিনি নবম সংসদের চলতি অধিবেশন চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক কোনো বাধা নেই বলে জানান।
পরে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি ১৯তম অধিবেশন ২৪ অক্টোবরের পর চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানান বলে সভায় অংশ নেয়া একাধিক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ২৪ অক্টোবর সংসদ শেষ হয়ে যাওয়াকে ‘বাজে কথা’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ওই তারিখেরও পর বর্তমান অধিবেশন চলবে।”
শেখ হাসিনা সংবিধান উদ্ধৃত করে দলীয় নেতাদের বলেছেন, নির্বাচনের ৪৫ দিন আগে পর্যন্ত সংসদ চলতে পারে।
নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার, প্রার্থী বাছাই এবং নির্বাচনী প্রচারণার জন্য ৪৫ দিন সময় দেয়া হয়ে থাকে।
রুদ্ধদ্বার বৈঠকের আগে সভার সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, সংবিধানে ৯০ দিন আগে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এখানে শুরুর ৬০ দিনের বাধ্যবাধকতা শিথিল করা হয়েছে।
“পার্লামেন্ট বসতেই পারবে না- এটা কোথাও বলা নেই। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করার আগের দিন পর্যন্ত সংসদ চলতে পারে। যদি না রাষ্ট্রপতি সংসদ না ভাঙেন।”
“পার্লামেন্ট যদি ভেঙেও দেয়া হয়, তারপরও কিন্তু রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্ট ডাকতে পারেন। যদি কোনো এমার্জেন্সি সামনে দেখা দেয়, তাহলে ওই পার্লামেন্টই ডাকা যেতে পারে।”
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের ফলে এখন সংসদের মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে আগামী সংসদ নির্বাচন হবে। এই সময়ে সরকারে থাকে আওয়ামী লীগ এবং সংসদও বহাল থাকবে।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না দাবি করে বিএনপি নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে।
সংসদের চলতি অধিবেশন ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে কার্যউপদেষ্টা কমিটির। এর মধ্যে নির্দলীয় সরকার পদ্ধতির বিল তুলে তা সংসদে পাস না করলে ২৫ অক্টোবর থেকে সরকার পতন আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
২৪ অক্টোবর সরকারের মেয়াদ শেষ- বিরোধী দলের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে ২৪ অক্টোবরের পরও অধিবেশনের চালিয়ে যাওয়ার দাবি বৃহস্পতিবার তোলেন সরকারি দলের প্রবীণ সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
এরপর বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দুরভিসন্ধি’ থেকে অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি তোলা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “২৪ অক্টোবরের পর সংসদ বসতে পারবে না- এটা ভুল বোঝাবুঝি। সংবিধানে বলা আছে, প্রতি ৬০ দিন অন্তর সংসদ বসতে পারে।
“৯০ দিনের জন্য (নির্বাচনের সময়) ৬০ দিন পর পর সংসদ বসার আইনটি শিথিল করা হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদ শুরু হওয়ায় সংবিধান অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সংসদের মেয়াদ রয়েছে।”
“বিরোধী দল আমাদের থ্রেট করে বসেছে। ২৪ তারিখের (২৪ অক্টোবর) পর আর সংসদ চলতে পারবে না। ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এই পার্লামেন্টের মেয়াদ। এটা স্পষ্ট হওয়া উচিত।”
বিরোধী দলকে হুঁশিয়ারি
নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানলে নির্বাচন প্রতিহত করার যে হুমকি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া দিয়েছেন, তার জবাবে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
“২৪ তারিখ একেবারে কেয়ামত এনে দেবেন আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রী! সেই কেয়ামতের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছ্নে।”
“তারা যদি জনগণের জন্য কেয়ামত আনতে চায়- তাহলে জনগণকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের আছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া ও শান্তি নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।”
“ইনশাল্লাহ, সে দায়িত্ব অতীতে যেভাবে যথাযথভাবে পালন করেছি,সেভাবেই করব,” গণভবনে বৈঠকে শেখ হাসিনার এই বক্তব্য টেবিল চাপড়ে সমর্থন দেন কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা।
বিরোধী দল নির্দলীয় সরকারের দাবি জানিয়ে এলেও শেখ হাসিনা বরাবরই তা প্রত্যাখ্যান করে সংবিধান অনুসরণের কথা দৃঢ়ভাবে বলে আসছেন।
আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করতে চাইছে- এই অভিযোগ তুলে তা প্রতিহত করার হুমকি দিয়েছে বিরোধী দল।
দুই প্রধান দলের মধ্যে সমঝোতার আশা প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, তারা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের তারিখ নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করবে।
সিইসি আভাস দিয়েছেন, তারা জানুয়ারিতে ভোটের দিন রেখে দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন।
আশরাফকে সক্রিয় হতে আহ্বান
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দলীয় কার্যক্রমে আরো সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৈঠকে বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফ সামনের পরিস্থিতি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মোকাবেলার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
তখন লতিফ সিদ্দিকী পাল্টা সাধারণ সম্পাদককে সক্রিয় হতে বলেন বলে এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
এর আগে আওয়ামী লীগের বৈঠকে কয়েকজন নেতা আশরাফের উদ্যোগহীনতার সমালোচনা করেছিলেন।
রোববারের বৈঠকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফকে নিয়ে সরাসরি কোনো আলোচনা না হলেও সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নাম উল্লেখ না করে তার কর্মকাণ্ডের সমালোচনা হয় বলে বৈঠকে অংশ নেয়া ওই নেতা জানান।