পাঁচ বছরের ব্যবধানে চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটার বাড়লেও গড় ভোট প্রায় ৯ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে।
Published : 17 Jun 2013, 04:32 AM
চার শহরেই এবার প্রধান দুই রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থীর বাইরে একজন করে প্রার্থী ছিলেন। তবে তারা যে ভোট পেয়েছেন তার তুলনায় বাতিল হওয়া ভোটের সংখ্যা বেশি।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন এবারের ভোটের হারে সন্তোষ প্রকাশ করলেও বিগত কমিশনের এক সদস্য মনে করেন, নির্দলীয় এ নির্বাচন এবার ‘অতিমাত্রায়’ রাজনৈতিক রূপ পাওয়ায় সাধারণ ভোটারদের উপস্থিতি কমেছে।
রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেটে গত শনিবার একযোগে শান্তিপূর্ণভাবে সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। এবার মেয়র পদে গড়ে ভোট পড়েছে ৭০ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
এর আগে এই চার শহরে মেয়র নির্বাচনে ভোট হয়েছিল ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট; ভোট পড়েছিল ৭৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, “গত নির্বাচন হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। সে সময় মানুষের ভোট দেয়ার আকুতি ছিল বেশি। অনির্বাচিত সরকার থেকে নির্বাচিত সরকারের ফেরার জন্য ভোটারদের সাড়া বেশি ছিল।”
তাছাড়া দীর্ঘদিন ভোট না হওয়া, বড় অংকের তরুণ ভোটারের অন্তর্ভুক্তি এবং প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার তালিকা হওয়ায় গতবার কেন্দ্রে উপস্থিতি বেশি ছিল বলে করেন এ নির্বাচন কমিশনার।
এবার গণতান্ত্রিক সরকারের সময় ৭০ শতাংশ ভোট পড়ার হারকে ‘সন্তোষজনক’ বলেই মনে করেন আবু হাফিজ।
২০০৮ সালের নির্বাচনে চার সিটিতে ভোটার ছিলেন ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩০ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছিলেন ৮ লাখ ৬১ হাজার ৪০১ জন।
আর শনিবার চার সিটি কর্পোরেশনে যে নির্বাচন হলো, তাতে ১২ লাখ ২৯ হাজার ১৬১ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৬ জন।
এবার চার শহরেই ১৮ দলীয় জোট সমর্থক প্রার্থীরা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। সিলেটে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী, বরিশালে আহসান হাবিব কামাল, রাজশাহীতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও খুলনায় মনিরুজ্জামান মনি।
তারা চারজন পেয়েছেন মোট পড়া ভোটের ৫৯ শতাংশের মতো।
চার সিটিতেই গত মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালন করা চার আওয়ামী লীগ নেতা পরাজিত হয়েছেন।
রাজশাহীতে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, খুলনায় তালুকদার আব্দুল খালেক, বরিশালে শওকত হোসেন হিরন এবং সিলেটে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মিলে পেয়েছেন মোট পড়া ভোটের ৪০ শতাংশের মতো।
এই আটজন ছাড়াও রাজশাহীতে সাবেক জামায়াত কর্মী হাবিবুর রহমান, খুলনায় জাতীয় পার্টি (এ) জেলা শাখার সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু, বরিশালে যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন এবং সিলেটে ব্যবসায়ী সালাহ উদ্দিন রিমন এবার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
তারা চারজন মিলে এবার মোট ৬ হাজার ৬৯৬ ভোট পেয়েছেন, যা সংখ্যার দিক দিয়ে বাতিল হওয়া ভোটের চেয়েও কম।
এবার মোট ১৩ হাজার ৫৮৬টি ভোট বাতিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন, যা গতবারের চেয়ে এক হাজার বেশি।
রাজশাহী: ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯১৭ ভোটের মধ্যে ৭৬ শতাংশ ভোট পড়েছে এ শহরে। এর মধ্যে ‘বৈধ’ ভোট ২ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৫ এবং বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৭৩৩টি। মেয়র পদে তৃতীয় স্থানে থাকা প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৭৯১ ভোট।
খুলনা: চার সিটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার খুলনায়। ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৯ ভোটারের মধ্যে ৩ লাখ ৭ হাজার ৪৬৭ জনের ভোট শনিবার বাক্সে পড়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা প্রার্থী ৩ হাজার ৭৬ ভোট পেলেও বাতিল রয়েছে ৪ হাজার ৮৭৬ ভোট।
বরিশাল: ২ লাখ ১০ হাজার ৮৪১ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ৫৫ হাজার ১২৬ জন। এই সিটিতে বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৮২৭টি ভোট। আর দুই প্রধান দল সমর্থিত প্রতিদ্বন্দ্বীর বাইরে তৃতীয় প্রার্থী পেয়েছেন ১ হাজার ৮০৭ ভোট।
সিলেট: এ শহরে ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৬ ভোটের মধ্যে বাক্সে পড়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৩টি। বাতিল হয়েছে ৩ হাজার ১৪৮ ভোট। আর তৃতীয় স্থানে থাকা প্রার্থী পেয়েছেন ১ হাজার ২২ ভোট।
সিলেটে অপেক্ষাকৃত কম ভোটারের উপস্থিতির বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মুনির হোসেন বলেন, “সিলেটে প্রবাসী বেশি। তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ স্বল্প সময়ে দেশে ফিরতে পারেননি বলে অনেকের কাছে জেনেছি। ফলে গতবারের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম ভোট পড়েছে।”
তবে বিগত নির্বাচনের সময় দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনের সদস্য এম সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হলে এবার ভোটারদের উপস্থিতি আরো বাড়ত।
“ভোটারদের মধ্যে নাশকতার শঙ্কা ছিল। সিলেটে দুই প্রার্থীই তাদের জীবন শঙ্কার কথা বলেছিলেন।”
আর সাখাওয়াতের মতে, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এবার নির্দলীয় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনেক বেশি দলীয় রাজনীতির প্রভাব পড়েছে।
“তাতে করে নিউট্রাল ভোটারদের কিছু উপস্থিতি কম হয়েছে”, বলেন তিনি।