আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতনের ঘোষণা দিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, বড় ধরনের এই কর্মসূচির ঘোষণা আসবে সোমবার।
Published : 24 Mar 2013, 07:00 AM
বগুড়া সার্কিট হাউজ থেকে জয়পুরহাট যাওয়ার পথে এক সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, “আপনারা অনেক কষ্ট করেছেন। আরও কিছুদিন কষ্ট করতে হবে। আগামীকাল (সোমবার) বড় ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। মা-বোনসহ সবাইকে রাস্তায় নেমে এই কর্মসূচি সফল করতে হবে।”
সার্কিট হাউজ থেকে বেলা ১১টায় রওয়ানা দেবার পর মাটিডালী বিমান মোড়ে কর্মসূচির প্রথম শোক সমাবেশে সরকার হটানোর আন্দোলনে সব পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান বিরোধীদলীয় নেতা।
মাটিডালী মোড়ে স্থানীয় বিএনপির উদ্যোগে গত ৩ মার্চ পুলিশের গুলিতে নিহতদের স্মরণে এই শোক সমাবেশ হয়। সমাবেশের মঞ্চে খালেদা জিয়া নিহত ৭ জনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের প্রত্যেককে আর্থিক সহযোগিতাও করেন তিনি।
খালেদা জিয়া দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বলেন, “এই সরকার পাথির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। তারা ১৭০ জন নিরহ মানুষকে হত্যা করেছে। এতোদিন আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করেছি। তারা যেভাবে আজ গণহত্যা চালাচ্ছে, আর তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। এবার তাদেরকে বিদায় নিতে হবে।”
এজন্য বগুড়াসহ দেশবাসীকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানান তিনি।
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, “গুলি-বোমা-অস্ত্র দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। জনগনকে বলছি, আর চোখের পানি ফেললে চলবে না। খুনি ও অপদার্থ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
গত ৩ মার্চ সহিংস ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বগুড়ায় ১২ জন নিহত হয়।
পুলিশের ‘নির্বিচারে’ গুলিবর্ষণের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ লাঠি-সোঠা নিয়ে রাস্তায় নেমে ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তোলার জন্য বগুড়াবাসীর প্রতি অভিনন্দন জানান।
একই সঙ্গে সেদিন বগুড়ার শাহজাহানপুরে জনগনের নিরাপত্তায় বিধানে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন বিরোধীদলীয় নেতা।
“আমাদের সেনাবাহিনী বিদেশে শান্তি রক্ষায় কাজ করে। দেশে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে তারা বসে থাকবে না। তারা সময়মত দায়িত্ব পালন করবে। আমাদের সেনাবাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বিদেশে শান্তি স্থাপনে কাজ করতে যায়। তাদের দেশের যদি শান্তি না থাকে তাহলে বিদেশিরা বলবে, আমাদের সেনাবাহিনী নিজের দেশে শান্তি রক্ষা করতে পারছে না। এসব আজ ভাবনার সময় এসেছে।”
দেশের বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে জনগনের কাতারে আসার আহবানও জানান তিনি।
বিচার বিভাগ ‘দলীয়করণের’ জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, “এমনভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে যে, সরকার যেভাবে শাস্তি দিতে বলে, রিমান্ডে নিতে বলে সেভাবে আদেশ হয়। এতে সাধারণ মানুষ ন্যায় বিচার পাচ্ছে না।”
“কেবল তাই নয়, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হচ্ছে। একদিন এই সরকারের লোকজনকে সেই ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হবে।’’
বর্তমান সরকারের আমলে কোনো ধর্মের লোকজন নিরাপদ নয় বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “কয়েক মাস আগে চট্ট্রগামের রামুতে বৌদ্ধ মন্দির ভাংপুর ও লুটপাট করেছে আওয়ামী লীগ। এখন তারা হিন্দুদের মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুর করছে। সরকারের সস্ত্রাসীরা বিশ্বজিত দাসের মতো ছেলেও কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে।”
পিলখানা হত্যাকান্ডের জন্য বর্তমান সরকারকে অভিযুক্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, “এই হত্যাকান্ডের সত্যিকারের বিচার আজো হয়নি। একদিন এই সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।”
বিডিআর হত্যার তদন্তে সেনাবাহিনীর তৎকালীন লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলমের তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের দাবিও জানান তিনি।
সদ্য প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্মরনে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা নিয়ে সরকারের দেরিতে সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
আগামীতে ক্ষমতায় গেলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র বিমোচন, দুর্নীতি নির্মূল, যুব সমাজের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বিদেশী বিনিয়োগের সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে বলে অঙ্গীকার করেন খালেদা জিয়া।
জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম, যুব দলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
মাটিডালী মোড়ে পথসভা শেষ করে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর জয়পুরহাটের পাঁচবিবির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
এর আগে বগুড়া থেকে জয়পুর হাটর পাঁচবিবি যাওয়ার পথে পথে সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকরা দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানায়।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে শালাইকো উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সহিংসতায় নিহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আরেকটি শোকসভায় যোগ দেবেন তিনি।
দুপুরে জয়পুরহাট থেকে ফিরে বগুড়ার গাবতলীর রামেশ্বরপুর ও সোনারায় ইউনিয়নে হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্থ মন্দির পরিদর্শন করবেন খালেদা।
তিনি বগুড়ায় সহিংসতায় নিহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবেন। সেখান একটি শোকসভায় যোগ দেয়ার পর বিকালে শাহজাহানপুরের আড়িয়াবাজারে একটি পথসভায় বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া।
শাহজাহানপুরের পথসভা শেষ করে রাতেই ঢাকা ফিরবেন বলে জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতার প্রেস সচিব।
পুলিশের গুলিতে নিহত পরিবারের সদস্যদের সাত্বনা জানাতে শনিবার রাতে ঢাকা থেকে বগুড়া আসেন খালেদা জিয়া। রাতে তিনি সার্কিট হাউজে ছিলেন।
গত সাপ্তাহে খালেদা জিয়া সস্ত্রাসী হামলা ক্ষতিগ্রস্থ মন্দির দেখতে মুন্সিগঞ্জ এবং পুলিশের গুলিতে নিহতদের পরিবারদের সাত্বনা জানাতে মানিকগঞ্জের শিংগাইর যান।