দেহের ‘লাম্প’র বায়োপসিতে কোনো জটিলতা ধরা না পড়ায় এই দফায় ২৬ দিন হাসপাতালে থেকে বাড়িতে ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
Published : 07 Nov 2021, 04:46 PM
রোববার বিকালে ঢাকার বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে প্রাইভেটকারে করে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরার সময় তার সঙ্গে ছিলেন পুত্রবধূ সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি।
গত ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তির পর শাশুড়িকে দেখতে যুক্তরাজ্য দেশে ফেরেন প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সিঁথি।
হাসপাতাল থেকে খালেদাকে নিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় তার পাশের সিটেই ছিলেন সিঁথি। বাড়িতে পৌঁছার পর তাকে হাত ধরেও নামান তিনি।
বাসায় দলীয় চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানাতে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কেন্দ্রীয় নেতা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, শিরিন সুলতানা ও আফরোজা আব্বাসসহ নেতারা।
বাড়ির ফটকে নাজিম উদ্দিন আলম, হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আখতার, সাইফুল আলম নিরব, ইশরাক হোসেন, এসএম জাহাঙ্গীর, আবদুল আলিম নকি, এজি শামসুল হকসহ অনেক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
হাসপাতাল থেকে খালেদার গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে যান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবউন খান সোহেল, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলসহ কয়েকশ নেতা-কর্মী।
গত ১২ অক্টোবর খালেদাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তির সময় তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, তিনি কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এরপর গত ২৫ অক্টোবর জানানো হয়, খালেদা জিয়ার দেহে একটি লাম্প রয়েছে, তার বায়োপসি করা হবে।
সেই বায়োপসিতে ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ ধরা পড়েনি বলে চিকিৎসকরা জানান। এরপরই তাকে বাসায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যেতে হয়। দেশে করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর পরিবারের আবেদনে গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’ তাকে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার।
খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়েছিল তার পরিবার। তবে সরকার বলেছে, সাময়িক মুক্তির শর্ত অনুযায়ী তাকে দেশে রেখেই চিকিৎসা দিতে হবে।
কারামুক্তির পর বাসায় থাকা অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এজন্য এবছরের মাঝামাঝিতে ৫৪ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল তাকে।
বিদেশ নেওয়ার সুপারিশ
খালেদার চিকিৎসায় গঠিত এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড তাকে বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বলে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন।
খালেদা বাড়িতে ফেরার পর ওই বাড়িতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এবারও এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা উনার সুচিকিৎসার জন্য একটি মাল্টি ডিসিপ্লিনারি এডভান্সড ডেভেলপ সেন্টারে, দেশের বাইরে যে কোনো ভালো কান্ট্রিতে গিয়ে নিতে বলেছে। অর্থাৎ এটা বুঝতে হবে যে সত্যিকার অর্থেই ‘শি নিডস ভেরি গুড কোয়ালেটেটিভ মেডিকেল ট্রিটমেন্ট’।
“উনার পরিবারের সদস্যরা এবং দেশবাসী সবাই চায় এবং উনি (খালেদা জিয়া) নিজেও আশা করেন যে সত্যিকার অর্থে উনার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। সেজন্য আপনাদের মাধ্যমে উনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন যে, উনি যেন সুচিকিৎসা পরবর্তীতে আবার আপনাদের মাঝে ফেরত আসতে পারেন।”
ডা. জাহিদ বলেন, “উনাকে গত ১২ তারিখ হাসপাতালে নেওয়ার পর মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা অনুভব করে উনার আরও বিস্তৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। সেই অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। একটি বিষয় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ রাখতে হবে, উনি বিভিন্ন রোগে আগে থেকেই আক্রান্ত ছিলেন এবং আছেন।
“গত চার বছর যাবত উনি যখন জেলখানায় ছিলেন, সেখানে সত্যিকার অর্থে সুচিকিৎসার সুবন্দোবস্ত সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি। এই অবস্থায় উনার সুচিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি।”
বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, “২৬ দিন পর আজকে তিনি বাসায় ফিরে এসেছেন। তিনি এখন ভালো আছেন। তার জন্য দোয়া করায় আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।”