স্বাস্থ্য খাতের ‘অনিয়ম ও দুর্নীতি’ কমাতে কোনো ‘উদ্যোগ নেই’ অভিযোগ করে সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিষয়টি ‘আমলে নিচ্ছেন না’।
Published : 29 Jun 2021, 04:55 PM
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “গণমাধ্যমে প্রকাশিত স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম এখন দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি কমানোর জন্য কোনো কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ে না।
“সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীসহ দায়িত্বপ্রাপ্তরা দুর্নীতির বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন বলে মনে হয় না। অভিযোগগুলো গুরুতর। দেশবাসী আশা করে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে যথাযথ তদন্ত হবে ও দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।”
বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে এর সমালোচনা করেন জিএম কাদের।
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হওয়া উচিত কমপক্ষে জিডিপির ৫ শতাংশ।
গত ১২ বছর ধরে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ জিডিপির ১ শতাংশের নিচে ছিল মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, নতুন বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বেশি। বাজেটে কোভিড- ১৯ এর টিকা প্রয়োগের কথা বলা হলেও আমদানির জন্য এ খাতে আলাদা কোনো অর্থ বরাদ্দের উল্লেখ নেই।
“তবে বাজেট বক্তৃতায় কিছু দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ এবং ভ্যাকসিন ক্রয়ের অর্থ প্রাপ্তির আশ্বাস উল্লেখ করা আছে। ভ্যাকসিন খাতে যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকার আওতায় এনে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী ভূমিকার দাবি জানান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “কোভিড- ১৯ মহামারীর কারণে জীবিকা হারিয়েছে কোটি কোটি মানুষ। তাদের মধ্যে যারা হতদরিদ্র তাদের না খেয়ে থাকার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। জীবিকা হারিয়ে নতুন দরিদ্র হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ।”
“… করোনার কারণে লকডাউন ও ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। সেখানেও জীবন বিপন্ন হবে। আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে এ সকল দারিদ্র ও নব্য দরিদ্রদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।”
করোনাভাইরাসের টিকা দেশে উৎপাদনে সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘অসহযোগিতা করছে’ বলেও অভিযোগ করেন জিএম কাদের।
তিনি বলেন, “একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন তৈরিতে বেশ কিছু সাফল্য দেখিয়েছে বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়। কিন্তু সরকারি সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার অসহযোগিতার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যাতে করে সে উদ্যোগটি মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এ বিষয়েয় সরকারি হস্তক্ষেপ ও জরুরি সহায়তা দেওয়া গেলে হয়তো আমরা দেশীয় ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম হব।”
প্রস্তাবিত বাজেটে ‘সুশাসনের ব্যতয়ের সুযোগ’ রাখা হয়েছে অভিযোগ করে জিএম কাদের বলেন, “যতই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হোক, সুশাসন না থাকলে দুর্নীতি, অপচয় ও সমন্বয়হীনতার কারণে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।”
দেশে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে গত বেশ কয়েটি বাজেটে ‘কালো টাকা সাদা’ করার সুযোগ রাখা হলেও তার ‘ফলাফল শূন্য’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ রাখা হয়েছে সেটা দুর্নীতিকে বৈধতা দেওয়ার শামিল, এটি সুশাসনের পরিপন্থি। এ বিষয়টি নিশ্চিতভাবে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে।”
বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, “বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গত পাঁচ বছরে এক হাজার ২৪টি অর্থ পাচারের ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে। বিএফআইইউ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তথ্য-প্রমাণসহ প্রতিবেদন পাঠিয়েছ। ফলাফল, এখন পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন কোনো তথ্য নেই।”
অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের ‘বৈধতা দেওয়া’ সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির সঙ্গে ‘সাংঘর্ষিক’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কালো টাকা সাদা করার… তা যে কোনো শর্তেই হোক বন্ধ করা উচিত বলে মনে করি।”
ব্যাংক খাতের পরিস্থিতির সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “গত ১০ বছরে ব্যাংক খাতের অবস্থা খারাপের দিকে গেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, বিগত সময়ে আর্থিক অনিয়মের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”