করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় টেউ মোকাবিলায় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ‘সর্বদলীয় কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Published : 09 Apr 2021, 07:47 PM
শুক্রবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই প্রস্তাব দেন।
সংবাদ সম্মেলনে করোনাভাইরাস মহামারীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সচেতনতা বাড়ানোসহ লকডাউনে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য ভাতা ও ত্রাণের ব্যবস্থা করা, টিকা সংগ্রহ, বিভিন্ন ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা আবারো প্রস্তাব রাখছি, এখনো সময় আছে, সর্বদলীয় কমিটি গঠন করে, জনগণকে সম্পৃক্ত করে-তাহলেই শুধুমাত্র এই সমস্যার সমাধান করা যাবে।“
বিশাল এই চ্যালেঞ্জ জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া মোকাবেলা করা সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি, সকল স্তরের মানুষকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে। আসুন আমরা জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে এই সংকট মোকাবেলার উদ্যোগ নেই। মানুষ বাঁচাই, দেশ বাঁচাই।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এখন যেটা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করা। সরকারকে আহবান করব, প্রতিটি ইনফরম্যাল সেক্টারের যারা উদ্যোক্তা আছেন তাদেরকে যথেষ্ট পরিমাণ প্রণোদনা দিতে হবে।”
শিল্প কারখানার শ্রমিক, দোকানের কর্মীদের ভাতা দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যত দিন এই সমস্যা থাকবে বিশেষ করে লকডাউন থাকবে তাদেরকে ভাতা দিতে হবে। দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীলদের ত্রাণ দিতে হবে।
দিন মজুর ও অনানুষ্ঠানিক খাতে জড়িতরা কিভাবে চলবে তা জানতে চেয়ে তিনি আরও বলেন, “গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি সরকার একটা প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছিল, সেই প্রণোদনায় কিন্তু সাধারণ মানুষের খুব বেশি উপকার হয়নি, বরঞ্চ দুর্নীতি বেশি হয়েছে।”
সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বিশেষজ্ঞরা বলছেন হার্ড ইম্যুনিটির জন্য সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে। এ টিকার এখন পর্যন্ত কোনো সংস্থান হয় নাই। আমরা আজকে দেখলাম, চীন ও রাশিয়া থেকে সরকার টিকা আনার কথা ভাবছে। অথচ তা এই মুহূর্তে দরকার ছিল।“
এক বছর আগে থেকে এ উদ্যোগ না নেওয়ায় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “একবছর ব্যস্ত থাকলেন বিভিন্ন বর্ষ উদযাপনে, বিভিন্ন রকম দৈনন্দিন কাজগুলো বিশেষ করে মেগা প্রজেক্ট, ডেভেলমেন্ট প্রজেক্ট সেগুলো নিয়ে।”
প্রয়োজনীয় টিকা সংগ্রহ ও বিতরণে দ্রুত রোডম্যাপ তৈরির পরামর্শ দেন তিনি।
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে বেড ও আইসিইউ সংকট, পরীক্ষার অপ্রতুলতার জন্য সরকারের ‘ব্যর্থতা, উদাসীনতা, সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনাকে’ দায়ি করেন বিএনপি মহাসচিব।
সর্বাত্মক লকডাউনের অর্থ কি, প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “সরকার যে লকডাউন ঘোষণা করেছে সেটা ক্যারিআউট হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী বলেছেন, ১৪ তারিখ থেকে নাকি সর্বাত্মক লকডাউন করা হবে। আমরা জানি না সর্বাত্মক লকডাউনের অর্থটা কী? জনগণ জানে না এবং এর বিকল্প কী ব্যবস্থা করা হয়েছে সেটিও জনগণ জানে না।“
“সর্বাত্মক লকডাউন করা বিশেষ করে রোজার সময়ে সেটা কিভাবে সমন্বয় করা হবে সে সম্পর্কে কোনো রোডম্যাপ দেয়া হয় নাই।”
গত বছর মহামারীকালে সাধারণ মানুষের পাশে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বিএনপির থাকার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এবারও সব ইউনিটকে আক্রান্ত ও বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সস্ত্রীক খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের অনেক নেতা-কর্মীদের করোনায় আক্রান্তের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সারাদেশে চার শতাধিক নেতা-কর্মী আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজারের অধিক।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বারডেম হামপাতালে চিকিৎসাধীন বুদ্ধিজীবী লেখক বদরুদ্দীন উমর ও তার স্ত্রী সুরাইয়া হানমের আশু রোগমুক্তি কামনা করেন বিএনপি মহাসচিব।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উদযাপনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরকালে বিক্ষোভের সময় সংঘটিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার অসংখ্য মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
ফরিদপুরে সালথার ঘটনার পরও বিএনপির বেশিরভাগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার নিন্দা জানান তিনি।
বিভিন্ন থানায় ভারি অস্ত্রের পাহারা প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “হাস্যকর নাটক সাজিয়ে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনে বসানো হয়েছে মেশিনগান পোস্ট।“
গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় সব রাজনৈতিক দলসহ সবাইকে কাজ করার আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবসময় সংগ্রাম করেছি, আন্দোলন করেছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আজ বন্দি অবস্থায় আছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব নির্বাসিত হয়ে আছেন, ৩৫ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এই অবস্থার মধ্যেও আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত আছে।“