আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালনের কর্মসূচি ‘রাজনৈতিক ভণ্ডামি’ ছাড়া আর কিছু না।
Published : 06 Mar 2021, 05:57 PM
শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে সহযোগী সংগঠনের যৌথসভার শুরুতে তার এমন মন্তব্য আসে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ মার্চ মাসে বিএনপির কর্মসূচির উদ্বোধন করে আদালতে দণ্ডিত পলাতক একজন আসামি, যা এদেশের জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে দিয়ে মহান স্বাধীনতার মাসে কর্মসূচির উদ্বোধন করে বিএনপি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে তামাশা করেছে। যার মাধ্যমে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বাঙালির আত্মপরিচয় বিনিমার্ণের ইতিহাসের সঙ্গে।
“তেমনি আজ হঠাৎ করে ৪৬ বছর পর তাদের বোধোদয় হয়েছে, যে সাতই মার্চকে তারা নিষিদ্ধ করেছিল… সাতই মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ শুধু নিষিদ্ধই করেনি, এ ভাষণ যারা বাজাত, সেই তাদেরকে নির্যাতন করত, জেলে দিত এবং অনেককে অত্যাচার নির্যাতন করে পঙ্গু পর্যন্ত করে দিয়েছিল সাতই মার্চের ভাষণ বাজানোর অপরাধে। সেই সাতই মার্চ তারা পালন করছে। মুখচ্ছবিকে আজকে মুখোশ দিয়ে ঢাকতে চাইছে।
কাদের বলেন, বিএনপি একদিকে ৭ মার্চ পালন করছে, আবার আরেক দিকে বলছে, ‘একটি ঘোষণা’ স্বাধীনতা এনে দেয়।
“আসলে এই কথাটি বলার জন্যই তারা সাতই মার্চের আলোচনা করছে। এটা তাদের আরেকটা রাজনৈতিক ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু না।”
বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে দলটির এক নেতা ১৫ অগাস্টের কথা মনে করিয়ে দিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমাদের কাছে এটা বোধগম্য নয়, এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ওই নেতার ব্যক্তিগত, নাকি বিএনপির দলীয় বক্তব্য। গত চার-পাঁচ দিনে বিএনপির ওই নেতার বক্তব্য নিয়ে এখন পর্যন্ত অফিসিয়াল কোনো ব্যাখ্যা না দেওয়া প্রমাণ করেছে, এটি তাদের দলগত অবস্থান।”
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত ২ মার্চ রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির মহাসমাবেশে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, “আজ রাত, কাল আর সকাল নাও হতে পারে। ৭৫ মনে নাই?”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “তবু আমি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আবারও প্রশ্ন করছি, তিনি যেখানে আজ মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, স্বাধীনতার আদর্শ নিয়ে তারস্বরে চিৎকার করছেন, আজকে মায়াকান্না কাঁদছেন, দরদ দেখাচ্ছেন কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করছেন। তিনি কী জবাব দেবেন?ৎ
“রাজশাহীতে তার দলের নেতা প্রকাশ্যে যে বক্তব্য রেখেছেন, আরেকটা ১৫ অগাস্ট ঘটানোর, এরকম মানসিকতা, এরকম চরিত্র নিয়েই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করবেন? সুবর্ণজয়ন্তী পালনের মুহূর্তে এই ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেয়ার সাহস আপনার দলের নেতা কি করে পেল? এটা আপনাদের দলীয় বক্তব্য কি না? আপনার কাছে জানতে চাই?
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আজকে বিএনপি চক্রান্তের পথেই বেঁছে নিয়েছে। কারণ তারা নির্বাচন করতে গেলে জনগণ তাদের ভোট দেয় না। জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আন্দোলন করতে গেলে জনগণ সাড়া দেয় না। তারা বারবার চেষ্টা করেছে, হাঁকডাক দিয়েছে কিন্তু জনগণ তাদের আন্দোলনে সাড়া দেয় না। কারণ বিএনপির আন্দোলন মানেই হচ্ছে সহিংসতা, বিএনপির আন্দোলন মানেই হচ্ছে জ্বালাও-পোড়াও, তাদের আন্দোলনের নামই হচ্ছে আগুন সন্ত্রাস। এই তিক্ত অভিজ্ঞতা দেশের মানুষের জানা আছে।”
বিএনপির ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আগেই বলেছি, বিএনপি ভোটের মাঠে সাড়া পাচ্ছে না। সাড়া পাচ্ছে না বলেই পৌরসভা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে তারা বুঝতে পেরেছে, তাদের ভোট নেই। সেটা তারা বুঝতে পেরেছে। সে কারণেই তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে। তারা নিজেদের রাজনৈতিক ব্যর্থতার দায় নির্বাচন কমিশন, সরকার এবং জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।”
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে আসুন, আজকে দেশরত্ম শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন সমৃদ্ধি শান্তির পক্ষে অগ্রসরমান অভিযাত্রায় শামিল হই। রাজনীতিকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনি, গণতন্ত্রের ধারায় ফিরিয়ে আনি।”
মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচিও এ সময় ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের।
তার সভাপতিত্বে এ যৌথসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, দিপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।