দেশের চলমান নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সংসদে অভিযোগ করেছে বিএনপি, তাদের সঙ্গে একই সুর ছিল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদেরও।
Published : 01 Feb 2021, 05:34 PM
সোমবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আলোচনায় জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং বিএনপির হারুনুর রশীদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন।
সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচনে ভোটার অংশগ্রহণ ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে। ভোটে জনগণের অনীহা গণতন্ত্রের জন্য ভালো না। নির্বাচনে বিশ্বস্ততা ও গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে শক্তিশালী গণতন্ত্র সম্ভব না।
“আমাদের আগামী ৫/১০ বছরের জন্য চিন্তা করলে হবে না। ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে চিন্তা করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এগুলো দেখা উচিৎ। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা কেউ অস্বীকার করবে না, কিন্তু নির্বাচনের ব্যাপারটা ভালো করে দেখা উচিৎ।”
আইনের শাসন না থাকলে উন্নয়ন গতি হারাবে বলে মন্তব্য করে আনিসুল বলেন, “আইনের শাসন সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠা করা না গেলে উন্নয়নের ধারা ধরে রাখা যাবে না। আমাদের এই সংসদের সদস্য পাপুলের কুয়েতে সাজা হয়েছে। সেখানে টাকাগুলো কীভাবে গেল সেটা খুজে বের করতে হবে।
“গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর জোর দিতে হবে। এটি গণতন্ত্রের একটি স্তম্ভ। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে না পারলে তা দেশের জন্যও ভালো হবে না। গণতন্ত্রের জন্যও ভালো হবে না।“
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, “স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। সরকার যাকে মনোনয়ন দিচ্ছে, তারাই নির্বাচিত হচ্ছে। নির্বাচনের নামে তামাশা, প্রহসন হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “নষ্ট রাজনীতি নষ্ট মানুষ তৈরি করে। দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন দুর্নীতিবাজ তৈরি করে। জাতীয় মূল সংকট আড়াল হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী-সরকার এর দায় এড়াতে পারবেন না। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সরকার গঠন করছেন, এর মাধ্যমে দুর্নীতি দূর করা যায় না।”
স্পিকারের উদ্দেশে হারুন বলেন, “আপনার কাছে প্রশ্ন রাখছি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই বিরোধী দলের (জাপা) কোনো প্রার্থী আছে? চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ সব জায়গায় মহাজোটের প্রার্থীরা একযোগে ভোট করছে। বাইরে করবেন একসাথে, একরকম চরিত্র। আর ভিতরে (সংসদে) এসে ভিন্ন চরিত্র সম্ভব?
“এই যে সংসদ। একসাথে ২০১৮ সালে ভোট করলেন মধ্যরাতে। একইসাথে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করলেন। তাদের বিরোধী দলের চেয়ারে বসালেন। এটা হয়? কিভাবে সংসদ কার্যকর হবে?”
আলোচনায় দাঁড়িয়ে বিএনপির সমালোচনা করে হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, “দুর্নীতিতে যারা পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিলেন, তাদের মুখে যখন দুর্নীতির অভিযোগ শুনি, তখন হাসি ছাড়া কিছু পায় না।
“টাকা পাচার আর ভোটের গল্প করেন। কত টাকা নির্বাচনের আগে লন্ডন পাঠিয়েছে আপনাদের তৃণমূল। প্রত্যেকটি আসনে একাধিক তৃণমূল নেতার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করে আপনার প্রার্থীকে আগেই পঙ্গু করে দিয়েছেন।
“আমরাও চাই শক্তিশালী বিএনপি হোক, শক্তিশালী বিরোধী দল হোক। বিএনপিকে যদি শক্তিশালী করতে চান, যে টাকা লন্ডনে পাচার করেছেন তৃণমূলের পকেট থেকে ওই টাকা ফেরত দেন। আপনারা নির্বাচনের আগেই মাঠ ছেড়ে দেন। আগেই আপনার প্রার্থীকে সর্বস্বান্ত করে ফেলেন।”
এদিন আলোচনায় ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টিকারী এবং সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিতে যারা ফেইসবুক-ইউটিউবে বক্তব্য দিচ্ছে,তাদের বিরুদ্ধে তথ্য মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না?
তিনি বলেন, “পাট ও চিনি শিল্প ধ্বংস হয়ে গেল। ৫৪ হাজার শ্রমিককে পেশা পরিবর্তন করতে বলা হল। এটা যুক্তিযুক্ত হল কি না? প্রযুক্তিগত পরি্বর্তন করে কেন আধুনিকায়ন করা হল না? শাস্তি দেওয়া হল শ্রমিকদের। আমলাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল?”
বাদশা অভিযোগ করেন, দেশের দুর্নীতিবিরোধী আইন ও সংস্থা দুর্বল হওয়ার কারণে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের চূড়ান্ত যোগ্যতা অর্জন করবে। কোভিডকালে সর্বজনীন মন্দা, সংকটের শুরু থেকেই অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একের পর এক প্রণোদনা দিয়েছেন। বাংলাদেশের মতো একটি দেশে এটি একটি অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ। করোনার প্রাথমিক অভিঘাত অতিক্রম করে বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক উত্তরণে এগিয়ে চলছে।”