নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলার গুরুত্বের বিষয়টি দেরিতে হলেও সরকার বুঝতে পেরেছে বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Published : 23 Mar 2020, 07:51 PM
বৈশ্বিক মহামারীর রূপ নেওয়া এই ভাইরাসের বাংলাদেশে বিস্তারে জনআতঙ্কের মধ্যে সরকারের ছুটি ঘোষণা ও বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় সেনাসদস্যের নিয়োজিত করার সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেছেন তিনি।
সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আসেন বিএনপি মহাসচিব। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ইন্টারনেটে লাইভ সম্প্রচারে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর কথা বলেন।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের চিকিৎসা এবং জনগণকে আইসোলেটেড করে রাখার যে ব্যাপার- একজন থেকে আরেকজনকে আইসোলেটেড করে রাখা- এ ব্যাপারটাতে সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিলে। যদিও তারা দেয়া শুরু করেছেন।
“এটা দেরিতে হলেও আমি মনে করি যে, তারা বুঝতে পেরেছেন। বিলম্বে হলেও সরকার যে কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এখন এটাকে যেন নিবিড়ভাবে পরিচালনা করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে “
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তাদের মন্ত্রীরা এমন এমন উক্তি করেছেন যা মানুষের এই আতঙ্কের মধ্যেও একটা উষ্মা ও খেদের সৃষ্টি করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী গতকালও বলেছেন, তারা তিন মাস আগে থেকে প্রস্তুত ছিলেন, যার কোনো নজীর আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
“সরকার এই পর্যন্ত বলছে ৩৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। পরীক্ষা করার জায়গা তো শুধুমাত্র একটা, আইইডিসিআর। সেই জায়গায় সবাই পরীক্ষা করতেও পারছেন না। যার ফলে কতজন ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন, কতজন এর দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন সেটার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান আমরা পাচ্ছি না।”
বিদেশ থেকে আসা ৬ লাখ মানুষ গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ায় ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে সরকারের উদাসীনতা ও প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার সমালোচনাও করেন বিএনপি মহাসচিব।
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধি, চিকিৎসক-নার্সদের প্রশিক্ষণ, তাদের জন্য বিশেষ পোশাক ও পর্যাপ্ত কিট সরবারহের দাবিও জানান তিনি।
করোনাভাইরাসের কারণে গার্মেন্ট শিল্প রক্ষায় মালিক-শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রান্তিক মানুষের জন্য ভাতা দেওয়ারও দাবি জানান ফখরুল।
‘খালেদা জিয়াকে নিরাপদ রাখার দাবি’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা আমাদের তরফ থেকে যতটা সম্ভব অথোরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে যেন সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ রাখা হয় তার জন্য বলেছি এবং তারা আমাদেরকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে সেটা তারা করছেন।”
দুর্নীতির দুই মামলায় সাজা নিয়ে দুইবছর ধরে কারাবন্দি খালেদা জিয়া একবছর ধরে চিকিৎসাধীন আছেন বিএসএমএমইউ হাসপাতালে।
এদিকে করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে স্বাধীনতা দিবসে বিএনপির সব ধরনের কর্মসূচি বাতিলের ঘোষণাও দিয়েছেন মির্জা ফখরুল।
“আপনাদেরকে জানাতে চাই যে, আমাদের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশের দলের সকল কর্মসূচি আমরা বাতিল করেছি। কোনো রকমের জনসমাবেশ-সমাবেশ যেন না হয় তার জন্য নেতা-কর্মীদেরকে দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।”
‘গণমাধ্যমে চাকুরিচ্যুতি অমানবিক’
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি করোনাভাইরাসের এই সময়ে সাংবাদিকদের চাকুরিচ্যুত করা হচ্ছে। এই সময়ে তাদেরকে কর্মচ্যুত করা অমানবিক ও অনৈতিকও বটে। আমরা আশা করব যে, গণমাধ্যমের যারা মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় আছেন তারা এই বিষয়টাকে অবশ্যই বিবেচনা করে এখন যাতে কেউ কর্মচ্যুত না হয় সেটা বিশেষভাবে দেখবেন।”
করোনাভাইরাসের সংবাদ প্রকাশে জনসচেতনতায় গণমাধ্যমের ভুমিকার প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব।