আগে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করলেও হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পরদিন একথা বললেন বিএনপি মহাসচিব।
সোমবার সকালে জাতীয়তাবাদী উলামা দলের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের নিয়ে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মির্জা ফখরুল।
হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্যারোল নিয়ে আলোচনার গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রথম হচ্ছে, প্যারোল নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
“প্যারোল আমাদের দলের বিষয় নয়। এটা বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিষয়। সুতরাং এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করি নাই। ”
দুর্নীতির দুই মামলায় এক বছরের বেশি কারাবন্দি খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিসসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। তার পছন্দমতো ঢাকার কোনো বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদার চিকিৎসার দাবি বিএনপি জানালেও তাতে সাড়া মেলেনি।
গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে তার জামিনে মুক্তির চেষ্টা করছেন আইনজীবীরা। এখনও তাতে সফল না হওয়ায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও খোন্দকার মাহবুব হোসেনসহ বিএনপির অধিকাংশ আইনজীবী বলছেন, সরকার ‘না চাইলে’ আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়।
এই প্রেক্ষাপটে কয়েক দিন আগেই চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তার অন্যতম আইনজীবী খোন্দকার মাহবুব, যিনি গত বছর একবারও এই দাবি তুলেছিলেন।
বিএনপির আইনজীবী ওই কথা বলার পর এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলের আবেদন পেলে আইনি দিক খতিয়ে দেখা হবে।
তখন মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, প্যারোল নয়, নেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি চান তারা।
এরপর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, খালেদা জিয়ার প্যারোল পাওয়ার মতো অবস্থা এখনও হয়নি।
হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার সুচিকিৎসা ও মামলার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য বেগম খালেদা জিয়া আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দল ও দেশের জনগণের যে ঐক্য, সেই ঐক্য যেন অটুট থাকে।”
সংসদে শপথ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। আমরা তো এই সংসদকেই নির্বাচিত বলছি না, আমরা ওই কথিত নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি।”
তিনি বলেন, “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে আমরা আজকে শপথ নিয়েছি যে, আমরা আন্দোলন বেগবান করব। প্রতিটি আন্দোলনের বিভিন্ন ধাপ, ধরণ ও কৌশল থাকে। আন্দোলন বলতে শুধু হরতাল ও অবরোধ যদি বোঝেন, তাহলে আপনাদের এ বিষয়ের সঙ্গে আমরা একমত হতে পারি না।
“আমরা আন্দোলন বলতে বুঝি, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সোচ্চার হতে হবে, জনগণের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করতে হবে। এর জন্য আমরা কাজ করছি এবং প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা মনে করি, এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে আমরা সক্ষম হব এবং আমরা দেশ থেকে নির্বাসিত গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে পারব।”
উলামা দলের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির প্রধান মাওলানা শাহ নেছারুল হক, সদস্য সচিব মাওলানা মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারসহ নেতাকর্মীদের এসময় উপিস্থত ছিলেন।
জিয়ার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়।