দেশে শুধু দুর্নীতির উন্নয়ন হচ্ছে: ফখরুল

আওয়ামী লীগের শাসনে বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2019, 04:00 PM
Updated : 25 March 2019, 04:00 PM

তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়নের দাবি করে গেলেও শুধু দুর্নীতি হচ্ছে।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সোমবার বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় ফখথরুল বলেন, “আজকে সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে বিপন্ন। আজকে সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। আজকে এই দেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে।”

সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের যে দাবি করছে, তার পাল্টায় বিএনপি মহাসচিব বলেন,“এই উন্নয়ন শুধু কথায় উন্নয়ন, এই উন্নয়ন হচ্ছে দুর্নীতির উন্নয়ন। এই উন্নয়নের ফলে কিছু সংখ্যক মানুষ ধনী থেকে ধনীতে পরিণত হচ্ছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে এখন ধনীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।”

‘গণতন্ত্র হরণ’ করে আওয়ামী লীগ এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে বলে দাবি করেন ফখরুল।

“স্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে, এই ভুখণ্ডে যারা বাস করে, তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, তাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং তাদের মুক্তির স্বাধীনতা, যা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে এই আওয়ামী লীগ।

“স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করেছিল এই আওয়ামী লীগ। আজকে ৪৮ বছর পরে ঠিক একইভাবে তারা নির্যাতন-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে ছদ্মবেশে একটা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন “যিনি শুধু আমাদের দলের নেতা নয়, তিনি বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের নেতা, যিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক। এত ত্যাগ কোনো নেতা এদেশে স্বীকার করেনি।

“এই নেতা এখন পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে। প্রতিদিন তার শরীর খারাপ হচ্ছে। কী দুর্ভাগ্য ও ভয়ংকর যে, এই ভয়াবহ সরকার তার চিকিৎসা পর্যন্ত করছে না। আজকে আমাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করব। তাকে মুক্ত করলেই গণতন্ত্রকে মুক্ত করা হবে।”

সভার প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তোলেন।

তিনি বলেন, “৩৬টা বইয়ের রেফারেন্স নিয়ে এসেছিলাম। এই বইগুলোতে বাংলাদেশের, বিদেশের এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র নায়কদের মন্তব্য রয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষক যে জিয়াউর রহমান এটা সকলে স্বীকার করেছেন। আওয়ামী লীগ স্বীকার করে না। তারা ইতিহাস বিকৃত করছে।”

খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আমরা বলতে চাই, জিয়াউর রহমানের নাম এয়ারপোর্ট থেকে মুছে দিয়ে, জাদুঘর থেকে মুছে দিয়ে কখনও মুছে ফেলা যাবে না। এদেশের মানুষের অন্তরে জিয়ার নাম প্রোথিত।

“এই সরকার জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিকে ভয় পায়। সেজন্য তারা এই দলের বিরুদ্ধে, এই দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।”

জিয়াউর রহমান ফরম পূরণ করে বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফের এই বক্তব্যে ‘সঠিক নয়’ বলে দাবি করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

সভায় তিনি বলেন, “বাকশাল যখন গঠন করা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারে আমি তৎকালীন উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের একান্ত সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলাম। একদিন সকালে ১০টার সময়ে জেনারেল জিয়া আমাকে বললেন, দেখো তো হাফিজ আমার কাছে একটা ফরম পাঠিয়েছে। আমি দেখলাম এটা বাকশালে যোগদানের ফরম। উনি বললেন, তোমরা কী বল? আমি বললাম, স্যার এই ব্যবস্থা টিকবে না, আপনি এটাতে যোগ দেবেন না। উনি আমার দিকে তাকালেন। এরপর উনি বললেন, তুমি ঠিকই বলেছো, ফরমটা নিয়ে উনি ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে মধ্যে ফেলে দিলেন।

“আমি তার জীবন্ত সাক্ষী। আমি বলছি, যদি উনি (জিয়াউর রহমান) যোগদান করে থাকেন, ফরম ফিলআপ করে থাকেন, দেখান। মিথ্যাচার করে দেশটাকে আপনারা (আওয়ামী লীগ) শেষ করে দিয়েছেন।”

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জমিরউদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, এজেএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, আবদুস সালাম, কাজী আবুল বাশার, আহসানুল্লাহ হাসান, সাদেক আহমেদ খান, শফিউল বারী বাবু, আনোয়ার হোসেইন, মামুন হাসান, হেলেন জেরিন খান, এজমল হোসেন পাইলট।

রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির এই আলোচনা সভার পর জাসাসের শিল্পীরা পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

স্বাধীনতা দিবসের দিন সকালে বিএনপির নেতারা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ও পরে শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দেবেন। ২৭ মার্চ বিকালে নয়া পল্টন থেকে স্বাধীনতা শোভাযাত্রার কর্মসূচিও নিয়েছে তারা।