নয়া পল্টনে পুলিশের গাড়ি ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপির যে নেতা সেই রুহুল কবির রিজভীকে ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে।
Published : 15 Nov 2018, 07:11 PM
আগের দিনের এই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে তিনটি মামলা হয়, তার তিনটিতেই রিজভীসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে আসামি করা হয়েছে।
আসামির তালিকায় থাকা অন্য নেতারা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, তার স্ত্রী ও জাতীয় মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর আকতারুজ্জামান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কফিল উদ্দিন, দলটির মিডিয়া উইংয়ের দায়িত্বে থাকা সামসুদ্দিন দিদার, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক অমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী, হাবিবুর রশিদ হাবিব, যাত্রাবাড়ী থানার সভাপতি নবীউল্লাহ নবী।
এছাড়া যুবদলের রফিকুল ইসলাম মজনু, ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন ও আরিফা সুলতানা রুমাসহ প্রায় দুশজনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মী ছাড়াও কক্সবাজার, পিরোজপুর, নেত্রকোণা, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাইবান্ধা, বগুড়া,ফেনী, যশোর, বাগেরহাট, সিরাজগঞ্জ, খুলনা, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা রয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, রাস্তা অবরোধ, পুলিশকে মারধর, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে এসব মামলা হয়েছে।”
নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রমের মধ্যে বুধবার দুপুরে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের দুটি গাড়ি পোড়ানো হয়, ভাংচুর করা হয় অনেক গাড়ি।
হেলমেট পরা কয়েকজনকে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগে অংশ নিতে দেখা যায়, তারা বিএনপির নয় বলে বুধবারই দাবি করেছিলেন রিজভী।
বৃহস্পতিবার সকালে নয়া পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই ঘটনার ছবি তুলে ধরে তিনি আবারও বলেন, হেলমেট পরিহিতরা গাড়ি ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করেছে, তারা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ‘ক্যাডার’।
রিজভী এই দাবি করলেও দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, সেখানে নাশকতায় জড়িত অধিকাংশকেই শনাক্ত করা হয়েছে, তারা সবাই বিএনপি ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
দিয়াশলাই দিয়ে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগকারী এক যুবকের ছবি দেখিয়ে রিজভী বলেন, ওই যুবক গুলশান থানা ছাত্রলীগের নেতা।
তবে পুলিশের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার মিশু বিশ্বাস বলেছেন, ওই যুবক ছাত্রদলের পল্টন এলাকার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাহজালাল খন্দকার কবীর। রাতে তার বাসায় পুলিশ গিয়েও তাকে পায়নি।
কবীর ছাড়াও নাশকতায় জড়িত অন্তত ১০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া ঘটনার সময় এবং পরে প্রায় ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যারা সবাই বিএনপির নেতাকর্মী।
আসামিদের বাকিদের ধরতে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও তৎপর রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পুলিশের করা তিনটি মামলার ভাষা প্রায় একই। সেখানে বলা হয়েছে মির্জা আব্বাস, রুহুল কবির রিজভী, আফরোজা আব্বাস, নবী উল্লাহ নবী, আকতারুজ্জামান ও কফিল উদ্দিনসহ দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে ও মদদে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে এই হামলা চালানো হয়েছে।
এরপরেই মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে আট দশ হাজার জনের একটি মিছিল আসে এবং রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে। তাদের একটি লেন ছেড়ে দিয়ে যান চলাচলের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলেও শোনেনি। পরে নেতাকর্মীদের নির্বাচন আচরণ বিধি মেনে চলার জন্য রুহুল কবির রিজভীকে মাইক দিয়ে বলানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তা না করে রাস্তায় অবস্থানরত কর্মীরা আকস্মিকভাবে পুলিশের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়।
মামলায় বেশ কয়েকটি ককটেল উদ্ধারের কথাও বলা হয়েছে।
একটি মামলা বিস্ফোরক আইনে, অন্যটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা হয়েছে।
২৩ নম্বর মামলায় ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে মারধর, বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায় পুলিশের পক্ষ থেকে ১৮ রাউন্ড গ্যাসসেল, ৭৮ রাউন্ড শর্টগানের গুলি এবং একটি হ্যান্ড গ্রেনেড ছোঁড়া হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে।
এই ২৩ নম্বর মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ১৩৭ জন। তাদের মধ্যে ২৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।