শেখ হাসিনার সঙ্গে বহুল আলোচিত সংলাপে ‘সমাধান পাওয়া যায়নি’ বলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আরও আলোচনার দুয়ার খোলা রয়েছে।
Published : 02 Nov 2018, 12:36 AM
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে কামাল হোসেনের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বৃহস্পতিবার গণভবনে সংলাপে বসেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে, সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানালেও সংবিধানসম্মত বিষয়ে আলোচনার কথাই বলেছিলেন শেখ হাসিনা।
সংলাপ শেষে ফ্রন্টের প্রধান নেতা কামাল হোসেন বলেছেন, তারা ‘বিশেষ সমাধান’ পাননি। জোটটির সবচেয়ে বড় দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা সন্তুষ্ট নন।
সাড়ে ৩ ঘণ্টার এই সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “আলোচনা অব্যাহত থাকবে।”
আলোচনার অগ্রগতি ভালো হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “ছোট পরিসরে বসার ব্যাপারে নেত্রী বলেছেন, আমার দ্বার উন্মুক্ত। যে কোনো সময় আসতে পারেন। আমাদের আট তারিখ পর্যন্ত আরও কয়েকটি সংলাপ আছে।”
তারপর কি আবার সংলাপ হবে- এ প্রশ্নের উত্তরে কাদের বলেন, “তারা আসলেই হবে। তারা যদি মনে করেন, আশা দরকার। তাহলে আমাদের খবর দিলে আমরা অবশ্যই নেত্রীর পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানাব।”
বৈঠক কি ফলপ্রসূ হয়েছে- এ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বলেন, “অত্যন্ত খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। ঐক্যফ্রন্ট্রের নেতারা যে যা বলতে চেয়েছে, আমাদের নেত্রী অখণ্ড মনোযোগে সবার বক্তব্য শুনেছেন। তাদের বক্তব্যে কেউ কোনো বাধা দেননি। আলোচনায় একটা সুন্দর পরিবেশ ছিল।
“কিছু কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। আমাদের নেত্রী পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, সভা-সমাবেশ তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। তারা যেখানেই সভা করতে চাইবেন করতে পারবেন। তবে রাস্তা বন্ধ করে সভা-সমাবেশ না করে একটা মাঠে; যেমন ঢাকায় করলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করতে পারে।”
কাদের বলেন, “আরেকটি বিষয় তাদের আছে, বিদেশি পর্যবেক্ষক আসবে এবং পর্যবেক্ষণ করবে। আমাদের নেত্রী পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, এ ব্যাপারে আমাদের সমর্থন থাকবে।”
ইভিএমের বিষয়ে মন্ত্রী কাদের বলেন, “তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন, ইভিএম আধুনিক পদ্ধতি। তবে এবার নির্বাচন হয়ত সীমিতভাবে ব্যবহার করবে, এতে আমাদের সমর্থন থাকবে।”
ঐক্যফ্রন্ট যে সাত দফা দিয়েছে তার মধ্যে তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
এ বিষয়ে কাদের বলেন, “তারা রাজনৈতিক মামলার ব্যাপারে একটা প্রশ্ন তুলেছেন। আমাদের সভাপতি বলেছেন, তাদের কাছে যেটা রাজনৈতিক মামলা মনে হয় সেই তালিকাটা আমার কাছে পৌঁছে দিতে। সেটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।”
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “এটা আইনের ব্যাপার, আদালতের বিষয়। আমার তো মনে হয় আইন-আদালতের বিষয় সংলাপের মধ্যে আসতে পারে না।
“আমাদের নেত্রী এটাই জবাব দিয়েছেন যে, এই মামলা আমি ফাইল করিনি। এটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারা বিএনপির লোক ছিলেন। সেকথাটা তিনি বারবার তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।”
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- প্রশ্নে কাদের বলেন, “ড. কামাল হোসেন সাহেবের যে চিঠি, সেই চিঠির উত্তরেও কিন্তু একটা কথা লেখা ছিল। সেখানে ছিল সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনা হবে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে। কাজেই উই ক্যানট গো বিয়ন্ড কনস্টিটিউশন।
“আজকে পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন হয় না। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণও দেওয়া হয়েছে।”
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাতক বলেন, “আসলে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব দায়-দায়িত্ব কিন্তু নির্বাচন কমিশনের। তফসিল ঘোষণার পরপরই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ নির্বাচন সম্পর্কিত সরকারের অনেকগুলো বিষয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত হবে। কাজেই তাদের এসব নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই, শঙ্কার কোনো কারণ নেই।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “বঙ্গবন্ধুকন্যা তাদের কাছে আহ্বন জানিয়েছেন যে একটা অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা সরকারের পক্ষ থেকে আমরা দিচ্ছি। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকার কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। শুধু যেসব বিষয়ে তারা সহযোগিতা চাইবে, সেসব বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।”
বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী মোতায়ানের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, “ড. কামাল হোসেনকে আমাদের নেতৃবৃন্দ বলেছেন যে, আপনিই (কামাল হোসেন) বলুন এদেশে ১৯৭৩ সাল থেকে অনেক নির্বাচন হয়েছে। এরমধ্যে কেবল ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া বাংলাদেশের কোন নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ম্যাজেস্ট্রিসি পাওয়ার ছিল না। কাজেই এখন কেন আপনি চান? এ প্রশ্নটা তাকেই করা হয়েছিল।”
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- এ প্রশ্নে কাদের বলেন, “না এসব বিষয় নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের নেতৃবৃন্দ যেসব যুক্তি দিয়ে কথা বলেছেন, তাতে তাদের অনেকেই কনভিন্সড হয়েছেন বলে আমার বিশ্বাস। তারপরেও তাদের যে প্রতিক্রিয়া, মন্তব্য সেটা তারাই দেবেন।”