নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিশুদের ‘ব্যবহার করে যারা দেশকে অস্থির করার ষড়যন্ত্র করেছিল’, তাদের বিচারের কথা আবারও বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 16 Aug 2018, 09:42 PM
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেছেন, “যারা শিশুদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়, তাদের নিয়ে খেলে বাংলাদেশের জনগণের ভবিষ্যতকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে চায়, আলোর পথে যাত্রায় বাধা দিতে চায়; যে যত বড়ই হোক, সে যদি কোনো অন্যায় করে; তার কি বিচার হবে না বাংলাদেশের মাটিতে?”
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ব্যবহার করে সরকার হটানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছিল বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলে আসছেন।
আন্দোলনের মধ্যে ফেইসবুকে গুজব ছড়িয়ে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ইতোমধ্যে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদসহ বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলাও হয়েছে।
বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পরপরই চালক ও সহকারীকে গ্রেপ্তার করাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সাথে সাথে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। কারা উসকানি দিচ্ছিল?”
সোশাল মিডিয়ায় গুজব ছাড়ানোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে, মিথ্যা কথা বলে বলে, উসকানি দিয়ে দিয়ে দেশে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেছিল।”
নাম না বলেই শহিদুল আলমের বংশ পরিচয় তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা এইগুলো করেছিল, তারা দেখবেন ভেতরে অনেকেই আছে.. অনেক নামী-দামী, অনেক কিছু তারা! অনেক বড় আঁতেল, অনেক বড় ইন্টেলেকচুয়াল, কিন্তু তাদের রক্তের সূত্রটা কোথায়?
“বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি সবুর খান (খান এ সবুর), তার বোনের ছেলে। ওই ধরনের যারা পাকিস্তানি চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাসী, তাদেরই বংশধর থেকে শুরু করে অনেকই এর মধ্যে জড়িত।”
শহিদুল আলমের মুক্তি দাবিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তির বিবৃতি দেওয়ার প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আবার, তাদের ধরলেই দেখি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনেক হৈ চৈ।
“যে যত বড়ই হোক না কেন, কেউ যদি অন্যায় করে, কেউ যদি উসকানি দেয়, এই ছোট্ট ছোট্ট কোমলমতি শিশুদের ব্যবহার করতে যায় তাদের কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য।
“কেউ যদি মনে করেন, খুব নামী-দামী লেখক, সাংবাদিক বা পণ্ডিত হলেই পরে তাদের অপরাধ আর অপরাধ না, তাদের অপরাধ সব ধুয়ে মুছে যাবে, তারা প্রটেকশন পাবে, কেন?”
তাদের জন্য দেশে যারা কলম ধরছেন, তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “লিখতে পারেন খুব ভালো কথা, পত্রিকাও আছে। আমাদের সরকারের আমলে তো সবার বাক স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা, পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাধীনতা ভোগ করে যাচ্ছেন। কিন্তু কী অন্যায়টা করতে যাচ্ছিল, দেশটাকে কোন দিকে নিতে চাচ্ছিলে, সেটা কি তারা উপলব্ধি করেন?
“তারা অনেক জ্ঞানী, অনেক বুদ্ধিমান, অনেক জনপ্রিয় লেখক হতে পারেন, কিন্তু, তাদের ভেতর কি দেশ ও জাতির প্রতি এইটুকু দায়িত্ববোধ থাকবে না? কেউ যদি এই সমস্ত শিশুদেরকে ব্যবহার করে তাদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চায়, তাহলে কি তাদেরকে বাহবা দিতে হবে? আর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সেটাই কি অন্যায় হয়ে যাবে?”
জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখনেও যারা এই চক্রান্ত করে যাচ্ছে, বংশ পরম্পরায় যারা করে যাচ্ছে; বাংলাদেশের জনগণকে বলব, এদের সম্পর্কে আপনাদেরকেও সচেতন থাকতে হবে।”
আন্দোলনরত এক ছাত্রকে তার মা দুপুরে ভাত খাইয়ে দিচ্ছেন; এরকম একটি ছবি ফেইসবুকে দেখার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “যে হা করে ভাত নিচ্ছে, তারও দেখবেন স্কুল ড্রেসের নিচে শার্টের হাতা বেরিয়ে গেছে।
“এই বুড়োদের হঠাৎ গুঁড়া হওয়ার শখ হলে কেন? ছোট ছোট হতে চাইল কীসের জন্য? উদ্দেশ্যটা কী? পেছনে ব্যাগ, ব্যাগের ভেতর থেকে দা বেরুচ্ছে, চায়নিজ কুড়াল বেরুচ্ছে, পাথর বেরুচ্ছে, লাঠিসোঁটা বেরুচ্ছে। স্কুলের ছেলেদের হাতে তো এগুলো থাকার কথা না। তাহলে এরা কোন স্কুলের ছাত্র? তাদেরকে গ্রেপ্তার করলে কাদের দুঃখ, কাদের হাহাকার?”
এ বিষয়গুলোর প্রতি সবাইকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আন্তর্জাতিক যে সাংবাদিক আর আমাদের দেশের যে বুদ্ধিজীবী; তারা কি চোখ খুলে তা দেখবেন না?
“উসকানিদাতাকে গ্রেপ্তার করার সাথে সাথে আর্টিকেল লিখতে পারেন, আর এই অন্যায় যারা করেছিল, একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে, তাদের কি এর বিরুদ্ধে কলম ওঠে না? কলমের কালি ফুরিয়ে গেল? ভাষা বন্ধ হয়ে গেছে? কেন ভাষা বন্ধ হয়ে গেছে? ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে গেল বলে?”
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই আলোচনায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুন ও মোহাম্মদ নাসিম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বক্তব্য রাখেনI