বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে ক্ষোভ-বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে গণপরিবহনের অব্যস্থাপনার জন্য শাজাহান খানের মতো শ্রমিক নেতাদের দায়ী করেছেন বাস মালিক সমিতির এক সময়ের নেতা মির্জা আব্বাস।
Published : 01 Aug 2018, 06:09 PM
গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার সড়কে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-অবরোধের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় পরিবহন খাতের চিত্র তুলে ধরেন।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মির্জা আব্বাসের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের বর্তমান কার্যকরি সভাপতি শাহজাহান খানের।
মির্জা আব্বাস বলেন, “একজন মালিক যখন বাস ছেড়ে দেয়, যখন বাসটা টার্মিনালে চলে যায়, তখন মালিকও বলতে পারেন না, তার বাসটা কে চালাবে? সবচাইতে দুর্ভাগ্যজনক হল এটা। আমি যে ড্রাইভার দিয়েছি, সেই ড্রাইভার নেই, আরেক ড্রাইভার চালাচ্ছে।
“কারণ ওই শাজাহান খানরা। এই শাজাহান খানই দেশের পরিবহন ব্যবস্থাটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে, শ্রমিকদের কনট্রোলের বাইরে নিয়ে গেছে।”
বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন খাতে নিয়ন্ত্রণ বদলায়, সেটা মালিক ও শ্রমিক দুই সংগঠনের ক্ষেত্রেই।
পরিবহন শ্রমিকদের সমালোচনা করতে গিয়ে মালিক সমিতির সাবেক নেতা মির্জা আব্বাস আওয়ামী লীগের শাজাহান খানের সঙ্গে তার দলীয় চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের কথাও বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, “১৯৯১ সাল সম্ভবত, আমি সমিতির সভাপতি। তখন সপ্তাহের দুদিন সমিতির অফিসে বসতাম। আমি বাস শ্রমিকদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি।
“আমি বলে দিয়েছিলাম, প্রত্যেক মালিককে তার বাসের চালকের নিয়োগপত্র দিতে হবে। কারণ মালিকের একটা জবাবদিহিতা থাকে। আমি এই শ্রমিক ও হেলপারদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলাম। আজকে কী অবস্থা? আপনারা তো নিজেরাই দেখছেন।
“ওই সময়ে শ্রমিক নেতা শাজাহান খান ও শিমুল বিশ্বাস ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইরে অপেক্ষা করেছে আমার সাথে দেখা করার জন্য। কী জন্য জানেন? শ্রমিকদের চাঁদা বাড়িয়ে দিতে হবে। আমি বলেছিলাম শ্রমিকদের চাঁদা বাড়ানো যাবে না। যাই হোক, সেই সমস্ত লোকের হাতে আজকে পরিবহন ব্যবস্থা পড়েছে।”
দুই কলেজছাত্রের মৃত্যুর জন্য গণপরিবহণের বিশৃঙ্খলাকেই দায়ী করেন মির্জা আব্বাস।
“যদি ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিক থাকত, যদি পরিবহন ব্যবস্থা সুবিন্যস্ত হত,যদি শাজাহান খানরা প্রশ্রয় না দিত, যদি তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হত, তাহলে কখনও এই অবস্থা হত না।”
দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর শোনার পর নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের আচরণেরও সমালোচনা করেন সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস।
“দুই শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ঘটনা নিয়ে শাজাহান খান কী বললেন? ভারতেও তো দুর্ঘটনা ঘটে, কেউ তো কথা বলে না। হাসতে হাসতে কথাটা বললেন। সেই হাসিটা কী? আমরা মনে পড়ল, এটা পাকিস্তান আমলের ইয়াহিয়া খানের হাসির মতো। এই পৈশাচিক হাসির হাত থেকে আমাদের রক্ষা পেতে হবে।”
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামার প্রসঙ্গ টেনে এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল সোশাল মিডিয়াতে দেখলাম একজন ছোট শিশুকে একজন পুলিশ ওয়াকিটকি হাতে নিয়ে কলারে হাত ধরে রেখেছে। এর চাইতে বেদনাদায়ক কী হতে পারে বাংলাদেশের মানুষের জন্য?”
“যে বিবেকহীন পুলিশ আমার ট্যাক্সের টাকায় বেতন পায়, সে কি না আমার সন্তানের কলার ধরবে, এটা অসহ্য। এটা সহ্য করা যায় না।”
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্র আরিফুল ইসলামের লাশ বুড়িগঙ্গায় পাওয়ার ঘটনা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন মির্জা আব্বাস।
সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, এটা প্রমাণ হয়ে গেছে। সেই নির্বাচনে কোনো আমরা যাব? কোনো কারণ নাই।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবে জিয়া নাগরিক ফোরামের উদ্যোগে ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন : জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কে এ জামানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, ইউনুস মৃধা বক্তব্য রাখেন।