মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে আলোচিত সাংসদ আবদুর রহমান বদি বিদেশে যাওয়ার পেছনে সরকারের সায় রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ।
Published : 06 Jun 2018, 08:33 PM
তিনি বলছেন, মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় নাম থাকা এই সংসদ সদস্য বিদেশে যাওয়ার পর থেকে চলমান মাদকবিরোধী অভিযান গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।
অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে অভিযোগ করে অবিলম্বে এই অভিযান বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ।
এসব ‘হত্যাকাণ্ড’ তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত মাসের মাঝামাঝিতে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে অন্তত ১৩০ জন নিহত হয়েছেন।
বন্দুকযুদ্ধের নামে তাদের ‘হত্যা’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মানবাধিকারকর্মীরাও। দেশের শীর্ষস্থানীয় লেখক-অধ্যাপক, কবি ও সংস্কৃতিকর্মীরাও এই ‘বিচার বহির্ভূত হত্যার’ সমালোচনা করে অবিলম্বে তা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
এরপরও প্রতি রাতেই পুলিশ-র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রাণহানির মধ্যে বুধবার এক আলোচনা সভায় অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় সোচ্চার হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ।
মাদক নির্মূলে সরকার আন্তরিক হলে আবদুর রহমান বদি বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পেতেন না বলে মনে করেন তিনি।
মওদুদ বলেন, “এমপি বদি যাকে দেশের সকল মানুষ জানে একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে তাকে আপনারা বিদেশে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করে দিলেন। এর মাধ্যমে মাদকবিরোধী অভিযানে সরকারের আর গ্রহণযোগ্যতা থাকে না।”
কক্সবাজার-৪ আসনের (টেকনাফ-উখিয়া) আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বদি ও তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের বিরুদ্ধে মাদক পাচারে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। সরকারি সংস্থার প্রতিবেদনেও তার বিরুদ্ধে মাদক মাদকপাচারে মদদদানের অভিযোগ উঠে এসেছিল।
মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্যে বদির কথা উঠে আসে। ফেইসবুকেও ব্যাপক আলোচনা হয় তাকে নিয়ে। টেকনাফের এই সাংসদকে নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, বদির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, কিন্তু প্রমাণ নেই।
আলোচনার মধ্যে গত শুক্রবার আবদুর রহমান বদি ‘ওমরা পালনের জন্য’ সৌদি আরব গেছেন বলে তার ব্যক্তিগত সহকারী হেলাল উদ্দিন জানান।
মওদুদ আহমদ বলেন, “মাদকবিরোধী এই অভিযান দূরভিসন্ধিমূলক ও ষড়যন্ত্রমূলক। অবিলম্বে মানুষ হত্যা করার এই অভিযান বন্ধ করুন।”
অভিযানে নিহতের প্রতিটি ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন প্রধান বিচারপতির অধীনে একটি তদন্ত কমিশন করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী প্রত্যেকটি মানুষ যাদের হত্যা করা হয়েছে প্রত্যেকটি হত্যার বিচার করতে হবে এবং তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “এখন বলা হচ্ছে যে, এখন বিএনপির মাদক ব্যবসায়ীদের ধরা হবে। তার মানে কী, এতদিন যাদের মেরেছেন তারা কি তাহলে আওয়ামী লীগের মাদক ব্যবসায়ী ছিল? এটা কেন বলছেন? আমরা যেটা আশঙ্কা করেছিলাম, এ অভিযানের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা হবে।
“অলরেডি শুরু হয়েছে- এই অভিযানের আদলে আমাদের অনেক নেতা-কর্মীদের তারা তালিকাভুক্ত করছেন। চাঁদাবাজি করছে পুলিশ। এই মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশের একটি অংশ সম্পূর্ণভাবে জড়িত। কিন্তু তাদের (পুলিশ) এই অপরাধ ঢাকা দেওয়ার জন্য আজকে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে এই অভিযান শুরু করেছেন।”
‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতদের মধ্যে কোনো ‘শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী’ নেই দাবি করে মওদুদ বলেন, “এই অভিযানের নামে আজকে মানুষ হত্যার লাইসেন্স দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? সংবিধানে কোন বিধান আছে যে বিধান অনুযায়ী আপনি বিচার ছাড়া একজনকে হত্যা করতে পারেন?”
দেশে ‘আইন নেই বলে বিচার বহির্ভূত হত্যা অবলীলাক্রমে’ চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“যে সরকার নির্বাচিত নয়, যে সরকার আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না সেই সরকারই এই ধরনের অভিযান চালাতে পারে এবং নির্দেশ দিতে পারে বিনা বিচারে গুলি কর,যত পার মানুষ মার,” আওয়ামী লীগের সমালোচনায় বলেন মওদুদ।
আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও সাংবাদিক শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী মাহমুদুর রহমান ও শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার, আমার দেশ, দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভিসহ বন্ধ সব সংবাদমাধ্যম খুলে দেওয়া, সব ধরনের সাংবাদিক নির্বতনমূলক আইন প্রত্যাহার এবং সাংবাদিক নির্যাতন সম্পূর্ণভাবে বন্ধের দাবি জানান।
আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এসব দাবি পুরণ না হলে কর্মসূচি মাঠে নামার হুমকি দেন তিনি।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় মাহমুদুর রহমান, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।