সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চেয়ে চিঠি দেওয়ার ছয় দিন পর বিএনপিকে ২৩টি শর্তে অনুমতি দিয়েছে পুলিশ।
Published : 11 Nov 2017, 11:28 AM
সমাবেশের আগের দিন শনিবার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা মহানগর পুলিশের অনুমতি পাওয়ার কথা জানান।
৭ নভেম্বর উপলক্ষে রোববার বিকালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে যাচ্ছে বিএনপি। এতে দলটির নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তৃতা দেওয়ার কথা।
অনুমতি দিতে পুলিশের কালক্ষেপণে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছিল বিএনপি।
তার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শনিবার সকালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপির সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হলে সরকার সহযোগিতা করবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।”
‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে ৭ নভেম্বরই এই সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু ঢাকায় সিপিএ সম্মেলনের কারণ দেখিয়ে তাদের অনুমতি দেয়নি পুলিশ।
এরপর ৬ নভেম্বর চিঠি দিয়ে ১২ নভেম্বর সমাবেশ করতে চাওয়ার কথা ঢাকা মহানগর পুলিশকে জানায় বিএনপি, যাতে কর্মসূচির এক দিন আগে সাড়া মিলল।
ফখরুল বলেন, “জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের যে গণসমাবেশ, এই গণসমাবেশের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে এই মাত্র ডিএমপির একটি সম্মতিপত্র আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। ২৩টি শর্ত দিয়ে তারা আমাদেরকে এই গণসমাবেশ অনুষ্ঠানের সম্মতি প্রদান করেছে।”
একদিন আগে অনুমতি পেলেও সমাবেশের কাজ গুছিয়ে আনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “ইতোপূর্বে আমরা ১২ ঘণ্টার নোটিসেও সমাবেশের সফল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।”
অতীতের চেয়ে এবার পুলিশ ‘একটু আগে‘ অনুমতি দেওয়ায় ডিএমপিকে ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।
সমাবেশ সফল করতে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, “আমি সরকার, সরকারি দল ও ডিএমপিকে অনুরোধ জানাতে চাই, এই গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত করার জন্য আমরা আপনাদের সহযোগিতা চেয়েছি।
“আশা করি আপনারা সহযোগিতা করবেন। সমাবেশে বাধা দিয়ে গণতান্ত্রিক যে পরিবেশ আছে, তার বিঘ্ন ঘটাবেন না।”
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে কোনো ধরনের উসকানি না দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি কোনো ধরনের ফাঁদে পা না দিতে দলের নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দেন বিএনপি মহাসচিব।
সমাবেশের আগে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ের অভিযোগও করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
ফখরুল বলেন, “ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্নস্থানে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারসহ পুলিশি তাণ্ডব চলছে।”
শুক্রবার রাতে শাহজাহানপুরে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বৈঠকের পর নেতা-কর্মীরা বাসায় ফেরার পথে ২০জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান তিনি।
এই জনসভার মধ্য দিয়ে প্রায় দেড় বছর পর ঢাকায় কোনো সমাবেশে বক্তৃতা নিয়ে আসছেন খালেদা জিয়া। এর আগে গত বছরের ১ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি। তার আগে ৫ জানুয়ারি নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জনসভায় তিনি অংশ নেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সর্বশেষ সমাবেশ হয়েছিল ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি। তার ১৫ দিন আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় থাকে আওয়ামী লীগ।
যে সব শর্তে অনুমতি
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মহা. আশরাফুজ্জামান স্বাক্ষরে বিএনপিকে দেওয়া চিঠিতে ২৩টি শর্তের উল্লেখ রয়েছে।
বিএনপিকে দুপুর ২টায় শুরু করে বিকাল ৫টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করতে বলা হয়েছে। সমাবেশ শুরুর সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা আগে নেতা-কর্মীদের ঢুকতে দেবে পুলিশ।
শর্তে যা যা আছে
# বিকাল ৫টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করতে হবে।
# ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আসে- এমন কোনো ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য দেওয়া বা প্রচার করা যাবে না।
# লাঠি-সোঁটা, ব্যানার, ফেস্টুনের আড়ালে লাঠি-রড বহন করা যাবে না।
# মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসা যাবে না।
# উস্কানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
# রাষ্ট্রবিরোধী, আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি বা জননিরাপত্তা বিরোধী কার্যকলাপ চালানো যাবে না।
# সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন সংলগ্ন স্থানে অনুষ্ঠানের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
# সমাবেশের নির্ধারিত সময়ের আগে উদ্যান বা তার আশপাশের রাস্তা-ফুটপাটে সমবেত হওয়া যাবে না।
# যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়- এমন কিছু করা যাবে না।
# নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানস্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
# নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
# অনুমোদিত স্থানের বাইরে সাউন্ড বক্স ব্যবহার করা যাবে না।