সরকার নিজেদের ব্যর্থতা থেকে জনদৃষ্টি অন্যত্র সরাতে প্রায় চার দশক মওদুদ আহমেদের দখলে থাকা গুলশান এভিনিউয়ের বাড়িটি ভাঙছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
Published : 25 Jun 2017, 03:43 PM
রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “জনাব মওদুদ সাহেবের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনদৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়া। ঈদের আনন্দের মধ্যে সারা দেশে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আর শোকের মাতমে বিপন্ন মানুষকে এদিকে ঠেলে, মানুষের চোখকে মওদুদ সাহেবের গুলশানের বাসার দিকে নিবদ্ধ করা হয়েছে; যাতে সরকারের চরম ব্যর্থতার দিকে মানুষের চোখ না পড়ে।
“মওদুদ সাহেবের গুলশানের বাড়িটিকে বেআইনিভাবে গুঁড়িয়ে দিতে যে আক্রমণ চালানো হয়েছে, আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর গত ৭ জুন মওদুদ আহমদকে গুলশানের ১৫৯ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক। দখল বুঝে নেওয়ার ১৮ দিনের মাথায় রোববার সকালে ওই বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করে তারা।
আইনি লড়াইয়ে হেরে গেলেও আদালত বা রাজউকের পক্ষ থেকে তাকে কোনো রকম নোটিশ দেওয়া ছাড়া উচ্ছেদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিজের দখলি স্বত্বে বিঘ্ন না করার জন্য সরকার ও রাউজকের বিরুদ্ধে একটি দেওয়ানিসহ দুটি মামলা করেছেন জানিয়ে সেগুলোর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি ভাঙা বেআইনি ও ‘গায়ের জোরে’ বলে ইতোমধ্যে মন্তব্য করেছেন মওদুদ।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভীও এ কাজকে বেআইনি বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, “দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও দেশের খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের গুলশান এভিনিউর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার যে কার্য্ক্রম শুরু হয়েছে, তা সম্পূর্ণ বেআইনি। আদালতের নির্দেশনা ব্যতিরেখে সরকার এই বাড়িটি গুঁড়িয়ে দিল।
“উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন ও দেওয়ানি মামলা পেন্ডিং থাকা অবস্থায় ভোটারবিহীন সরকারের এই পদক্ষেপ আইনকে দুর্বিনীত কায়দায় পদদলিত করারই শামিল। তারা (সরকার) যে আইনকে পরোয়া করে না এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় তা আবারো এই ঘটনায় প্রমাণিত হল।”
ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির বিষয়েও কথা বলেন বিএনপি নেতা রিজভী।
তিনি বলেন, “এবার ঈদে ঘরমুখী মানুষ যেন আনন্দ ও শঙ্কার আলোকছায়ার মধ্যে আবদ্ধ। নাড়ির টানে বাড়িমুখী মানুষের যাত্রাপথে ভোগান্তি এখন কুৎসিত রূপ ধারণ করেছে। সড়ক দুর্ঘটনা ও গন্তব্য পৌঁছাতে অন্তহীন সময়ের নিদারুণ যন্ত্রনায় মানুষের সব আনন্দ কর্পুরের মতো উড়ে যাচ্ছে।
“যোগাযোগমন্ত্রী ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাতায়াতে স্বস্তি বিরাজমান বলে অনর্গল বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। অথচ ঈদের যাত্রায় চলছে মৃত্যুর মিছিল। গণমাধ্যমের প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, গত ছয়দিনে সড়ক দৃর্ঘটনায় সারাদেশে ৮১ জন নিহত ও ২২২ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল সংঘটিত রংপুরের সড়ক দুর্ঘটনা সবচেয়ে হৃদয় বিদারক ও মর্মস্পর্শী।”
সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সময় দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে রিজভী বলেন, “ঈদের মানুষের স্বপ্নের বাড়ি ফেরা করুণ কান্নায় পরিণত হওয়ার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে সরকারের মিথ্যা উন্নয়নের ফানুস। উন্নয়নের বিষয়ে সরকারের উচ্চনাদি ছলনার বলয়ের নির্মোক ছিঁড়ে খুঁড়ে কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে।
“উন্নয়ন যদি লুটপাটের সংস্কৃতির ওপর দাঁড়ায়, তাহলে সেখানে শুধুমাত্র শাসকদলের নেতা-কর্মীদের লাবণ্যময় চেহারা দেখা যাবে। সাধারণ মানুষের চেহারা হবে মলিন পাণ্ডুবর্ণ। হতাশা ও প্রলম্বিত দীর্ঘশ্বাসই তাদের অবলম্বন। রাষ্ট্রীয় অনাচারের কারণেই উন্নয়ন ব্যয় বেড়ে গেছে। লুটপাট, আত্মসাৎ, দখল অপরিহার্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে আমরা দেখছি অবকাঠামো উন্নয়নের দুদর্শা, যার চরম ভোগান্তি মানুষকে ভোগ করতে হচ্ছে এই ঈদের আনন্দে।”
ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তির জন্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ‘ব্যর্থতাকে’ দায়ী করে তার পদত্যাগ করা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার উপস্থিত ছিলেন।