ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম-সহিংসতা চলছে দাবি করে বিএনপি বলেছে, জানালেও নির্বাচন কমিশন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
Published : 28 May 2016, 03:27 PM
পঞ্চম ধাপে ৭১৭টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ চলাকালে শনিবার দুপুরে নানা অভিযোগ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে দেখা করে এই হতাশার কথা জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর পর বেলা ২টার পরে শেরে বাংলা নগরে ইসিতে যায় বিএনপির প্রতিনিধি দল, ততক্ষণে বিভিন্ন স্থানে ভোটের সংঘাতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে।
নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, “ভোট কেন্দ্র দখল, জালভোট, কারচুপি অব্যাহত রয়েছে। এটা ভোটের নামে খেলা হচ্ছে, তামাশা চলছে।
“সব জেনে-শুনে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না ইসি। তারা জেগে ঘুমাচ্ছে। কেউ যদি জেগে ঘুমিয়ে থাকে, করার কিছু থাকে না।”
“এখন ইসিকে জানানোর চেষ্টাও বৃথা,” বলেন এই বিএনপি নেতা।
গত মার্চ মাসে ইউপি নির্বাচনের শুরু থেকে অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। তবে ইসি ঢালাও অভিযোগ না করে তাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিতে বলে আসছে।
নজরুল বলেন, “স্থানীয় প্রশাসন সাহায্য করছে ক্ষমতাসীন দলকে; আর দলকে সহায়তা করছে ইসি। আমরা প্রতিবারের মতো এবারও কথা বলেছি সিইসির সঙ্গে, লিখিত অভিযোগ দিই। কিন্তু এসব দিয়েই বা লাভ কী? পরিস্থিতির তো কোনো পরিবর্তন হয় না।”
নজরুল জানান, ভোটের অনিয়ম দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতেই বারবার ইসির কাছে বিষয়গুলো তুলে ধরা হচ্ছে।
“ভোটের নামে চলমান অরাজকতার দমন করার দায়িত্ব ইসি ও প্রশাসনের। ইসিও তার ক্ষমতা প্রয়োগ করছে না। ইসির অসহায়ত্বের প্রতি আমাদের সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে তাদের অসহায় হওয়ার বিষয় নয়। প্রমাণ হচ্ছে- এ সরকার ও বর্তমান ইসির অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। দেশবাসী তা দেখছে।”
এদিকে ভোট চলার মধ্যেই নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নির্বাচনে কমিশনের প্রত্যক্ষ মদদেই জনগণের ভোটাধিকার ‘লুট’ করা হচ্ছে।
“বিভিন্ন জায়গা থেকে যে খবর আমরা পাচ্ছি, তাতে সর্বত্র ভোট কেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি ও ব্যালট পেপারে ছিনতাই, অবাধে ব্যালটে সিল মারার ঘটনা চলছে। প্রত্যেক ধাপের মতোই আজকে এই ঘটনা ঘটছে।”
“এই পর্যন্ত যেসব ঘটনা ঘটেছে, আমি বলতে চাই, নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ মদদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় জনগণের ভোটাধিকার যেভাবে লুট করা হয়েছে, বিএনপির পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানাচ্ছি,” বলেন তিনি।
সেক্ষেত্রে পুনর্নির্বাচন চান কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নে রিজভী বলেন, “যে নির্বাচন কমিশন নিথর, নির্বাক ও বোবা। সেখানে তাদের কাছে দাবি করে কী লাভ? আপনাদের মাধ্যমে আমরা জনগণের কাছে তুলে ধরছি। মানুষ দেখুক, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে যাদেরকে বসিয়েছে, তারা কী ধরনের ব্যক্তি, তাদের আচরণ কী?”
নির্বাচন কমিশন সরকারের ‘সম্পূর্ণ আজ্ঞাবাহী’ হিসেবে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
“আসলে এই কমিশন বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করারই একটা যন্ত্র হিসেবে কাজ করছে। তারা তাদের চাকরি রক্ষার্থে কাজ করছে, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য নয়।”
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার ধামরাই, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া,ফেনীর দাগনভূঞা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, কুমিল্লার হোমনা, তিতাস, নরসিংদী সদর, শরীয়তপুরের নড়িয়ায় ভোটে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়।
রিজভী বলেন, “ভোটারদের নিজের ভোটটি নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে, নির্ঝঞ্ঝাটে দেওয়ার পরিবেশ এখন ইতিহাসের পাতায় চলে গেছে। এখন শুধু নির্বাচনী সন্ত্রাস, ভোট চুরি, ভোট লুট, আতঙ্ক ও রক্তাক্ত সহিংসতা ডালপালা বিস্তার করেছে।”
সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন।