আমার বার্তা হচ্ছে যে, সামাজিক ভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বাল্যবিবাহ বা শিশু বিবাহের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরতে হবে সবার কাছে।
Published : 07 May 2024, 08:04 PM
বাল্যবিয়ের ফলে কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক নানা রকম জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় বলে জানান রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের গাইনী চিকিৎসক জয়া চাকমা। তিনি বলেন, বাল্যবিয়ের কারণের রাষ্ট্রও জাতীয় ভাবে ক্ষতির শিকার হয়। হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় বাল্যবিয়ে বন্ধে পরামর্শও দেন তিনি।
হ্যালো: আমরা আপনার কাছে বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর দিক নিয়ে জানতে চাই।
জয়া চাকমা: শিশু বিবাহের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে, শিশু বিবাহ কী? বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সে কোনো মেয়ের ও ২১ বছরের কম বয়সী কোনো ছেলের বিবাহ হলে তাকে আমরা শিশু বিয়ে বলি।
শিশু বিবাহের ক্ষতি হলো, এতে করে মেয়ে শিশুর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়। সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষতিও হয়; সর্বোপরি জাতীয় ভাবেও ক্ষতি হয়।
শারীরিক ও মানসিক বিকাশের আগেই যদি তাদের বিয়ে হয় তাহলে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা বেড়ে যায়। তেমনি পারিবারিক ভাবেও নির্যাতন ও যৌতুকের লেনদেনের মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।
শিশু বিবাহের ফলে স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুদের হার বেড়ে যায়। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।
হ্যালো: শিশু বিবাহের শিকার কিশোরীর কী ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি হতে পারে?
জয়া চাকমা: স্বাস্থ্যের কথা যদি বলি, তাহলে শারীরিক স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বলতে হয়। জোর করে কোনো শিশুকে বিয়ে দেওয়ার ফলে শিশুটি মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তা যদি সে মেনে নিতে না পারে, তখন স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে।
শারীরিক ও মানসিকভাবে তখন সে চাপ কিশোরী নিতে পারে না। তখন সে ডিপ্রেশনে ভোগে। অবসাদগ্রস্ত হয়। মানসিক সুস্থতার অভাবে সে নানা চিন্তা করতে থাকে, যার প্রভাব তার শরীরের পড়ে। আর কিশোরী বয়সে যদি সে মা হতে যায়, তাহলেও স্বাস্থ্যের উপর নানা প্রভাব পড়ে। এতে গর্ভপাতের সম্ভাবনাও থাকে।
হ্যালো: অপ্রাপ্ত বয়সে কিশোরীর গর্ভধারনের ফলে কী কী ক্ষতি হতে পারে?
জয়া চাকমা: অপ্রাপ্ত বয়সে যদি সে গর্ভধারণ করে তাহলে তার শারীরিক ও মানসিকভাবে যে ক্ষতি হবে সেটা আগেও বলেছি। গর্ভধারণে যেসব জটিলতা দেখা দেয়, তা হয়ত তার জীবনকে মৃত্যু ঝুঁকির দিকে নিয়ে যাবে।
হ্যালো: শিশু বিবাহের শিকার হওয়া কিশোরী কতটুকু সুস্থ বাচ্চার জন্ম দেয়?
জয়া চাকমা: মা যদি কম বয়সী তথা আঠারো বছরের কম হয়, তখন তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ পরিপূর্ণ হয় না। তখন সে অবস্থায় যদি মা হয় তাহলে মা ও নবজাতক শিশুর উপর প্রভাব পড়ে। যেমন উচ্চ রক্তচাপ,অপরিপক্ব সন্তান জন্ম হওয়া,গর্ভে শিশু ভালো ভাবে বেড়ে না ওঠায় কম ওজনের শিশুর জন্ম হতে পারে।
অনেক সময় সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি করতে হয়। তখন সেই কিশোরী মায়ের মনে নানা প্রশ্ন আসে। প্রথম বাচ্চা যদি সিজারের মাধ্যমে হয়, তাহলে সারা জীবনের জন্য সেটা তার জন্য একটা বোঝা হয়। সে ক্ষেত্রে দেখা যায়, কম বয়সী মায়ের মৃত্যুহারও বেড়ে যায়। আবার নবজাতকের মৃত্যুর হারও বাড়ে।
হ্যালো: শিশু বিবাহ প্রতিরোধে আপনি একজন চিকিৎসক হিসেবে সমাজের জন্য কী বার্তা দিতে চান?
জয়া চাকমা: আমার বার্তা হচ্ছে যে, সামাজিক ভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বাল্যবিবাহ বা শিশু বিবাহের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরতে হবে সবার কাছে। এই বার্তাটা যেতে হবে যে,বাল্যবিয়ের কারণে আপনার কিশোরী সন্তানের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাই আপনারা এই ব্যাপারটির বিরুদ্ধে দাঁড়ান।
পরিবার ও সমাজ যদি সচেতন হয়, তাহলে আমরা বাল্যবিয়ের প্রতিরোধ করতে পারব l আমি আপনি আমরা সবাই যদি সচেতনতার সঙ্গে এগিয়ে আসি, তাহলে আমরা শিশুদের বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা করতে পারব।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: খাগড়াছড়ি।