ইউপিতে বিএনপির তিনগুণ ভোট আওয়ামী লীগের

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের শহর এলাকার ভোটের চেয়ে গ্রামের লড়াইয়ে আরও ভালো করেছে ক্ষমতাসীন দল।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2016, 06:46 PM
Updated : 23 March 2016, 06:46 PM

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রাথমিক হিসাবে বলছে, স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিএনপির তিনগুণের বেশি ভোট পেয়েছে আওয়ামী লীগ।

মঙ্গলবারের এই ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও বিএনপি বলেছে, নির্বাচনের নামে তামাশা হয়েছে।

বুধবার ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, নির্বাচনে প্রায় ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোটারের ব্যাপক উপস্থিতির কারণ হিসেবে নারীদেরই বেশি কৃতিত্ব দিচ্ছে ইসি।

সচিব বলেন, “নারী ভোটারদের উপস্থিতি উল্লেখ করার মতো। গ্রামের মা-বোনেরা যেভাবে ভোটগ্রহণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন- তা প্রশংসার দাবিদার। এটা বিস্ময়কর, এই রকম অংশগ্রহণ আমাদের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”

ইসির সরবরাহকৃত ফলের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৫২২ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেয়েছে ৩৬ লাখ ৭৯ হাজার ৫৮২ ভোট এবং বিএনপির ধানের শীষ পেয়েছে ১১ লাখ ৩২ হাজার ৮৮ ভোট। প্রদত্ত ভোটের ৫৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ আওয়ামী লীগ এবং ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ পেয়েছে বিএনপি।

ইসির হিসাবে, সর্বশেষ পৌর নির্বাচনেও ৭৪ শতাংশ ভোট পড়ে। এতে আওয়ামী লীগ ৫৪ শতাংশ ও বিএনপি ২৮ শতাংশ ভোট পায়।

ইসির জনসংযোগ শাখার তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার এক চতুর্থাংশ ইউপিতে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। ৭১২টি ইউপির মধ্যে ৫২২টির প্রাপ্ত ফল পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। ভোট পড়ার হার ৭৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। তবে ছয় ইউপিতে ৯০ শতাংশের বেশি, ১২৭টিতে ৮০ শতাংশ এবং আড়াই শতাধিক ইউপিতে ৭০ ভাগের বেশি ভোট ভোট পড়েছে।

ইসি এ ভোটকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য বললেও প্রধান দুই দলের মত দুরকম। আওয়ামী লীগ বলেছে, ৯৯ শতাংশের বেশি ইউপিতে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। বিএনপি বলছে, সবকটিতেই কারচুপি হয়েছে; যা তামাশার নির্বাচনের পরিণত হয়েছে।

প্রথম ধাপে দলের ভোট

ভোটের পরদিন ইসি সচিব জানান, ৫২২টির চেয়ারম্যান পদের প্রাথমিক ফল পৌঁছেছে।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৯৪টিতে, বিএনপি ৩৫টিতে, জাতীয় পার্টি (জেপি) ৭টিতে, ওয়ার্কার্স পার্টি ২টিতে, জাতীয় পার্টি ১টিতে, জাসদ ৩টিতে, ইসলামী আন্দোলন ১টিতে ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৭৯টিতে জয় পেয়েছে।

এতে আওয়ামী লীগ ৫৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে। দলটির প্রাপ্ত ভোট ৩৬ লাখ ৭৯ হাজার ৫৮২টি। বিএনপি পেয়েছে ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ ভোট। তাদের মোট ভোট ১১ লাখ ৩২ হাজার ৮৮টি। আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপি এক তৃতীয়াংশ ভোট পেয়েছে।

বাকি পাঁচ দলের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ছাড়া অন্যরা এক শতাংশের কম ভোট পেয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১টিতে জয় পেলেও তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৬০ হাজার ৪২ ভোট পেয়েছে, যা প্রদত্ত ভোটের দশমিক ৮৯ শতাংশ। জাতীয় পার্টি (জেপি) ৬৫ হাজার ৩৫৬ ভোট পেয়েছে, যা প্রায় ১ শতাংশ। কমিউনিস্ট পার্টি ৫ হাজার ২২৮ ভোট পেয়েছে, যা দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

ওয়ার্কার্স পার্টি ৩৫ হাজার ৬২৫ ভোট পেয়েছে, যা প্রদত্ত ভোটের দশমিক ৫৩ শতাংশ। বিকল্প ধারা মাত্র ৩৮৮ ভোট পেয়েছে। জাসদ পেয়েছে ৩৭ হাজার ৪৩১ ভোট, যা প্রদত্ত ভোটের দশমিক ৫৫ শতাংশ। অন্য দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা দেড় হাজারের কম।

৯০ শতাংশের বেশি ভোট

পঞ্চগড়ের চারটি ইউপিতে রেকর্ড ভোট পড়েছে। সর্বোচ্চ ৯৩ দশমিক ৩১ শতংশ ভোট পড়েছে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধায়।

আওয়ামী লীগের মো. কুদরই-ই-খুদা এ ইউপিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। সেখানে ৯ হাজার ৯৬০ ভোটের মধ্যে ৯ হাজার ২৯৪টি ভোট পড়েছে। বাতিল ভোটের সংখ্যা ২১৩টি।

উপজেলার বডাবুড়ি ইউপিতে ভোট পড়েছে ৯০ দশমিক ৯০ শতাংশ। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. তারেক হোসেন জয় পেয়েছেন। নির্বাচনে ৭ হাজার ৯৫৫ ভোটের মধ্যে ৭ হাজার ২৩১ ভোট পড়েছে। ১৪৬টি ভোট বাতিল হয়ে বৈধ ভোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮৫টি।

ভজনপুর ইউপিতে ৯১ দশমিক ৪১ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচনে বিএনপির মো. মকসেদ আলী জয়ী হয়েছেন। ইউপিতে ১ হাজার ১২৯ ভোটের মধ্যে পড়েছে ১ হাজার ৩২টি।

একই উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নে ৯০ দশমিক ২০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এ ইউপিতে বিএনপির মো. মহসিন উল হক বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন।

এছাড়া ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নে। সেখানে আওয়ামী লীগের মো. আব্দুস সালাম বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

খুলনার রুপসা উপজেলার শ্রীফলতলা ইউপিতে ৯১ দশমিক ৬৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। এ ইউপিতেও আওয়ামী লীগের মো. ইসহাক সরদার বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন।

৮০ শতাংশের বেশি ভোট

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমবাড়ীয়া, আমলা, কুর্শা, ছাতিয়ান, তালবাড়ীয়া, পোড়াদহ, বহুলবাড়ীয়া, বারুইপাড়া, মালিহাদ, সদরপুর; খুলনার তেরখাদার আজগড়া; দাকোপের কামারখোলা, কৈলাশগঞ্জ, তিলডাঙ্গা, দাকোপ, পানখালী, বাজুয়া, বানীশান্তা, লাউডোব; দিঘলিয়ার আড়ংঘাটা; পাইকগাছার কপিলমুনি, গদাইপুর, দেলুটি, লতা; বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুর, বাটিয়াঘাটা, বালিয়াডাঙ্গা, ভান্ডারকোট; রুপসার আইচগাতী, টি.এস. বাহিরদিয়া, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের এলাঙ্গী, কুশনা, দোড়া, বলুহর, সাফদারপুর; বাগেরহাটের ফকিহাটের নলধা-মৌভোগ, পিলজংগ, বাহিরদিয়ামানসা, বেতাগা, লখপুর, শুভদিয়া; মোংলার চিলা; মোড়েলগঞ্জের বনগ্রাম; রামপালের গৌরম্বা, ভোজপাটিয়া, রাজনগর, হড়কা; যশোরের মনিরামপুরের কাশিমনগর, কুলটিয়া, চালুয়াহাটি, ঢাকুরিয়া, নেহালপুর, ভোজগাতি, মনিরামপুর, মনোহরপুর, হরিদাশকাটি; সাতক্ষীরার আশাশুনির আনুলিয়া, আশাশুনি, কাদাকাটি, কুল্যা, দরগাহপুর; তালার খলিলনগর; সাতক্ষীরা সদর, ব্রহ্মমরাজপুর, ভোমরা; কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং, সেন্টমার্টিন দ্বীপ; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের আড়াইসিধা, তারুয়া, পশ্চিমতালশহর, লালপুর; বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছলিমাবাদ, তেজখালী; কিশোরগঞ্জের বিন্নাটি, মহিনন্দ, মারিয়া, যশোদল, লতিফাবাদ; গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার গোপালপুর; নেত্রকোণার খলিয়াজুরীর খালিয়াজুরি, গাজীপুর, চাকুয়া; মাদারীপুরের শিবচরের সদর; ময়মনসিংহের ফুলপুরের বওলা; পটুয়াখালীর বাউফলের চন্দ্রদ্বীপ; রাঙ্গাবালীর চালিতাবুনিয়া; পিরোজপুরের নেছারাবাদের বলদিয়া; বরগুনার নলটোনা, বরগুনা সদর; বরিশাল সদরের চন্দ্রমোহন, জাগুয়া; ভোলার দৌলতখানের মেদুয়া; দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, পালশা, বুলকীপুর, আলীহাট, খট্টামাধবপাড়া, বোয়ালধার; পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার তেঁতুলিয়া, শালবাহান; রংপুরের পীরগাছার কল্যাণী; পাবনার বেড়ার কৈটোলা, চাকলা, ঢালারচর, নতুন ভারেঙ্গা, পুরান-ভাংরেংগা; বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার তালোড়া; সারিয়াকান্দির চালুয়াবাড়ী, নারচী, বোহাইল, সারিয়াকান্দি, হাটশেরপুর; সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের চন্দাইকোনা, ধানগড়া, ধামাইনগর, ধুবিল, পাংগাসী, ব্রহ্মগাছা, সোনাখাড়া এবং সিলেটের জালালাবাদ ইউপিতে।

এতো ভোট পড়ার কারণ সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, “স্থানীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ে। আর ইউপি নির্বাচনে একটু বেশি হয়। বিশেষ করে পাড়া-মহল্লায় নিজেদের পরিচিত ও সদস্য প্রার্থীদের কারণে ভোট পড়ার হারও বেশি হয়ে থাকে।”

আগামী ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে সাড়ে ছয়শ’ ইউপিতে ভোট হবে। এরপর আরও চার ধাপে হবে এবারের ইউপি ভোট।

ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “প্রথম ধাপের সহিংসতার প্রভাব পরবর্তী ধাপেও পড়বে। তবে আমরা আরও সজাগ থাকব এবং এর চেয়ে বেটার কিছু করব।”