নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটিতে এক তৃতীয়াংশ পদে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা থাকলেও প্রধান দলগুলো অনেকটাই পিছিয়ে আছে।
Published : 11 Dec 2015, 07:03 PM
শুক্রবার এক গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থাপিত ধারণাপত্রে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
এতে বলা হয়েছে, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ পদে নারীরা থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ অন্য পদগুলোতে তাদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য নয়। শতকরা হিসাবে এসব পদে তাদের অবস্থান ১২ শতাংশের কম।
‘তৃণমূল নারীদের নেটওয়ার্ক তৈরির লক্ষ্য রাজনৈতিক অংশগ্রহণে জেন্ডার ও সমতা নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক এই গোলটেবিলে ধারণাপত্রটি উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন গবেষণা বিভাগের প্রভাষক ইমরান হোসেন ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে সভাপতিমণ্ডলীর ১২ জন সদস্যের মধ্যে নারী সদস্য রয়েছেন চারজন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির ১৩১ সদস্যর মধ্যে নারী সদস্য সাতজন এবং উপদেষ্টা পরিষদের ৩৪ জনের মধ্যে নারী সদস্য রয়েছেন দুইজন। শতকরা হিসাবে কমিটিতে নারী সদস্য ৭ দশমিক ৩৪।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের ৩৩ সদস্যর মধ্যে কোনো নারী নেই। জাতীয় স্থায়ী কমিটির ১৬ সদস্যের মধ্যে নারী দুইজন এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ৩৮০ সদস্যর মধ্যে নারী রয়েছেন ৪৬ জন। এই হিসাবে নারী সদস্য ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ।
জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর ৪১ সদস্যের মধ্যে চারজন এবং নির্বাহী কমিটির ৯৯ সদস্যর মধ্যে ছয়জন নারী। নারী সদস্যের হার ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
নির্বাচন কমিশনের রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালায় বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে দলগুলোকে তাদের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ পদে নারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত হওয়ার সময় দলগুলো তাদের গঠনতন্ত্রে এ সংক্রান্ত সংশোধনীও এনেছে। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দল ৪০টি।
দৈনিক ভোরের কাগজ ও স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন সংস্থা ইউএসটি ও তার আন্তজার্তিক সহযোগী সংগঠন স্পেনের এনজিও ‘পাস ওয়াই ডেজারোলো’ যৌথভাবে এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে।
ইউএসটির ‘রাজনৈতিক অংশগ্রহণে নারী পুরুষ সমতা নিশ্চিতকরণের জন্য তৃণমূল নারীদের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা’ প্রকল্পের অভিজ্ঞতার আলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইমরান বলেন, সমাজে অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সম্ভবনা দেশের তৃণমূল নারীদের রয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি নারীর ক্ষমতায়নে তার মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা, সরকারের কৌশল এবং সার্বিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “তৃণমূল নারীদেরকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে। নিজেদের অবস্থান এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে পুরুষরা স্যালুট দিতে বাধ্য হয়।
“নারীর ক্ষমতায়নে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।”
এক্ষেত্রে পুরুষদের সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, “পুরুষরা লম্বা পথ এগিয়ে গেছে। তাদের বুঝাতে হবে, আমরা একসাথে এগিয়ে যেতে চাই।”
দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ইউএসটির নির্বাহী পরিচালক শাহ মো. আনোয়ার কামাল, হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনারের জেন্ডার ম্যানেজার র্যামোনা রিদল্ফি বক্তব্য দেন।