“কথাবার্তা উনি যেভাবে বলেন, তাতে মনে হচ্ছে যে, উনি বোধহয় বিএনপির বিকল্প স্থায়ী কমিটির সদস্য।”
Published : 27 Feb 2024, 04:06 PM
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথাবার্তা শুনলে মনে হয় তিনি বিএনপির অনেক গোপন কথা ‘আগে থেকেই’ জেনে যান।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক নিয়ে ওবায়দুল কাদের যা বলেছেন তা জনগণের সঙ্গে ‘তামাশা করার নামান্তর’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীতে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন রিজভী।
তিনি বলেন, “কিসের নালিশ? উনি (ওবায়দুল কাদের) কী শুনেছেন… কী কথাবার্তা হয়েছে… উনি কী জানেন? আমরা তো কেউ জানি না। আর বিদেশিরা এলে, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক দেশের কর্মকর্তারা এলে সরকারি দল, বিরোধী দল সবার সাথে বসেন... এটা তো রেওয়াজ, এটা তো দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য। তারা (যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল) ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং সেই কারণেই আমাদের নেতৃবৃন্দ দেখা করতে গেছেন।
“সেখানে কী আলোচনা হয়েছে, কী কথা হয়েছে সেটা তো আমরা কেউ জানি না। আমাদের নেতৃবৃন্দ যারা গেছেন পার্টির সংগ্রামী মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, তারা তো কিছু বলেননি। তাহলে উনি (ওবায়দুল কাদের) জানলেন কেমন করে?
“তাহলে উনি কি কোনো গোপন ডিভাইস কোথাও লুকিয়ে রেখেছেন নাকি। আর কথাবার্তা উনি যেভাবে বলেন, তাতে মনে হচ্ছে যে, উনি বোধহয় বিএনপির বিকল্প স্থায়ী কমিটির সদস্য …. মনে হচ্ছে যে, বিএনপির অনেক গোপন কথা তিনি আগেই জেনে যাচ্ছেন। এগুলো আসলে জনগণের সাথে তামাশা করা, প্রতারণা করা।”
ঢাকা সফর করে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গত রোববার বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে আরও তিন নেতা। পরে ওই বৈঠক নিয়ে কটাক্ষ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, “মির্জা ফখরুল জেল থেকে বের হয়ে অসুস্থতার অজুহাতে জনগণের কাছে গেলেন না। কিন্তু মার্কিন প্রতিনিধি দল দেশে আসায় তিনি ঠিকই হাতে লাঠিভর দিয়ে নালিশ করতে চলে গেছেন। নালিশ করা বিএনপির একটি পুরনো অভ্যাস।”
বিদেশিদের কাছে নালিশ প্রসঙ্গে রিজভী পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, “২০০১ থেকে ২০০৬ সালে তারা (আওয়ামী লীগ) কী করেছেন? শুধু দেশে নয়, বিদেশে গিয়ে এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে বাংলাদেশের সরকারের বিরুদ্ধে খুব জোরালো কণ্ঠে সেখানে তারা কথা বলেছেন।”
‘খেসারত আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে’
নির্বাচনে না যাওয়ার খেসারত বিএনপিকে ‘অনেকদিন দিতে হবে’ বলে যে মন্তব্য কাদের করেছেন, এদিন তার জবাব দেন রিজভী।
তিনি বলেন, “দেখুন খেসারত তারা দিয়েছে, আমরা দিইনি। আমরা সত্য ও কমিটমেন্টকে সব সময় অগ্রাধিকার দিয়েছি। এরশাদের অধীনে যারা নির্বাচনে যাবে, তারা জাতীয় বেঈমান হবে… আর নিজেরা নিজের কথায় জাতীয় বেঈমান হয়ে নির্বাচনে গেছেন।
“বিএনপি সেটা করেনি… বিএনপি সুস্পষ্টভাবে তাদের অঙ্গীকারে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিল এবং তার রেজাল্ট আমরা পেয়েছি। জনগণ কিন্তু সব বিচার করে, বিবেচনা করে যে, এই রাজনৈতিক দলটি জনগণের সাথে যে ওয়াদা করে সেই ওয়াদা তারা ভঙ্গ করে না।... আমরা ন্যায়ের পক্ষে, আমরা কমিটমেন্টের পক্ষে এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে।”
‘পিলখানার ঘটনা ধামাচাপা দেয়া যাবে না’
রিজভী বলেন, “পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ১৫ বছর পর ডামি সরকারের মন্ত্রীরা এখন বলছেন, ঘটনার সঙ্গে নাকি বিএনপি জড়িত। ওই ঘটনার নেপথ্যের নায়ক কারা, কারা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে…. সবকিছুই আওয়ামী ঠুলি পরা হাছান মাহমুদ স্বীকার না করলেও দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে সত্য ঘটনা গতকালও প্রকাশিত হয়েছে। “
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, “গতকাল পিলখানার সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা নিয়ে বিজিবির (সাবেক বিডিআর) সাবেক ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. মইনুল ইসলাম একটি গণমাধ্যমে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তা দেখে কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে?।“
রিজভীর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “সাবেক ডিজির সাক্ষাৎকারটি গতকাল প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা বিদ্রোহীদের সাথে জড়িত ছিল ও বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার সময় বাইরে তারা জয় বাংলা স্লোগান দিয়েছে। এছাড়া দেশের বাইরের প্ররোচ ইত্যাদি নিয়ে তিনি যা বলেছেন সেটি ঘটনার দিন থেকেই জনগণ বিশ্বাস করে। আমরা বলতে চাই, পিলখানা ট্র্যাজিডির রহস্য ধামাচাপা দেওয়া যাবে না, একদিন এর প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হবে এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিচার হবেই।”
রিজভী বলেন, “পিলখানায় সেনা অভিযান না চালানো, খুনীদের আপ্যায়ন, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা ও অনেককে বিদেশে পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দেওয়া নানান প্রশ্নের জন্ম দেয়। সেই সব প্রশ্ন ক্ষোভের সংগে উচ্চারণের দায়ে আরো অনেকে চাকরি হারান। ওই ঘটনায় বিদ্রোহীদের পেছনে শক্তি যুগিয়েছে এই সরকারের প্রভুরা... বিদেশে যারা প্রভু আছে তারা।”
বাংলাদেশের সেনা বাহিনীকে ‘দুর্বল করতেই’ পিলখানার হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সাহিদা রফিক, তাহসিনা রুশদীর লুনা, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, আমিনুল ইসলামসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।