“একজন আজিজ শুধু নয়, একজন বেনজীর শুধু নয়, অসংখ্য আজিজ ও বেনজীর আপনারা তৈরি করেছেন, যারা লুট করে খাচ্ছে”, বলেন বিএনপি মহাসচিব।
Published : 29 May 2024, 08:45 PM
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে উঠা ‘দুর্নীতির অভিযোগের’ দায় নিয়ে সরকারের ‘পদত্যাগ করা উচিত’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, সরকার এমন অসংখ্য ‘আজিজ’ ও ‘বেনজীর’ তৈরি করেছে। তারা লুটপাট করে খাচ্ছে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী পালনে বুধবার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনায় ফখরুল এ কথা বলেন।
আলোচনায় লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য শোনেন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল সেনা সদস্যের অভ্যুত্থানে চেষ্টায় প্রাণ হারান সে সময়ের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। দিবসটি পালনে বিএনপি ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক সেনা প্রধান আজিজ আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের পরিবারের বিপুল সম্পত্তি জব্দের বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “কোন অবস্থায় বাংলাদেশকে নিয়ে এসেছে যে, সাবেক পুলিশ প্রধান, তার আজকে হাজার হাজার দুর্নীতির চিত্র পত্রপত্রিকায় বেরিয়ে আসছে। তাকে আপনি (সরকার) লালন করেছেন। অনেক আগে স্যাংশন দেওয়ার পরও তাকে আপনি আইজি বানিয়েছেন।
“একইভাবে আজকে সাবেক সেনাপ্রধান, তাকে স্যাংশন দেওয়া হয়েছে একটা মাত্র কারণে, সে বাংলাদেশে লুট করেছে, চুরি করেছে এবং নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
এই দায় কেবল আজিজ ও বেনজীরের কি না, সেই প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই দায় এই সরকারের, যারা আজকে ‘জোর করে’ ক্ষমতা দখল করে বসে আছেন।”
সরকারকে পদত্যাগ করার পরামর্শ দিয়ে ফখরুল বলেন, “আমি বার বার বলছি যে, আপনাদের রিজাইন করা উচিত এই কারণে। বেনজীর বা আজিজ কেন তৈরি হয়? একজন আজিজ শুধু নয়, একজন বেনজীর শুধু নয়, অসংখ্য আজিজ ও বেনজীর আপনারা তৈরি করেছেন, যারা লুট করে খাচ্ছে।
“একটাই কাজ, লুট করা। আমরা যখন ছোট ছিলাম, আমাদের মা কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতে গিয়ে বলতেন, ‘ছেলে ঘুমাল, পাড়া জুড়াল, বর্গী এল দেশে।’
“বর্গী কারা? বর্গী সেই সমস্ত লুটেরা যারা বর্মা থেকে আসত। এসে লুট করে সব নিয়ে চলে যেত। এটাকে তখন বাংলাদেশের মানুষ ভয় পেত। সেজন্য গান হয়েছিল ‘ছেলে ঘুমাল, পাড়া ঘুমাল, বর্গী এল দেশে।’ আজকে তারা (আওয়ামী লীগ) বর্গীতে পরিণত হয়েছে। তাদের একমাত্র কাজ বাংলাদেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করে সেখানে সম্পদ গড়ে তোলা।”
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে কলকাতায় হত্যা নিয়েও কথা বলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমি তাকে এমপিও বলতে চাই না। আমরা যে বাজারে মাংস কিনতে যাই, টুকরা টুকরা করে দেয় না। সেই টুকরা টুকরা করে নাকি কেটে ফেলে দিয়েছে। কী অবস্থা চিন্তা করেন।”
‘জেগে উঠুন’
বিএনপির আন্দোলনকে জোরদার করতে সবাইকে ‘জেগে ওঠার’ও আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “এই যে আত্মত্যাগ, মায়ের যেই অশ্রুধারা, এটা কি বিফলে যাবে? আপনারা কি সেটা বিফলে যেতে দেবেন?
“এখন জেগে উঠার সময় এসেছে। জেগে উঠবে সেই তরুণ-যুবক। … আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। সমস্ত ভয়-ভীতি সবকিছু তাচ্ছিল্য করে আমাদের দেশমাতৃকার ডাকে, আমাদের ‘মা’ বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ও তার ডাকে, আমাদেরকে নেতা তারেক রহমানের ডাকে আসুন আমরা সবাই বেরিয়ে পড়ি। আমরা একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলি। যে ‘ভয়াবহ দানব’ আমাদের সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে, তাদেরকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের রাষ্ট্র, গণতন্ত্রের রাষ্ট্র নির্মাণ করতে সক্ষম হই।”
‘সুষ্ঠু’ নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগ ১০ শতাংশ আসনও পাবে না বলেও দাবি করেন বিএনপি নেতা।
‘বিএনপিকে টিকে থাকতে হবে’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “ওরা জিয়াউর রহমানকে হত্যা করলে বিএনপি আর থাকবে না। কিন্তু বিএনপি আছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হাল ধরেছেন। এখন তারেক রহমান হাল ধরেছেন, বিএনপি টিকে থাকবে হাজার বছর। এই দলকে কেউ ধ্বংস করতে পারবে না।”
বিএনপি না থাকা মানে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিদেশি প্রভুদের কাছে বিকিয়ে দেওয়া মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সুতরাং বিএনপিকে টিকে থাকতে হবে, বিএনপির প্রতিটি কর্মীকে টিকে থাকতে হবে। এ দেশের মানুষকে টিকে থাকতে হবে।”
‘সরকার পরিবর্তন হবেই’
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ হতাশ না হতে নেতাকর্মীদের পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অনেক হতাশ। আওয়ামী লীগ বোধহয় টিকেই গেল।
“ভাইরে এই চোরদের দল, যেখানে সেনাপ্রধান, পুলিশ প্রধান চোর, দুর্নীতিবাজ, এদের সরকার যদি টিকে থাকে তাহলে সভ্যতার ইতিহাস, প্রগতির ইতিহাস মিথ্যে হয়ে যাবে। অতএব নিশ্চিন্তে থাকুন, বিএনপি বাংলাদেশের জনগণের একমাত্র ভরসা। জিয়াউর রহমানের আদর্শধারী পতাকা বহন করে আমরা ইনশাল্লাহ ক্ষমতায় যাব। বেগম খালেদা জিয়া আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন।”
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় আলোচনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, মামুন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ মাহবুবউল্লাহও আলোচনায় বক্তব্য রাখেন।