“আপনি কি মনে করেন জনগণ ভোট দেবে? নো, জনগণের ভোট দেওয়ার কোনো আগ্রহ নেই। কারণ জনগণ জানে, এই ভোটের কোনো অর্থ নাই,” বলেন বিএনপি নেতা নজরুল।
Published : 26 Dec 2023, 02:47 PM
নির্বাচনে সত্যিই জনসমর্থন থাকলে কেন্দ্রে ভোটার আনতে ঢাকার কাউন্সিলরদের ডেকে পুলিশের কেন বৈঠক করতে হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেছেন, “আমাদের প্রশ্ন, জনগণকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য ডামি প্রার্থী লাগবে কেন? তাহলে সেই নির্বাচনে জনগণকে আনার জন্য বিভিন্ন রকমের যারা সরকারি অর্থের সুবিধা পান, তাদেরকে হুমকি দেওয়া হয় কেন যে ভোটে না এলে তাদের কার্ড বাতিল করা হবে। কেন পুলিশকে দিয়ে পুলিশ কমিশনার কাউন্সিলরদের ডেকে বলতে হয় যে আপনারা ভোটাদেরকে নিয়ে ভোট কেন্দ্রে আসবেন, কেন করতে হয়?”
মঙ্গলবার সকালে মতিঝিল থেকে দিলকুশা পর্যন্ত সড়কে ভোট বর্জনের আহ্বানে লিফলেট বিতরণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন নজরুল।
৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ২৭টি দল নির্বাচনি প্রচারে ব্যস্ত থাকলেও বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ভোট বর্জনের আহ্বানে অসহযোগের ডাক দিয়েছে।
গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকেই দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ দিচ্ছে তারা, এসব কর্মসূচির মধ্যে যানবাহনে নাকশতাও ঘটছে।
এ পরিস্থিতির মধ্যে সোমবার ঢাকার দুই সিটির কাউন্সিলরদের ডেকে ‘আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা’ করেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "ভোট দেওয়া যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোট না দেওয়াও গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু ভোট ঠেকানো গণতান্ত্রিক অধিকার নয়৷ যারা ভোট ঠেকাতে আসে তাদের অপতৎপরতা প্রতিহত করার সাংবিধানিক দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিক ও জনপ্রতিনিধির।"
ওই বৈঠকের প্রসঙ্গ ধরে বিএনপি নেতা নজরুল বলেন, “আপনি কি মনে করেন জনগণ ভোট দেবে? নো, জনগণের ভোট দেওয়ার কোনো আগ্রহ নেই। কারণ জনগণ জানে, এই ভোটের কোনো অর্থ নাই।এটা কোনো ভোট না, এটা কোনো নির্বাচন না।”
ভোটারদের উদ্দেশে নজরুল ইসলাম খান বলেন, “এই নির্বাচনে আপনারা যাবেন না। যে সরকার জনগণের স্বার্থ, দেশের স্বার্থ, জনগণের জীবন-জীবিকা নিয়ে খেলা করতেছে, এই সরকারকে অসযোগিতা করুন। এই ডামি নির্বাচন… ইতিহাসে প্রথম শুনলাম যে একটা রাজনৈতিক দল নিজের প্রার্থীর বাইরে আরো ডামি প্রার্থী দেয়। কি জন্য? যাতে বেশি লোক আসে। তাহলে বোঝেন, জনগণ এই নির্বাচন সমর্থন করে না, এই নির্বাচনে আসতে চায় না।
“এটা কি নির্বাচন? এটা অবৈধ নির্বাচন। এই নির্বাচনে মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাবে না। দেশের অর্থনীতি আজকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, বিপর্যস্ত, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দুরাবস্থা। সেই সময়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে অবৈধ এই নির্বাচনে। আমরা বলি এই অবৈধ নির্বাচনে এই খরচ বন্ধ করুন। কারণ এটাতে যাকেই ভোট দেবেন আওয়ামী লীগের লোককেই ভোট দেবেন। হয় নৌকা প্রার্থী, নয় ডামি প্রার্থী, না হয় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। কাজেই এটা কোনো নির্বাচন না।”
নজরুল বলেন, “জনগণ যাতে ভোট দিতে পারে, জনগণ যাতে তার প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, আমরা সেই রকম একটা নির্বাচন চাই। আমরা সেই জন্য এই নির্বাচন বন্ধ চাই।”
বিএনপি নেতা-কর্মীরা এ সময় ‘অবৈধ নির্বাচন মানি না মানব না’, ‘নীল-নকশার নির্বাচন মানি না মানব না’, ‘খালেদা জিয়ার সংগ্রাম চলছে, চলবে’, ভোট চোর ভোট শেখ হাসিনা ভোট চোর’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল বলেন, “আন্দোলনরত জোট ও দলগুলো সবাই যার যার মত, সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করতেছে। আমরা খুশি যে তারা আন্তরিকভাবে কাজ করতেছে।
“এই ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন-নির্যাতন-জেল-জুলুম চালাচ্ছে। না তারা খেতে পারছে, না তারা চাকরি পাচ্ছে, না নিরাপত্তা পাচ্ছে।এর বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে আজকে সোচ্চার হতে হবে।”
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ২০/২২ জন নেতা-কর্মীকে নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মতিঝিলের সোনালী ব্যাংকের কাছে ফুটপাতের পথচারী-হকার-রিকশা চালকদের হাতে ভোট বর্জনের লিফলেট তুলে দেন নজরুল ইসলাম খান।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, তাইফুল ইসলাম টিপু, শ্রমিক দলের মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, রফিকুল ইসলাম, জাকির হোসেন, মফিদুল ইসলাম মোহন, বদরুল আলম সবুজ, জিল্লুর রহমান খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মতিঝিল ছাড়াও রাজধানীর রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা সাধারণ মানুষের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেন।
পুরনো খবর:
‘ভোট বন্ধের চেষ্টা’ ঠেকাতে কাউন্সিলরদের সঙ্গে ডিএমপি কমিশনারের বৈঠক