“বাংলাদেশের মানুষের প্রতিপক্ষ হয়ে কেউ জয়ী হতে পেরেছে? পারে নাই,” সবাইকে মনে করিয়ে দেন তিনি।
Published : 25 Aug 2023, 07:41 PM
‘জনগণের প্রতিপক্ষ’ হয়ে আর ক্ষমতায় থাকা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শুক্রবার বিকালে ঢাকার শ্যামলী ক্লাব মাঠের সামনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা মিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ হুঁশিয়ারি দেন। ব্রিকসের সদস্য হতে না পারায় সরকারের তীব্র সমালোচনাও করেন তিনি।
সরকারের পদত্যাগ দাবিতে গত ১২ জুলাই ঘোষণা করা এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে এটি ছিল বিএনপি ও সমমনা জোটের পঞ্চম কর্মসূচি। শনিবার একই দাবিতে অন্যান্য মহানগরেও একই কর্মসূচি পালন করবে তারা।
ঢাকায় বিএনপির মহানগর দক্ষিণ ইউনিটের উদ্যোগে নয়া পল্টন থেকে রাজধানী মার্কেট এবং মহানগর উত্তরের উদ্যোগে শ্যামলী স্কয়ার থেকে লিংক রোড হয়ে মোহাম্মদপুরে বছিলা চৌরাস্তা পর্যন্ত দুটি গণমিছিল হয়। এতে কালো পতাকা হাতে হাজারও নেতাকর্মী নিয়ে অংশ নেন।
নয়া পল্টনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু অভিযোগ করে বলেন, “আজকে বাংলাদেশের মানুষের প্রতিপক্ষ কে? হাসিনা। বাংলাদেশের মানুষের প্রতিপক্ষ হয়ে কেউ জয়ী হতে পেরেছে? পারে নাই। তাই আমি বলব, বাংলাদেশের মানুষের প্রতিপক্ষ কেউ হবেন না। পুলিশ ভাইয়েরা হবেন না, র্যাব ভাইয়েরা হবেন না, আনসার হবেন না, সরকারি কর্মকর্তারা হবেন না, বিচারকরা হবেন না।”
প্রতিবার বাংলাদেশের মানুষ যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার প্রতিপক্ষ পরাজিত হয়েছে বলেও সবাইকে মনে করিয়ে দেন তিনি।
‘ব্রিকসের সদস্য হতে পারেননি’
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘‘দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছেন বাংলাদেশের অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। দলবল নিয়ে, পরিবার নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের করের টাকা খরচ করে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছেন কী জন্য? ব্রিকসের মেম্বার হবেন- কি হয়েছে (সদস্য হতে পেরেছে)?”
এসময় নেতাকর্মীরা সমস্বরে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে শ্লোগান দিতে থাকেন।
তিনি বলেন, ‘‘যে কাজে গিয়েছেন ওই কাজ তো হয় নাই। সতুরাং প্রত্যেক জায়গা থেকে প্রত্যাখাত হবেন। সবাই প্রত্যাখান করবে অবৈধকে। এই মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ঘুরে ঘুরে আজকে গ্রহণযোগ্যতা পাবেন না।
‘‘ওইখানে (দক্ষিণ আফ্রিকা) প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে বক্তব্য রেখেছেন। ওই বক্তব্যে নৌকায় ভোট দিতে বলেছেন। চিন্তা করেন। আরে কোথায় যাইয়া কী কয়? ভোট হবে বাংলাদেশে, উনি দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে ভোট চাইছেন। অবস্থা কী বোঝেন, আর কী করছেন? সেখানে বিএনপিকে গালিগালাজ করছেন। স্বভাবজাতভাবে যা করেন, এটা তো প্রত্যেক দিন আপনি বাংলাদেশে করতেছেন।
“জনগণের করের টাকা খরচ করে দলবল নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে বিএনপিকে গালিগালাজ করার প্রয়োজন নাই।”
সরকার ‘জঙ্গি নাটক’ করে জনগণের দাবিকে পাশ কাটানোর কৌশল নিয়েছে অভিযোগ করে আমীর খসরু বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের মতো এত বড় সন্ত্রাসী দল পৃথিবীর কোথাও পাবেন না। যারা সরকারি রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে, পুলিশের একটি অংশকে ব্যবহার করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশকে ব্যবহার করে, বিচারককে ব্যবহার করে দণ্ডিত করছে- এই রকম কোনো দেশে দেখবেন না। এদের মতো সন্ত্রাসীদের আর ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া যাবে না।”
নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর দক্ষিণের সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, ‘‘জনগণের টাকায় বেতন নিয়ে কুশিক্ষিতরা বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। এই কুশিক্ষিতরা বিচারের প্রহসন করছেন, তারা জেলখানায় বিরোধী নেতাকর্মীদের পিটিয়ে হত্যা করছেন। এই কুশিক্ষিত লোকগুলো দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা দেশকে ভালোবাসে না, টাকাকে, লুটকে ভালোবাসে।
‘‘এই সরকারকে বিদায় করতে না পারলে দেশের মানুষ মারা যাবে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে।”
এদিন বিএনপি ছাড়া ঢাকার শাহবাগে গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজয়নগরে ১২ দলীয় জোট, পুরানা পল্টনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, আরামবাগে গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, পান্থপথে এলডিপি, জাতীয় প্রেস ক্লাবে লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) ও সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ, ফকিরাপুল কালভার্ট রোডে গণঅধিকার পরিষদ (নূর), মালিবাগে এনডিএম, সেগুনবাগিচায় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, বিজয় নগর শ্রমভবরনের সামনে এবি পার্টি, বিজয়নগর পানি ট্যাংকের জনতার অধিকার পার্টি কালো পতাকা মিছিল বের করে।
মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বক্তব্য রাখেন।
উত্তরের গণমিছিলে বিএনপির আহমেদ আজম খান, জয়নুল আবদিন ফারুক, জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল, কামরুল ইসলাম, শাহজাদা মিয়া, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, আতাউর রহমান ঢালী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শ্যামা ওবায়েদ, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নাজিমউদ্দিন আলম, আজিজুল বারী হেলাল, রাকিবুল ইসলাম বকুল, শামীমুর রহমান শামীম, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, যুবদলের মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, নায়েবা ইউসুফ, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল অংশ নেন।
অপরদিকে দক্ষিণ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস মৃধা ও লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজিব আহসান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান বক্তব্য রাখেন।
মিছিলে অংশ নেন মোহাম্মদ শাহজাহান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আসাদুজ্জামান রিপন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, মীর সরাফত আলী সপু, আবদুল খালেক, মীর নেওয়াজ আলী, রফিকুল ইসলাম, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন।