‘‘ওবায়দুল কাদের সাহেব মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে বলেছেন, শিষ্টাচার মেনে চলতে। আপনি সমস্ত ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচারকে অতিক্রম করে’ এ কথাটা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে বলতে পারেন?”
Published : 30 Nov 2023, 07:30 PM
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলতে বলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।
কোনো বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে এমন কথা বলা যায় কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিরোধী দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বর্তমান সরকারের পতনের দাবিতে আগামী রোববার সকাল ছয়টা থেকে আবার ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের ডাক দিতে বৃহস্পতিবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘‘ওবায়দুল কাদের সাহেব মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে বলেছেন, শিষ্টাচার মেনে চলতে। আপনি সমস্ত ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচারকে অতিক্রম করে’ এ কথাটা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে বলতে পারেন?”
বিএনপি নেতা বলেন, “আপনারা যে ‘শিষ্টাচার’ জনগণের সঙ্গে করছেন, দেশের বিরোধী রাজনীতিকদের সঙ্গে করছেন, এটা কি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাইরে ঘটছে? তারা তো শুধু অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা আপনাদের কাছে বলেছেন। এই কথা বলাটাকে কেন শিষ্টাচারবর্হিভূত মনে করছেন ওবায়দুল কাদের সাহেব?”
সরকারকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, ‘‘আপনাদের ‘অনাচার-অত্যাচার, দুঃশাসন, নিপীড়ন’ এর যে ভয়াবহ মাত্রা, এই মাত্রা কি বিদেশি লোকরা জানতে পারছেন না? ঢাকায় বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা কি জানেন না? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি জানে না?
“সবাই দেখছে। তারা পৃথিবীর নানা মানবাধিকার সংগঠন তথ্য-উপাত্ত নিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে। তারপরে তারা একটা সিদ্ধান্ত দেয়, তাদের মতামতটা তুলে ধরে। আর এই মতামতটা যদি সরকারের স্বার্থে বিরুদ্ধে যায় তখন তারা (সরকার) একেবারেই উদ্ভ্রান্ত হয়ে যায়, রাগান্বিত হয়ে যায়, ক্রোধান্বিত হয়ে যায়।
“বিদেশিদের শিষ্টাচার মেনে চলতে বলেছেন, আপনারা কি শিষ্টাচার মেনে চলছেন? একটি বিদেশি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে আপনার দলের লোকেরা গায়ে হাত দেয়ার হুমকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত, এই সাহসটা পায় কী করে? এটা কোন শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে। আপনাদের নিশ্চয় সেখানে আশকারা আছে। কই তাদের বিরুদ্ধে তো কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি।”
বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন নিয়েও কথা বলেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভা্বে বিরোধী দল ও সমালোচকদের ওপর অব্যাহত আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি অসম্ভব হয়ে ওঠেছে। আরেকটি একতরফা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।
“আরো অনেক কথা বলেছে, আমি সংক্ষেপে এই কথাটা তুলে ধরলাম। তাহলে আপনারা যে প্রহসনের নির্বাচন করছে, জাল-জালিয়াতির নির্বাচন করছে এটা পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত। সারা পৃথিবীর অধিকার সংগঠন, অন্যান্য সংগঠন বিচার বিশ্লেষণ করে এই কথাগুলো বলছে।
“এ কথাগুলো বললেই শেখ হাসিনার কাছে, ওবায়দুল কাদেরদের কাছে ‘শিষ্টাচারবর্হিভূত’ হয়ে যায়। একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্রদূতকে ছবক দিচ্ছে শিষ্টাচার মেনে চলতে। যারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরোধী দলের বিরুদ্ধে খিস্তি-খৈউর করে।”
বিএনপির হরতাল ও অবরোধে ‘বিনা কারণে’ বহু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের অভিযোগও আনেন রিজভী। তিনি বলেন, “কত নিষ্ঠুর, নির্দয় হতে পারে! বাড়ি বাড়ি গেছে, ভাঙচুর করেছে। না পেলে বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে, না হয় ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে, না হয় ছোট ভাইকে ধরে নিয়ে গেছে, না হয় শ্বশুরকে ধরে নিয়ে গেছে, না হলে স্ত্রীকে ধরে নিয়ে গেছে।
“মিনিমাম যাদের সুরুচি, সভ্যতা ও সংস্কৃতি আছে তারা কি এটা করতে পারে? ছোট ছোট বাচ্চাদের আহাজারি… বিএনপি নেতার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে গেছে, পরে তাকে আবার তিনদিনের রিমান্ড দেয়া হয়েছে।”
গত এক মাসে বিএনপির ৯০ জন নেতার বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়ে্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, “এটাকেই বলে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র, এটাকেই বলে নাৎসীবাদী রাষ্ট্র, একটাকেই বলে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র, এটাকেই বলে টোটালিটারিয়ান রাষ্ট্র।”
গত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে ৩৮০ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার এবং ১৭ টি মামলায় ১ হাজার ৯১০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
‘একতরফা নির্বাচন’ করে সরকার পার পাবে না: রিজভী